বিজ্ঞাপন

সিইউজে ছাড়ছেন আজাদীতে কর্মরতরা, পত্রিকা চালুর আভাস

August 13, 2020 | 10:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দৈনিক আজাদীতে কর্মরত সাংবাদিকরা চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জানানোর পর পত্রিকা প্রকাশে রাজি হয়েছেন দেশের প্রাচীনতম দৈনিকটির সম্পাদক এম এ মালেক। বন্ধ থাকা বাকি চার পত্রিকা কর্তৃপক্ষও দৈনিক আজাদীকে অনুসরণ করে নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। এর ফলে চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ থাকা নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনের আভাস মিলেছে।

বিজ্ঞাপন

আজাদীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পত্রিকাটিতে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে ৩৭ জন সিইউজের সদস্য। দুই সপ্তাহ ধরে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ থাকা নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে বুধবার (১২ আগস্ট) আজাদীতে কর্মরত সিইউজে সদস্যরা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ছিলেন ৩৩ জন। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে তারা সিইউজের সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। প্রবীণ সাংবাদিক কবি অরুণ দাশগুপ্ত বৈঠকে ছিলেন না, তবে তিনি সম্মতি জানিয়েছেন। এছাড়া আরেক সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বৈঠকে ছিলেন না। তবে তিনিও সম্মতি জানিয়েছেন। শুধুমাত্র সিইউজের নির্বাহী কমিটিতে থাকা যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ এবং অর্থ সম্পাদক কাশেম শাহকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আজাদীর একজন জ্যেষ্ঠ্য সংবাদকর্মী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সিইউজের সদস্যপদ প্রত্যাহারে লিখিত সম্মতিপত্র আজাদী কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। সম্পাদক মহোদয় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। আমরা একইভাবে সিইউজের কাছেও প্রত্যাহারপত্র পাঠাবো। সিইউজে কী সিদ্ধান্ত নেবে, এটা তাদের বিষয়।’

‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- সিইউজে যে কর্মসূচিটা পালন করেছে সেটি নিশ্চয় আমাদের স্বার্থেই করেছে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতায় আমরা বলতে পারি- সিইউজে প্রথমে আলোচনা করতে পারত। ফলপ্রসূ না হলে সভা-সমাবেশের পথ খোলা ছিল। তাতেও কাজ না হলে কর্মবিরতি-অফিস ঘেরাও করতে পারতো। এরপরও যদি সমাধান না হয় তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে পারতো। কিন্তু সবকিছু বাদ দিয়ে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাওয়ের মতো কেন কর্মসূচিতে গেলেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এতে যে শুধু আজাদীর সম্পাদক অপমানবোধ করেছে তা নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্রের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয়েছে। আমরা আজাদীতে কাজ করি। আমরা ভেবেছিলাম, সিইউজে বিষয়টি সমাধান করবে। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এরপরও ১৫ দিন অপেক্ষা করেছিলাম যে, তৃতীয়পক্ষের মধ্যস্থতায় হয়ত পত্রিকা চালু হবে। সেটাও না হওয়ায় আমরা সিইউজের সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি’ বলেন ওই সংবাদকর্মী

বিজ্ঞাপন

দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজাদীতে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। আমাদের পুরো ইউনিট সিইউজে থেকে পদত্যাগ করেছে। তারা পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর আমি আবারও পত্রিকা প্রকাশে রাজি হয়েছি। সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে সিইউজের একটি কর্মসূচি থেকে। সিইউজের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। আজাদীতে কর্মরতরাই যেখানে বলছে, তারা আর সিইউজেতে থাকবে না। সেখানে আমাকে তো অবশ্যই তাদের কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

কবে নাগাদ পত্রিকা প্রকাশ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচটি পত্রিকা একসঙ্গে বন্ধ করেছিলাম। একসঙ্গেই আবার খুলব। পূর্বকোণে সম্ভবত এখনও সামান্য সমস্যা আছে। সে জন্য সময় নিচ্ছি। কাল অথবা পরশু থেকে প্রকাশনা শুরু করতে পারি।’

এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের বাসায় গিয়ে পত্রিকা পুনরায় চালুর অনুরোধ করেন।

বিজ্ঞাপন

দৈনিক পূর্বকোণের প্রধান প্রতিবেদক নওশের আলী খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পত্রিকায় সিইউজের সদস্যপদ প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলেছি- সিইউজে আমাদের ইউনিটের কথা শুনেছে। কর্তৃপক্ষকে তো তারা কোনো ধরনের অসম্মান করেনি। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে। সমঝোতার পর্যায়ে আছি। আশা করি অচিরেই পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হবে।’

দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সাহেব আমাদের শ্রদ্ধেয়জন। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা আমরা সবাই মেনে নেব।’

দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক মুজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজাদী কর্তৃপক্ষ যা করবে আমিও সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেব। আমরা এখনও পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিইনি। একটু খোঁজ-খবর নিয়ে দেখি।’

জানতে চাইলে সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সদস্যপদ প্রত্যাহারের বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু বলেনি। এটা আমরা জানি না। তবে আমরা বারবার মালিকদের আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু উনারা আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা সমাধানে রাজি নন। আলোচনার জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা আছে। আমরা ১৫ আগস্টের আগেই পত্রিকা চালুর জন্য মালিকদের আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের দাবিতে গত ২৯ জুলাই নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে সিইউজে। এরপর থেকে আজাদীসহ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত পাঁচ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ আছে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন