বিজ্ঞাপন

সাহারা খাতুনের আসনে নাছিম, বাকি ৩ আসনে পরিবারের কেউ?

August 11, 2020 | 12:45 am

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শূন্য চার সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র বলছে, চারটি আসনের মধ্যে দুইটি আসনে আগামী সেপ্টেম্বর ও দুইটি আসনে নভেম্বরে ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে’ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আসন চারটিতে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন, সে বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগেও শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, চার আসনের মধ্যে সাহারা খাতুনের ঢাকা-১৮ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে হাইকমান্ডের গুডবুকে এগিয়ে রয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বাকি তিন আসনে পরিবারের মধ্যে থেকে গ্রহণযোগ্য কোনো সদস্যকেই হয়তো বেছে নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে নির্বাচন আয়োজনের সময় নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে এর মধ্যে বগুড়া ও যশোরের উপনির্বাচন আয়োজন করেছে ইসি। এর মধ্যে সোমবার (১০ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সরাসরি বলেই দিয়েছেন, আগামী ২৩ বা ২৪ আগস্ট ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ভোটগ্রহণের তারিখ হবে সেপ্টেম্বরে। ইসি সূত্র বলছে, ঢাকা-৫ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেই ‘ডেটলাইন’ মাথায় রেখেই প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, সংসদীয় চারটি আসনেই দলের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতারা সংসদ সদস্য ছিলেন, দলের দুর্দিনে যাদের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ‘প্রোফাইল’ মাথায় রেখে সার্বিক বিবেচনায় নির্ধারণ করে উত্তরসূরী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। ইসি তফসিল ঘোষণা করলে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড দলীয় সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রার্থী মনোনয়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

আরও পড়ুন- ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪-এ ভোটের তফসিল আগস্টের শেষ সপ্তাহে

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেমে নেই। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেই বন্যার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সবকিছু সামাল দিয়েই আমরা দলীয় সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আগস্ট মাস শেষে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার গতি আরও বাড়বে। ওই সময় সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শূন্য সংসদীয় আসনে মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ফলে কোন আসনে কে মনোনয়ন পাবেন আর কে পাবেন না— এটা এখনই বলা যাবে না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্যবাহী দল। দলের কমিটি বা সংসদ সদস্য হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা রয়েছেন পাঁচ গুণ। তাই সাময়িকভাবে শূন্য হয়ে পড়া সংসদীয় আসনগুলোও শূন্য থাকবে না। দলীয় ফোরামে গ্রহণযোগ্য, ত্যাগ-তিতীক্ষায় পরীক্ষিত, পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য— সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।

দলের এই সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, করোনাভাইরাস মহামারি বিবেচনায় রেখে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক এখনো হয়নি। বৈঠক হলে সাংগঠনিক অনেক বিষয়েই সিদ্ধান্ত হবে।

বিজ্ঞাপন

মোহাম্মদ নাসিমের আসন সিরাজগঞ্জ-১

আসনটিতে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। দলের গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনের এমপি। মাঝখানে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের দেওয়া মামলার কারণে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি নাসিম। ওই নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজয়ী হন তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়। দলের হাইকমান্ড বাবার অবর্তমানে ছেলে তানভীর শাকিলকেই এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অনেকটাই নিশ্চিত করেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়ভাবেও কেউ জাতীয় চার নেতার পরিবারের আসন হিসেবে স্বীকৃত এই আসনে মনোনয়ন পেতে খুব একটা আগ্রহী বলে জানা যায়নি।

শামসুর শরিফ ডিলুর আসন পাবনা-৪

ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু। তার মৃত্যুতে শূন্য হয়ে পড়া আসনটিতে চোখ রয়েছে অনেকেরই। করোনা মহামারির মধ্যেও তাদের অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সক্রিয় রয়েছেন মাঠে। কেউ কেউ আবার দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাশীদের মধ্যে স্থানীয়দের চোখে এগিয়ে রয়েছেন প্রয়াত শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা গালিবুর রহমান শরিফ।

গালিবের সঙ্গে নৌকার প্রার্থী হতে স্থানীয় মাঠে সক্রিয় রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রবিউল আলম বুদু সরদার, ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরুসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়া সাবেক এমপি পাঞ্চাব আলী বিশ্বাস, মেজর জেনারেল (অব.) নজরুল ইসলাম রবি, আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর ইসলাম, ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাসসহ অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে সক্রিয় আছেন।

হাবিবুর রহমান মোল্লার ঢাকা-৫

ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন ঘিরে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পোস্টার-ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রচারের জন্য বেছে নিয়েছেন বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুর পর এই আসনে তার পরিবারের কাউকে দল বেছে নিতে পারে বলে ধারণা অনেকের। এক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সরব প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার পক্ষে এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টার-ফেস্টুনও লাগানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিবারের সদস্যদের কেউ মনোনয়ন না পেলে মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ও বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামালের স্ত্রী ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামালের ছোট ভাইয়ের মেয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য নেহরীন মোস্তফা দিশি’র যে কেউ মনোনয়ন পেতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

তবে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর অভাব নেই। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, হাজী আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সভাপতি ও যাত্রাবাড়ীর আর কে চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রাকিব ভূঁইয়া, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খান মাসুদসহ আরও কয়েকজন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন মনোনয়নের প্রত্যাশায়।

সাহারা খাতুনের ঢাকা-১৮

রাজধানীর প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ঢাকা-১৮ আসনটিতে গত ১২ বছর ধরে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। এরই মধ্যে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকেই। তৈরি পোশাক শিল্প খাতে যুক্ত বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা এই আসনে মনোনয়ন পেতে বেশ তৎপর বলে জানা গেছে। তবে দলীয় সূত্র বলছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সংসদীয় আসনে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী কোনো নেতাকেই দল বেছে নিতে চায়।

এ আসনে নৌকার হাল ধরতে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান, আলহাজ হাবিব আহসান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার সক্রিয় আছেন। এছাড়া প্রয়াত সাহারা খাতুনের ভাগ্নে আনিসুর রহমানও মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তবে দলের একাধিক সূত্র বলছে, বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে এই আসনে দলের হাইকমান্ডের ‘গুড বুকে’ রয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। দলের ‘প্রভাবশালী’ একটি অংশ তার পক্ষে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ‘লবিং’ করবেন বলেও জানা গেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ এবং সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাও নাছিমের পক্ষে সক্রিয় হয়েছেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাছিম শেখ হাসিনার একান্ত বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করেছেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব সফলভাবে পালনের স্বীকৃতি হিসেবে বর্তমান কমিটিতে পদোন্নতি পেয়েছেন। সব মিলিয়ে দলের ওই ‘প্রভাবশালী’ মহলের আশা, সাহারা খাতুনের আসনে নাছিমের নাম নিয়ে গেলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের ‘না’ করবেন না।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ

সংবিধান বলছে, কোনো আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন আয়োজন করতে হবে। দুর্যোগ বা দুর্বিপাকের কারণে এই সময়ের মধ্যে উপনির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আয়োজন করতে হবে উপনির্বাচন।

ঢাকা-৫ আসন শূন্য হয়েছে গত ৬ মে। বিধান অনুযায়ী এই আসনের ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩ আগস্ট। করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন আয়োজন করতে না পারায় এই আসনের পরবর্তী ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হবে ১ নভেম্বর। পাবনা-৪ আসন শূন্য হয়েছে গত ২ এপ্রিল। এই আসনের জন্য প্রথম ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০ জুন। পরবর্তী ৯০ দিন শেষ হবে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর।

এদিকে, গত ১৩ জুন শূন্য হয় সিরাজগঞ্জ-১ আসন। ফলে এই আসনে উপনির্বাচনের জন্য প্রথম ৯০ দিনের মেয়াদ রয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আর পরবর্তী ৯০ দিন শেষ হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর। চার আসনের মধ্যে সবশেষ ৯ জুলাই শূন্য হয় ঢাকা-১৮ আসনটি। এরপর ৯০ দিন পূর্ণ হবে ৬ অক্টোবর। আর পরবর্তী ৯০ দিন শেষ হবে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি।

ইসি সচিবের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৩ বা ৩৪ আগস্ট ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ। অন্যদিকে নভেম্বরের একদম শুরুতেই ঢাকা-৫ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের ঘোষণা হতে পারে। এক্ষেত্রে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় চার নেতার সন্তান হওয়ায় ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসের বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন