বিজ্ঞাপন

সেই ‘পাগলি মা’ এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন

March 10, 2018 | 2:14 pm

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মাথায় গামছা দিয়ে চুলগুলো বাঁধা, পরনে সালোয়ার কামিজ-ওড়না। পা দুটো খালি। খালি পায়েই হেঁটে চলেছে হাসপাতালের এখান থেকে সেখানে। তবে ডাকলেই সাড়া দিচ্ছে, কাছে আসছে, কথা বলছে, হাসছে।  বলতে পারে নিজের নাম, পরিবারের কথা- তারপরও সে এলাকাতে ‘পাগলি সালমা’ নামেই পরিচিত ছিল। কিন্তু গত ২২ ফেব্রুয়ারির পর তার নতুন নাম হয় ‘পাগলি মা।’

সন্তান জন্মানোর পর এই পাগলি মা আর তার মেয়ের কী হবে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে এগিয়ে আসেন কয়েকজন ‘মানুষ’। নবজাতক কন্যাটিকে নিজ দায়িত্বে নেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতি। আর ‘পাগলি মায়ের’ দায়িত্ব নেন শামীম আহমেদ নামে একজন ব্যাংকার।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকার শামীম (বাম দিক থেকে দ্বিতীয়) ও তার বন্ধুরা

গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় এই মানসিক ভারসাম্যহীন নারী এক কন্যা সন্তানের মা হন। উপজেলার হাতিরবাগান মাঠের বালুর মধ্যে তার প্রসব হয়। সে রাতে নারী এবং শিশুর কান্নার শব্দ শুনে এগিয়ে যান বালুর মাঠে আড্ডা দেওয়া অমি ও তার বন্ধুরা। সেখানে তারা দেখতে পান সদ্য মা হওয়া ওই নারী ও তার সন্তানকে। পরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে কন্যা শিশুটির নাম রাখা হয় হুমায়রা।

বিজ্ঞাপন

বালুর মাঠ থেকে মা ও শিশুকে উদ্ধারকারী অমি

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে গত ১ মার্চ ঢাকা থেকে মাদারীপুরের শিবচরে যান শামীম আহমেদ। পেশায় তিনি ব্যাংকে কর্মরত এবং গত কয়েক বছর ধরেই তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের নিয়ে কাজ করছেন।

১ মার্চ সালমাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে সরাসরি তিনি চলে যান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিউট ও হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি হওয়া রোগীকে দেখাশোনার করার মতো কেউ না থাকায় তাকে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। সেদিন বৃহস্পতিবার রাত এবং পরের দিন শুক্রবার শামীম নিজবাসায় রাখেন সালমাকে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের কথা বলছেন নবজাতকের মা সালমা

বাসায় সালমা কেমন ছিল কিংবা তার কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েছে কি না জানতে চাইলে শামীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময় সালমা আমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু এই পুরো সময়টাতে কেবল শুক্রবার সকালের দিকে ওর ভেতরে অস্বাভাবিকতা দেখেছি। আমার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেও বেশ ভাব জমে যায় তার। এমন কী প্রথমদিকে সন্তানেরা তাকে একটু ভয় পায়, সালমা সেটাও বুঝতে পারত। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সে অস্বাভাবিক আচরণ করে, তখন তাকে হ্যান্ডেল করাটা মুশকিল হয়ে যেত’ -বলেন শামীম।

পরে গত ৩ মার্চ শনিবার সকালে সালমাকে ভর্তি করা হয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। সেখানে তিনি ফরেনসিক সাইক্রিয়াটিক বিভাগে অধ্যাপক ডা. খসরু পারভেজ চৌধুরীর অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, সালমাকে ভর্তি করার পর তার চিকিৎসা চলছে। কয়েকটি পরীক্ষা করানো হয়েছে যেগুলো হাসপাতাল থেকে বিনা খরচে করানো হয়েছে।

সালমার সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, তার বাবা এবং ভাইদের দ্বারা সে খুব নিগৃহীত ছিল, তাকে মারধর করা হতে বলেও জানিয়েছে আমাদের। তারপর সে কোনোক্রমে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু সে কমিউনিকেটিভ-বেশ কথা বলতে পারে, আর এ জন্য তাকে চিকিৎসা করতেও সুবিধা হচ্ছে আমাদের বলেন ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

কেবলমাত্র সালমাকে নয়, খোঁজ পাওয়া গেছে সালমার পুরো পরিবারেরই। সারাবাংলাকে শামীম আহমেদ বলেন, সালমার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়েনের দক্ষিণপাড়াতে। তার বাবার নাম নবী হোসেন, পেশায় তিনি একজন কাঠমিস্ত্রী। মা মারা গিয়েছেন অনেক আগেই।

বালুর মাঠে জন্ম নেওয়া নবজাতক সঙ্গে ‘পাগলি মা’

বেশ কয়েকবছর আগে সালমার বিয়ে হয়, সে সংসারে তার একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলেও মারা যায় সে মেয়ে, আরেকটি বিয়ে করেছে স্বামী।

শামীম জানান, সালমার এক ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে তার এবং অনেক আগে থেকেই সালমা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছেন তাকে। ভাইয়ের বরাত দিয়ে শামীম বলেন, প্রায় দুই বছর আগে সালমা তার নিজ বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াত। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য না থাকায় বাড়িতেই তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। কিন্তু তারপরও বাড়ি রাখা যায়নি সালমাকে।

কিন্তু সালমা নিজের বাড়ি ছেড়ে মাদারীপুরে কবে এসেছিলেন সে কথা বলতে পারেনি কেউ। চিকিৎসকরা বলছেন, আরেকটু সুস্থ হওয়ার পর সালমা বিস্তারিত বলতে পারবেন। সে অপেক্ষা করছেন তারা।

সারাবাংলা/জেএ/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন