বিজ্ঞাপন

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: মুখে কুলুপ এঁটেছে বিএনপি

August 21, 2020 | 3:15 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ‘বালখিল্য’ ধরনের বক্তব্য দিলেও ঘটনার ১৬ বছর পর এসে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তারা। ওই সময় সংসদ, রাজপথ ও গণমাধ্যমে যারা দেদারসে কথা বলেছেন, আক্রান্ত আওয়ামী নেতাদের ওপরই গ্রেনেড হামলার দায় চাপিয়েছেন, তাদের কেউ-ই এখন আর কথা বলতে চান না বিষয়টি নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানসহ দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তবে একজন ছাড়া এদের সবাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে কথা বলার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অথচ গ্রেনেড হামলার পর জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘শেখ হাসিনা নিজেই তার ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন!’ ঘটনার পরের দিন ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এক সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে!’ ৩০ আগস্ট বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দলের তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াসহ কয়েকজন মন্ত্রী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন। তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানুল্লাহ আমান ওই সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাচ্ছেন। আমরা সব ধরনের তদন্ত করব। খুব তাড়াতাড়িই তদন্ত রিপোর্ট দেবো। ওই রিপোর্টে গ্রেনেড হামলার জন্য আব্দুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ এবং মতিয়া চৌধুরীকে দায়ী করা হবে।’

আরও পড়ুন-

ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী আজ

বিজ্ঞাপন

আপিল শুনানিতে অগ্রাধিকার পাবে ২১ আগস্ট মামলা

গ্রেনেড হামলায় শ্রবণশক্তির ক্ষত বয়ে চলছেন শেখ হাসিনা

‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল ইতিহাসের জঘন্যতম হামলা’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এসব নেতাকে অসংখ্যবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি। আর যারা রিসিভ করেছেন, তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সবার একই কথা— ‘এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না তারা।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল মূলত শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে। যেহেতু ওই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, তাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাদেরই। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতর করে আইনের হাতে সোপর্দ করার ক্ষেত্রে তৎকালীন সরকার কেবল চরম ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি, বরং ঘটনা প্রবাহ অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। অপরাধীরা নিরাপদে রেখে নিরপরাধ নিরীহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছে। সাজানো হয়েছে ‘জজ মিয়া নাটক’। আর এসব ঘটনার সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাদের সবাই এখন বিএনপির রাজনীতি থেকে বহু দূরে। সঙ্গত কারণেই বিএনপির ওই ‘দুষ্টু চক্রে’র ‘অপকর্মের ভার’ বর্তমান নেতারা নিতে চান না। আবার তাদের ‘অপকর্ম’ সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে দলের হাইকমান্ডের বিরাগভাজনও হতে চান না কেউ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য চারদলীয় জোট সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবসময় সব বিষয়ে কথা বলতে নেই। দলে আমার অন্য কাজ আছে। আমি সেইগুলো করি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে কথা বলার জন্য আমি মনোনীত ব্যক্তি নই।’

বিজ্ঞাপন

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ’২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছেন দলের মহাসচিব। আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাসও একই কথা বলেন। সারাবাংলাকে তারা বলেন, ’২১ আগস্ট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য দল আমাদেরকে দায়িত্ব দেয়নি।’

দলীয় সূত্রমতে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির একাধিক প্রভাশালী মন্ত্রী ও নেতা আদালতের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত হলেও স্বাভাবিক নিয়মেই গ্রেনেড হামলার দায় কোনোদিন স্বীকার করবে না বিএনপি। তবে ঘটনার পর জজ মিয়া নামের একজন ছিঁচকে অপরাধীকে গ্রেফতার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা, শৈবাল সাহা পার্থ নামের একজনকে গ্রেফতার করেও নাটকীয়তার জন্ম দেওয়া, কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না গেলেও সম্পূর্ণ অনুমানের ওপর নির্ভর করে পার্থ সাহার ওপর প্রচণ্ড শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালানো এবং পুরো বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা বর্তমান বিএনপির অনেক নেতাকেই ব্যথিত করে। তারা মনে করেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা যারাই ঘটিয়ে থাকুক, ঘটনার পর তৎকালীন সরকার বিষয়টিকে ‘স্মার্টলি’ হ্যান্ডল করতে পারেনি। যার ফলে এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার ব্যাপারে জনমনে সন্দেহ-সংশয় বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সারাবাংলাকে বলেন, ’২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কারা করেছে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ঘটনায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। আর হামলার পর বিষয়টি যেভাবে হ্যান্ডল করা দরকার ছিল, তৎকালীন সরকার সেভাবে হ্যান্ডল করতে পারেনি। এ কারণেই  বিএনপিকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন