বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে বৃষ্টিতে নিচু এলাকায় দুর্ভোগ, পাহাড় থেকে সরতে মাইকিং

August 17, 2020 | 5:51 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম টানা বৃষ্টিপাতে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি হাসপাতাল, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে ঢুকে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে ধসের আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তাদের জন্য নগরীতে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৬ আগস্ট) রাত থেকে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। রাতভর কখনো মুষলধারে, আবার কখনও মাঝারি আকারে চলা টানা বৃষ্টি সোমবার (১৭ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর মধ্যে সকালে সাগরে জোয়ার এলে নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তবে আগের মতো পানি বেশিক্ষণ জমে ছিল না।

সোমবার সকালে নগরীর বাকলিয়া, প্রবর্তক মোড়, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, হালিশহর, সরাইপাড়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, ডিসি রোড, কাপাসগোলা, চাক্তাই, আছদগঞ্জ খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে থাকার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পুসহ ছোট যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হয়। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় কর্মরত সেনাসদস্যদের টিম বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দ্রুত প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লে. কর্নেল শাহ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘চকবাজার, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ ও চশমা খালের আশপাশে এবার বেশি পানি দেখেছি। পানি জমে থাকা বলতে যেটা বোঝায়, সেটা হয়েছিল সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। তখন আমরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখেছি খালে পানি থেমে আছে, যাচ্ছে না। তখন জোয়ার চলছিল। মূলত জোয়ারের কারণেই বৃষ্টির পানিটা আটকে গিয়েছিল। ১০-১২টা স্পটে পানি জমে ছিল। খবর পেয়ে আমাদের কুইক রেসপন্স টিম গিয়েছিল। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতিকে জলাবদ্ধতা বলা যাবে না। শুধুমাত্র পানির চাপ ছিল। পানি ড্রেন হয়ে খালে যাওয়া পর্যন্ত সময়টুকু লেগেছিল।’

এদিকে, বরাবরের মতো বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ঢুকে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে কোভিড আক্রান্তদেরও চিকিৎসা চলছে। ভারি বর্ষণের সঙ্গে জোয়ার আসায় সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে পানি ঢুকতে শুরু করে। প্রায় দেড় থেকে দু’ঘণ্টা স্থায়ী ছিল পানি। এসময় হাসপাতালের নিচতলার প্রশাসনিক ব্লক, অভ্যর্থনা কক্ষ এবং শিশু ওয়ার্ডে প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি ছিল। দুপুরের পর আবারও প্লাবিত হয় হাসপাতাল।

টানা বৃষ্টির কারণে এবং সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে পণ্য উঠানামায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাদ তঞ্চঙ্গ্যা সারাবাংলাকে জানান, সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।  বায়ুচাপের আধিক্যের কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকবে। বৃষ্টিপাত আরও ২৪ ঘণ্টা থাকতে পারে।

এদিকে ভারি বর্ষণ শুরুর পর নগরীর বিভিন্ন পাহাড় থেকে বাসিন্দাদের সরাতে মাঠে নামে জেলা প্রশাসনের টিম। নগরীর মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, একে খান পাহাড়, ট্যাংকির পাহাড়, আমিন জুট মিলস এলাকা, রউফাবাদ, খুলশী, পাহাড়তলি, ফয়’সলেক, আকবর শাহ, ঝিল-১,২,৩ নম্বর এলাকা, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনী এলাকা, ফিরোজ শাহ, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোড এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

নগরীর চান্দগাঁও, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ এবং কাট্টলী সার্কেলের অধীন এলাকায় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সার্কেলের ছয় জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব আশ্রয়কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে আছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হচ্ছে— পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিশ্বকলোনিতে কোয়াড-পি ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফিরোজ শাহ কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বায়তুল ফালাহ আদর্শ মাদরাসা, চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জালালাবাদ বাজার সংলগ্ন শেড, রউফাবাদা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, রশিদিয়া রউফাবাদ আলিম মাদরাসা, মহানগর পাবলিক স্কুল, আল হেরা মাদরাসা, আমিন জুটমিল ওয়ার্কার্স ক্লাব, আমিন জুট মিলস নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লালখানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবাদউল্লাহ পণ্ডিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদনগর সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, কলিম উল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াইডব্লিউসিএ, শেখ রাসেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মতিঝর্ণা ইউসেফ স্কুল।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৭টি পাহাড় থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন পাহাড়ের নিচে স্থাপন করা বসতি থেকে সরতে বলা হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে তাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে আমরা ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে লোকজনকে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন