বিজ্ঞাপন

অফ থেকে অন: ল্যান্ডনকের বদলে দেওয়ার গল্প

August 7, 2020 | 5:41 pm

ফারহানা হোসেন শাম্মু

লকডাউনের দ্বিতীয় মাস থেকে হঠাৎ দেখি অচেনা-অজানা সব দোকানের পণ্যের বুস্টিংয়ে আমার ফেইসবুক নিউজফিড সয়লাব। দুই এক মাস ধরে পত্রিকাজুড়ে শুধু দেখছিলাম ছোট, মাঝারি এমনকি বড় ব্যবসায়ীদেরও চূড়ান্ত হতাশার গল্প। হঠাৎ এত ছোট ছোট দোকানগুলো কেমন করে অনলাইনে নিজেদের রপ্ত করে নিলো? ঢাকা তো আছেই এমনকি ঢাকার বাইরের শত শত দোকানের বিজ্ঞাপন দিয়ে আমরা নিউজফিড দেখি ভরা।

বিজ্ঞাপন

গ্রামীনফোনের অনেক আগের একটা পণ্য ছিল সেলবাজার। বিজ্ঞাপনের একটা ট্যাগলাইন ছিল, ‘বাজার তো পকেটেই’। আসলেই। শুধু আগোরা, মিনাবাজার, স্বপ্নের মতো বড় বড় দোকান না, পাড়ার ছোট্ট মুদির দোকানটাও দেখি হঠাৎ পকেটে/ভ্যানিটি ব্যাগে চলে আসলো। রাতারাতি কিভাবে তারা ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে কিংবা ফেইসবুকে পণ্যের লিস্ট দিয়ে অনলাইন ব্যবসায় সিদ্ধহস্ত হল!

জানলাম, তরুণ প্রযুক্তি মেধা আছে এই পরিবর্তনের সাথে। ‘ল্যান্ডনক’ তাদেরই একজন। ‘ল্যান্ডনক’ এর মূল যেই ব্যবসা করোনাকালীন ভাষায় তাকে বলা যেতে পারে ‘কন্ট্যাক্টলেস সুপারভিশন’ অথবা ‘স্পর্শবিহীন তদারকি’। মূলত তারা হোম ডেলিভারির কুরিয়ার সার্ভিসকে সাইন সিগনেচার ছাড়া- সুপারভাইজারের পদে পদে তদারকি ছাড়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে মনিটরিংয়ের জন্য সিস্টেম তৈরি করে দিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে।

ল্যান্ডনকের তরুণ উদ্যোক্তারা এবার চিন্তা করলো কিভাবে তারা লকডাউনে দেশের স্তব্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সচল করতে পারে। বিশেষত খাদ্যপণ্যের দোকানগুলোকে যেখানে তাদের আগে থেকেই কাস্টমার বেইস রয়েছে। তারা সারা দেশের বড় বড় দোকান থেকে শুরু করে পাড়ার অফলাইন দোকানগুলোকে অনলাইন করার চিন্তা শুরু করলো। সেইসঙ্গে এলাকাভিত্তিক বিপণন ব্যবস্থা। যাতে খিলগাঁওয়ের দোকানটি খিলগাঁওতেই পণ্য সরবরাহ করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

অতএব বহুল পরিচিত সেই ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ শ্লোগানের মতো তারা তাদের এই বিজনেস আইডিয়া দ্রুত কাজে লাগিয়ে ফেলল। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অজস্র দোকানকে তারা রাতারাতি এনালগ থেকে ডিজিটাল করে ফেলল। শুধু ঢাকা না, নওগাঁ, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত হল তাদের সেবা। লিস্ট ও প্রাইস ট্যাগিং, পণ্যের ছবি ওয়েবসাইট বা ফেইসবুকে আপলোড করে রাতারাতি মাথায় হাত দেওয়া ব্যবসায়ীদের প্রাণে পানি ফিরিয়ে দিল। সেই পানি যার অপর নাম জীবন।

ল্যান্ডনকের তিন তরুণ উদ্যোক্তা ইরাম, ইফতেখাইরুল, নোমানের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা

আপাতদৃষ্টিতে এগুলো কোন ব্যাপার না মনে হলেও ছোট কিংবা মাঝারি, এমনকি অনেক বড় দোকানের জন্যও এটা বিশাল ব্যাপার, যারা এই প্রযুক্তির সাথে সম্পূর্ণ অপরিচিত। স্মার্ট কিছু প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিখাতে অনেক ব্যয় করলেও সীমিত লাভের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই লোকাল সাপোর্টগুলো সাশ্রয় আর ভরসার অন্য আরেক নাম।

                                           আরও পড়ুন, ঠিকানা ‘রূপান্তর’: দেশি ম্যাপে বেশি লাভ

বিজ্ঞাপন

ল্যান্ডনকের সবচেয়ে বড় সন্তুষ্টিটা এল যখন তারা এই কোভিডকালীন ব্যবসায়িক আইডিয়ার জন্য সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি ডিভিশন) আয়োজিত এক্ট কোভিড-১৯ কল ফর নেশন প্রতিযোগিতায় বিজনেস অপারেশন ও প্রোডাকশন থিমে চ্যাম্পিয়ন ঘোষিত হলো। গ্রামীণফোন এক্সিলেটরের ষষ্ঠ ব্যাচ থেকে সদ্য গ্রাজুয়েট হয়ে করোনাকালে এই সাফল্য তাদের স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে তুললো।

স্ট্রেটকাট চাকরির চিন্তা বাদ দিয়ে যেই ঝুঁকিপূর্ণ স্টার্টআপ উদ্যোগে তারা নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে, তাদের সেই স্বপ্ন সফল হোক। মেধা পাচারের এই ক্রম বর্ধমান মিছিলে কিছু মেধা দেশেই থাক আর দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখুক।

লেখক: গ্রামীণফোন কর্মকর্তা

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/আরএফ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন