বিজ্ঞাপন

সৌদি-পাকিস্তান সম্পর্কে ফাটল, কী চায় দুই দেশ?

August 11, 2020 | 2:07 am

আতিকুল ইসলাম ইমন

সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যকার মধুর সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের দাবিতে সৌদির সায় না দেওয়া এবং এর বিপরীতে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে নেওয়া ঋণের বড় একটি অংশ ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে দেশটিকে। আর এ অর্থ সংগ্রহ করতে চীন থেকে ঋণ নিতে হয়েছে ইসলামাবাদকে।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদকে ৬.২ বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল প্যাকেজ ঋণ দেয় সৌদি আরব। ওই ঋণের ৩.২ বিলিয়ন ডলার পাকিস্তানকে দেওয়া হয় জ্বালানি তেল হিসেবে। পাকিস্তানের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে বাঁচাতে সৌদি আরবের কাছে নানা তদবির করেই এ ঋণ আদায় করেছিলো ইমরান খান সরকার। সৌদির দেওয়া বিশাল অংকের ওই ঋণ পেয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতির পালেও কিছুটা নতুন হাওয়া লাগে। তবে সম্প্রতি সৌদি আরব পাকিস্তানে জ্বালানি তেলে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মে মাসে পাকিস্তানকে দেওয়া এক চিঠিতে সৌদি আরব এ ব্যবস্থা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানায় এবং একই চিঠিতে পাকিস্তানকে প্রদত্ত ঋণ পুরোটা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানায়। ফলে সৌদি আরবকে দ্রুতই ঋণের পুরো অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে। এর আগে গত মে মাসেই সৌদি আরবের ঋণের ১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে পাকিস্তান। আর এ অর্থ ইসলামাবাদ জোগাড় করেছে চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে। এ সপ্তায় পাকিস্তানের শীর্ষ কিছু গণমাধ্যম এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদির ঐতিহাসিক গভীর সম্পর্কের এমন অবনতি কেন? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এ অঞ্চলে চীন ও পাকিস্তান মিলে যে ভারত বিরোধী ব্লক তৈরির চেষ্টা করছে এতে যোগ দিতে নারাজ সৌদি আরব। তাই কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের নানা আবদার ও দাবিতে সাড়া দিচ্ছে না সৌদি আরব। আর এতেই দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা- ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে কাশ্মীর ইস্যুতে সৌদি আরবকে এক সভা আহ্বান করার অনুরোধ জানায় পাকিস্তান। তবে সৌদি আরব এমন সভা ডাকতে সম্মত হয়নি। ওআইসি’তে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আলোচনার একের পর এক দাবি ফিরিয়ে দেয় সৌদি আরব। সৌদি আরবের এমন অবস্থানের সমালোচনা করে নানা সময় মন্তব্য করেন পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি পাকিস্তানের উর্দু টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমোদ কুরেশি বলেন, আজ আমি বলছি ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলের বৈঠক আহ্বান করুক। তারা যদি তা না করে তবে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব পাকিস্তানের সমর্থক মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে তিনি যেন কাশ্মীর ইস্যুতে এক পৃথক সভা ডাকেন।

এর পর দিনই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে। এতে আগের রাতে মন্ত্রীর মন্তব্যকে পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করা হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গভীর নজর রাখেন এমন রাজনৈতিক বিশ্লেষক রুপের্ট স্টোন এ ব্যাপারে টিআরটি নিউজকে বলেন, ওআইসি ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলো নিয়ে সভা ডাকতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

যেমন গত বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ায় মুসলিম সামিটে পাকিস্তান অংশ নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেসময় সৌদি আরবের নিষেধে ওই সভায় অংশ নেয়নি দেশটি। শুধু অংশ না নিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি ইসলামাবাদ- সেসময় মুসলিম সামিটের তীব্র সমালোচনাও করে তারা। এবার পাকিস্তান চাইলে মুসলিম সামিটের মতো প্লাটফর্মে কাশ্মীর ইস্যুতে সভা আহ্বান করতে পারে।

উল্লেখ্য ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, কাতারের মত প্রভাবশালী মুসলিম প্রধান দেশগুলোকে নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে কোয়ালালামপুরে এক সভা ডাকে মালয়েশিয়া। ওই সভায় বিশ্বে মুসলিমদের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে ওআইসির নেতৃত্বে থাকা সৌদি আরব এ সামিটের কড়া সমালোচনা করে। এবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যে সেরকম এক সভায় যোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হল, যা স্পষ্টতই সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অবস্থান বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সৌদি কী চায়

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফর করেন সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। সে সময় পাকিস্তানে সৌদি আরব ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের একাধিক সমঝোতা চুক্তি করে। প্রস্তাবিত এ বিশাল বিনিয়োগের ১০ বিলিয়ন সৌদি আরব ব্যয় করবে গোদর বন্দরের তেল শোধনাগারের উন্নয়নে। ওমান উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত এ বন্দর ভৌগলিক কৌশলগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান-চীনের ৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক করিডোরের মূল বিন্দু ধরা হয় এই বন্দরটিকে। এ বন্দরটির উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে চীন। ঠিক এ জায়গায় বিশাল একটি তেল শোধনাগার নির্মাণ সৌদি আরবকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

প্রাগের জ্যান মাসারিক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক জেরেমি গারলিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষিত মিত্র সৌদি আরব। দেশটিকে হয়ত চীনের কোনো প্রকল্পে যুক্ত না হওয়ার চাপ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সৌদি আরবের জন্য গোদরে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ার চেয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন না দেওয়াই কম ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে পাকিস্তানে সৌদি আরবের যতটা না বিনিয়োগ তার চেয়েও ঢের বেশি বিনিয়োগ ভারতে।  সিঙ্গাপুরের এস রাজারাথম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো যেমন এম ডোরসে এ ব্যাপারে বলেন, সৌদি আরব ও ভারতের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এর ফলেই সৌদি আরব দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের ব্যাপারে নতুন করে ভাবছে।

তিনি বলেন, ভারতে সৌদি আরবের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া ভারত অন্যতম শীর্ষ তেল আমদানিকারক দেশ। ফলে কাশ্মীর ইস্যুতে রিয়াদ পাকিস্তানকে সমর্থন দিতে খুব বেশি আগ্রহী নয়।

পাকিস্তানে যা হতে পারে

সৌদি আরব থেকে নেওয়া বড় অংকের ঋণ শোধ করতে চীনের দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান। যদিও এর আগেই দেশটি চীনের ঋণের ভারে ন্যুব্জ। চীন ছাড়া সৌদি আরবই বড় ঋণদাতা দেশ যার টাকা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে অনেকটাই চাঙ্গা করে তুলে। তবে সৌদি আরব এবার পাকিস্তানে জ্বালানি তেলে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় দেশটি এখন আরও বেশি চীনা ঋণ নির্ভর দেশ হয়ে উঠবে। যা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে আরও সমৃদ্ধ করবে নাকি ভঙ্গুর করবে তা নিয়ে নানা মত রয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মহলে।

– বিশ্লেষকদের মন্তব্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে সংগৃহীত

সারাবাংলা/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন