বিজ্ঞাপন

কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু

August 11, 2020 | 5:14 pm

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: তিন মাস ১০ দিন রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার পর মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সকাল থেকে বিএফডিসির তিনটি (রাঙ্গামাটির কাপ্তাই ও মহালছড়ি) বিপণনকেন্দ্রে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা। এদিকে শতদিন পর মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় খাতসংশ্লিষ্টদের মাঝেও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। কাজে ফিরেছেন শ্রমিক-কমচারী, ব্যবসায়ীরা। চালু হয়েছে বিএফডিসির তিনটি বরফকলও।

বিজ্ঞাপন

জেলে ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অন্যবছরের তুলনায় এবছর প্রথমদিনে অনেক বেশি মাছ আহরিত হয়েছে। আহরিত মাছের মধ্যে ছোট মাছের পরিমাণ বেশি। এবছর প্রথম দিকেই অতিরিক্ত মাছ আহরণের অন্যতম কারণ হলো কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতা। হ্রদে পানি কম থাকায় মাছ ধরা পড়ছে বেশি।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরাসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকারে
নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বছরের আগস্ট থেকে শুরু হয় নতুন মৌসুম। আগস্ট থেকে পরবর্তী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই নয়মাসকে মৌসুম ধরা হয়। তবে এ বছর কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে ১০ দিন পর অর্থাৎ ১১ আগস্ট থেকে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে।

বিএফডিসির রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, তিনমাস ১০ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। তাই আমাদের কাজও ছিলো না। এখানকার অনেকেই কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল। অনেকেরই আয়ের জায়গা বিএফডিসি। এখন আবার মাছ ধরা শুরু হলো। আমরা দীর্ঘ অলসসময় পার করে কাজে যোগ দিলাম।

বিজ্ঞাপন

কয়েকজন পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় হ্রদে এবছর পানির পরিমাণ অনেক কম। এই কারণে প্রথমদিনে অনেক মাছ ধরা পড়েছে, যা অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে ভালো। কিন্তু এখন যদি কম পানিতে সব মাছ ধরা পড়ে, তবে মৌসুমের শেষ সময়ে হ্রদে মাছ আহরণ হবে না। তাই এখানে বৃষ্টিটা বড় ফ্যাক্টর। তারা জানান, শতদিন পরে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে, জেলে ও শ্রমিকদের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিবছরই কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরাসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে
তোলার জন্য ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিনমাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এবছর তাই দেয়া হয়েছে। তবে হ্রদে পানি কম থাকায় আমরা পানির অপেক্ষায় ১০ দিন পর আহরণ চালু করেছি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ হতে ১২ হাজার ৬৯৫ টন মাছ আহরিত হয়েছে; এর বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। চলতি বছরে এর চেয়ে ভালো হবে যা আমাদের প্রত্যাশা। এছাড়া এই বছর আমরা কাপ্তাই হ্রদে ৪৩ টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করেছি। যা বিগত সময়ের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ।

তিনি আরও বলেন, গত বছর যখন হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হয়; তখন হ্রদে পানির পরিমাপ ছিল ১০৫ এমএসএল। এবছর এ পর্যন্ত পানির পরিমাপ ৯৫ এমএসএল। হ্রদে পানির জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় ১০ দিন দেরি হয়েছে। স্বল্প পানির মধ্যে মাছ আহরণ শুরু করলে মাছ তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে। এতে করে প্রাকৃতিক প্রজননে ব্যাঘাত ঘটলে শেষ সময়ে মাছ কমও থাকতে পারে হ্রদে; এটি অবশ্যই শঙ্কার বিষয়। আবার তিনমাস হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় জেলেসহ শ্রমিক-ব্যবসায়ীরা অলস
সময় কাটাচ্ছেন। জেলেদের তিন মাসের খাদ্যশস্য দেয়া হলেও বাড়তি সময়ের জন্য দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তাই নানা দিক বিবেচনায় আমরা স্বল্প পানির মাঝে ১০ দিন দেরি করে আহরণ শুরু করেছি। বৃষ্টিপাতের ওপর এখন অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিসি

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন