বিজ্ঞাপন

‘মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসাবে যা করেছি দায়িত্ব থেকে করেছি’

August 25, 2020 | 8:44 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষী অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী বলেছেন, ‘সব বর্বরোচিত ঘটনায় যেমন বিভিন্ন কুলাঙ্গার অফিসার জড়িত থাকে, তেমনি কর্নেল জামিলের মতো কিছু সাহসী অফিসারও থাকে। আমি তাই হতে চেয়েছিলাম। আমি মুজিব আদর্শের একজন সৈনিক হিসাবে, এমনকি একজন সামরিক সৈনিক হিসাবেও ভেবেছি; যা করেছি আমার দায়িত্ব থেকে করেছি, বিবেকের থেকে করেছি।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৪ আগস্ট) রাতে সিআরআই আয়োজিত ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদের উত্থান’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু ও প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন।

২১ আগস্ট মামলার সাক্ষী মেজর সামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘যাওয়ার প্রাক্কালে আমাকে বলা হয়েছিল গ্রেনেডগুলো যেখানে যে অবস্থায় আছে, ওই অবস্থায় যেন ধ্বংস করে আসি। ঘটনাস্থলে এসে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে প্রথমেই একটি গ্রেনেড দেখতে পাই। গ্রেনেডটি পিন লাগানো ছিল। উপরের নির্দেশ ছিল দ্রুত ধ্বংস করে ফিরে আসি, কিন্তু তবু আমি আমার চেইন অফ কমান্ডকে জানালাম এই গ্রেনেডে সেফটিপিন লাগানো আছে। এটা নিয়ে আসা যায় না, স্যার জানিয়ে দিল ধ্বংস করা হোক।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘নির্দেশ ছিল সাংবাদিকদের সাথে যেন কোনো কথা না বলি। আমি সিচুয়েশন তৈরি করে বললাম, কথা না বলে পারা যাচ্ছে না। তখন অনুমতি নিয়ে কথা বলি। সাংবাদিকরা ভাইরা বুঝতে পারে, গ্রেনেডটিতে সেফটি পিন লাগানো আছে এবং এটা একটা আর্জেস গ্রেনেড। এটার ভয়াবহতা ওনারা বুঝতে পারেন এবং এটাও বুঝতে পারেন গ্রেনেডটি আসলে সেফ টু ক্যারি। পরের গ্রেনেডটি পেলাম গোলাপশাহ মাকের্টের পূর্ব পাশে একটি টিনশেড মার্কেট, ওই টিনশেড মার্কেটের সামনে একটা দোকানের সামনে আরেকটা গ্রেনেড আমি পেলাম। সেই গ্রেনেডটা যথাযথ আমার চেইন অফ কমান্ডকে জানালাম। এখানে একটা গ্রেনেড আছে। যদিও নির্দেশ ছিল সাথে সাথে ধ্বংস করার জন্য। বাট আমি জানালাম, গ্রেনেডটিতে সেফটি পিন লাগানো আছে, গ্রেনেডটা এই অবস্থায় আছে।’

‘আমাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ধ্বংস করা হোক। আমি বললাম ধ্বংস করা যাবে না। আমি বললাম যদি ড্যামোম্নেস্টেসন করি তাহলে পুরো মার্কেটটাই উড়ে যাবে। তখন অনেকক্ষণ পরে আমার কমান্ড জানাল, ঠিক আছে গ্রেনেডটি নিয়ে বাইরের কোথায় খোলা জায়গায় ধ্বংস করে দাও। এর মধ্যে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করার সুযোগ পেল এবং বিভিন্ন চ্যানেলে আর্জেস গ্রেনেডগুলোর ছবি-টবি দেখানো হল এবং প্রচার হল। পরের দিন সকালে আমাকে আবার আমার বোম ডিস্পোজাল টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠানো হলো, এবার যাওয়ার প্রাক্কালে বলা হলো, যদি গ্রেনেডগুলো সেভ থাকে তাহলে যেন আমি সেগুলো আমাদের সেনানিবাসে নিয়ে আসি’, বলেন অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর।

সঞ্চালকের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘যতদূর আমার মনে আছে জেলখানার ভিতরে ঢোকার পরে বাউন্ডারি ওয়ালের কাছাকাছি এবং কয়েদিরা যেখানে থাকে এর মাঝামাঝি একটা ড্রেন ছিল। ড্রেনের কাছাকাছি একটা গ্রেনেড আমি পেয়েছি। ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড দুইটি পেয়েছি হুবহু ২২ আগস্ট সেম গ্রেনেড আমি একটা গোলাপ শাহ মার্কেটের কাছে (ওখানে আগের দিনও একটা পেয়েছিলাম) পরের দিন সকালেও পেলাম দোতালায়, যদিও টিনশেড মার্কেট, একটা বাথরুমের সামনের ঝুঁড়িতে। তাতেও সেফটি পিন লাগানো ছিল। ওখানে উপস্থিত যারা মিডিয়াকর্মী সবাই তখন এই গ্রেনেডগুলোর ছবি তোলার সুযোগ পেল। পরবর্তীতে সেগুলো আমাদের সেনানিবাসে নিয়ে আসি। যেহেতু সকালে আমাকে বলেছিল, যদি সম্ভব হয় নিয়ে আসি। বাট আগের দিন বলা ছিল ওগুলো যেন ধ্বংস করে আসি। আমি যদিও সময় নিয়েছিলাম, রাখার চেষ্টা করেছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

‘মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ধ্বংস করতেই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায় বিএনপি’

তিনি বলেন, ‘বিগ্রেড অফিসের সামনে আমি একটা টেবিলের ওপরে এগুলো রাখি, রাখার পরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের খবর দেওয়া হয়, তারা ওখানে এসে গ্রেনেডগুলো দেখে এবং গ্রেনেডগুলো ওনারা নাড়াচাড়া করে, হাতে নেয়। পরে ওইদিন বিকেলে ওই দুইটা গ্রেনেড ধ্বংস করা হয়। এরপরে যেটা হয় তখন ডিজিএফআই হানা দিলো আমার চট্টগ্রামের বাড়িতে। এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ চললো আমার বিষয়ে। জানলো আমি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। জানলো চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি ছিলাম এবং তারা আরও জানতে পারল অসহযোগ আন্দোলনে ভাঙচুর মামলায় আমি একজন আসামি ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি না, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হওয়া কি অন্যায় কিছু? সে সংগঠন স্বাধীনতা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই সংগঠনের নেতা হওয়া কি অন্যায় কিছু? সত্যের পথে অবিচল থাকা কি অন্যায় কিছু? জানি না? আমার অন্যায় কি ছিল? যখন বের করে দিচ্ছে আমাকে সেনাবাহিনী থেকে তখনও জানলাম না, আমার অন্যায় কি ছিল? এই মামলায় সাক্ষী দিয়েছি, এটা যে একটা গ্রেনেড ছিল, গ্রেনেডটি কেমন ছির সমস্ত জিনিস আমি আমার সাক্ষ্যে বলেছি। আদালতে মামলার রায়ও হয়েছে। দল ক্ষমতায় আসার পরও আমি আসলে তেমন যোগাযোগ করিনি। মুজিব আদর্শের একজন সৈনিক হিসাবে, এমনকি একজন সামরিক সৈনিক হিসাবেও আমি ভেবেছি, যা করেছি আামর দায়িত্ব থেকে করেছি, আমার বিবেকের থেকে করেছি।’

‘আমি জেনেছিলাম, পরবর্তীতে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করেন, পরপরেই ওনি আমার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমার নেত্রী যতবার এই ঘটনায় আমার কথা উল্লেখ করেন, আমি যেন আবার নতুন করে জেগে উঠি। আবার নতুন শপথে এগিয়ে যাই। ভুলে যাই চাকরি হারানোর পরের নির্মমতা। চাকরি হারানোর ১৩ বছর পর আমি আমার সম্মান ফিরে পেয়েছি। ধন্যবাদ জানাই নেত্রীকে। আগামীতেও যদি এর চেয়েও কোনো বড় দায়িত্ব থাকে আমি পালন করে যাবো।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন