বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্ট: কামানের গোলায় ১৩ জনকে হত্যার বিচার হয়নি

August 15, 2020 | 7:46 pm

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালোনোর সময় কামানের গোলা ছোড়ে ঘাতক বাহিনী। তাদের ছোড়া গোলা গিয়ে পড়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের দুটি বাড়ির ওপর। এ ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৪০ জনের মতো আহত হন।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর করা ইনডেমনিটি আইনের ফলে এই ঘটনা নিয়ে আর মামলা করার সুযোগ না থাকায় মামলা করতে পারেনি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। এর ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হলেও ওই দিন কামানের গোলায় ১৩ জন নিহতের মামলায় বিচার হয়নি ২৪ বছরেও। দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে সাক্ষী না আসায় অনেকটা থমকে আছে মামলাটির বিচার কাজ।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন মামলাটি মুজিববর্ষেই মধ্যে তারা বিচার শেষ করতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রায় ১৪ বছর আগে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। তবে এত দিনেও মামলার বিচার শেষ হয়নি।

চলতি বছরের গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত থাকলেও ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে না আসায় আগামী ১৩ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ঠিক করেন। কিন্তু এরই মাঝে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের সাধারণ ছুটি চলায় আর কোনো কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ ছুটি শেষে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটরই সাইফুল ইসলাম হেলাল সারাবাংলাকে জানান, মামলাটির বিচার কাজ শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে সব সময়ই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে রাষ্ট্রপক্ষ। পুলিশ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারছে না। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমনের পর অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়নাও জারি করা হয়েছে। তারপরও তারা হাজির হচ্ছেন না। সাক্ষীদের হাজিরের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল স্থানে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর পরেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। এজন্য মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কয়েকমাস আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আরও কিছু পাবলিক সাক্ষী বাকি রয়েছে। মুজিববর্ষকে গুরুত্ব দিয়ে এ বছরের মধ্যে মামলাটির বিচার যেন শেষ হয়ে যায়, তার চেষ্টা করে যাব।

মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী সারাবাংলাকে জানান, মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের ৮ নম্বর বাড়িটি আমার ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিন সকাল সাড়ে ৫টায় বাসার ওপর কামানের গোলা এসে পড়ে। ওই সময় বাসার ভাড়াটিয়া ও গ্রামের লোকজন অবস্থান করছিল। কামানের গোলায় আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় রিজিয়া বেগমসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৪০ জন আহত হন। আহতদের তাৎক্ষণিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, মামলা করতে গেলে তৎকালীন মোহাম্মদপুর থানার ওসি রব দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অজুহাতে মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেন। আর কামানের গোলায় নিহতদের লাশ কবর দিতে বলেন। একপর্যায়ে ১৫ আগস্ট যা কিছু হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো মামলা করা যাবে না এ সংক্রান্ত আইন পাস হয়। ফলে চেষ্টা করেও ওই সময় আর মামলা করা সম্ভব হয়নি।

এরপর ১৯৯৬ সালে স্বশরীরে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে কামানের গোলায় ১৩ জনকে হত্যার মামলাটি করি। গুরুত্বপূর্ণ এ মামলাটি দীর্ঘদিনেও শেষ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাদেরও শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

বিজ্ঞাপন

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুঁড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডর ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। ছোড়া কামানের গোলার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তের মধ্যেই ধুলায় মিশে যায় ওই বস্তিটি। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যায়। প্রায় ৪০ জন আহতের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে।

১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় ওই ঘটনায় ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে ২০০১ সালের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারিতে ১৭ আসামির মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরা হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। গত ১২ এপ্রিল ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদেরও ফাঁসি কার্যকর হয়।

পলাতক ১২ আসামিরা মধ্যে যারা রয়েছে তারা হলেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) শরিফুল হক ডালিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ইবি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আহমদ শরিফুল হোসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মো. কিসমত হাসেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার, রিসালদার (অবসরপ্রাপ্ত) মোসলেম উদ্দিন ওরফে মোসলেহ উদ্দিন, এলভি মো. আলী হোসেন মৃধা ও দফাদার মারফত আলী।

সারাবাংলা/এআই/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন