বিজ্ঞাপন

‘১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ উন্মোচনে কমিশন শিগগিরই’

August 27, 2020 | 12:29 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ উন্মোচনে শিগগিরই কমিশন গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসটা একটু স্বাভাবিক হলেই এই কমিশন গঠন করা হবে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে এই কমিশনের কর্মপরিধি নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিটিংও ডেকেছি। সে ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা এই কমিশন গঠন করব।

বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেনাপ্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাগ্রহণের কথা তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান যখন দেশ চালাতে শুরু করেছে, তখন তার আসল উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বেরিয়ে এসেছে। এই বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে পাকিস্তানের আরেকটা প্রদেশ না হোক, পাকিস্তানের সঙ্গে একটা কনফেডারেশন করে ফেলার সব রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছিল। শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী, শামসুল হককে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আলীমকে মন্ত্রী এবং রাজাকার-আলবদর যারা এ দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, তাদের দেশে আসার পারমিশন দেয়।

বিজ্ঞাপন

ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করার পরও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা সম্ভব ছিল বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অর্ডিন্যান্সে দুইটি প্যারাগ্রাফ আছে। প্রথম প্যারাগ্রাফে বলা আছে— যারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এই আইনের ফলে তাদের বিচার করা যাবে না। দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফে বলা আছে— যারা এই আইনের প্রটেকশন নেবে, তাদের কাছে রাষ্ট্রপতির সই করা সার্টিফিকেট থাকতে হবে। অর্থাৎ খুনি মোশতাকের (তৎকালীন রাষ্ট্রপতি) সার্টিফিকেট তাদের রাখতে হবে। কিন্তু আমরা যখন ১৯৯৬ সালে যখন বিচার করতে যাই, এই সার্টিফিকেট কিন্তু তখন কারও কাছে ছিল না। ফলে ওই ইনডেমনিটির পরও এই সার্টিফিকেট না থাকার কারণে খুনিদের বিচার করা সম্ভব ছিল। কিন্তু কিন্তু সেই বিচার আমরা দেখি নাই। বরং বঙ্গবন্ধুর নাম কিভাবে মুছে ফেলা যায়, সেই চেষ্টা আমরা দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেই চেষ্টা দেখি। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশকে আবার কিভাবে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেওয়া যায়, সেই চেষ্টা

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাকি ১৭ জন সদস্যকে হত্যা করেছি কেন? তার কারণ তারা ভালো করেই জানত, বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজনও যদি জীবিত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ আবার উঠে দাঁড়াবে। সেটা প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার মাধ্যমে। তাদের বিরাট পরিকল্পনা ছিল, সেই পরিকল্পনা নষ্ট করে দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।’

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার প্রসঙ্গ টেনে আনিসুল হক বলেন, ১৯৯৭ সালে যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হলো, খন্দকার মোশতাক এই মামলায় আসামি ছিল। মৃত বলে তার নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গও উল্লেখ করতেই হয়। ওই মামলার প্রধান কৌঁসুলী (সিরাজুল হক) যুক্তিতর্কের সময় যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, সেই বক্তব্যে তিনি পরিষ্কার বলে গেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন দুই জন— একজন খন্দকার মোশতাক, আরেকজন জিয়াউর রহমান। আর যারা খুন করেছে, তারা তাদের সৈন্য। তারা হচ্ছে গুলিচালক মাত্র। মূল হোতা জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক।

বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও তার মন্ত্রিসভার অনেকেই খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘মোরাল ব্রেকডাউন বলতে একটা কথা আছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটে আওয়ামী লীগের যারা মন্ত্রী ছিলেন, তারা ১৫ আগস্ট সেই বিকেল বেলা যদি খুনি মোশতাকের মন্ত্রী না হতেন, তাহলেই কিন্তু প্রেক্ষাপট অন্যরকম হতো। আজ এদের জন্যই আমাদের গালি সহ্য করতে হয় যে আওয়ামী লীগও তো এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এখানে আমাদের পরিষ্কারভাবে বলতে হবে— আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক নেতা জড়িত থাকতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগের আপামর কর্মী যারা, আওয়ামী লীগের গ্রাউন্ড লেভেল কর্মী যারা, তারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ছিল এবং সেইজন্যই আজও আওয়ামী লীগ জীবিত।’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা জড়িত ছিল, তাদের পরিচয় উন্মোচন করার জন্য কমিশন গঠন করতে হবে এবং সেই প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে বলে জানান আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কিংবা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত, তাদের সবার বিচার শেখ হাসিনা করেছেন। আর সে কারণেই আজ আমরা নতুন দাবি তুলতে পারছি। এই দাবিটা হলো একটি কমিশন গঠনের দাবি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল, তাদের চিহ্নিত করবে এই কমিশন, তাদের মুখোশ উন্মোচন করবে।

এই কমিশন কেমন হবে, সেটি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা তো সবাই মুখে মুখে বলি অমুক জড়িত, তমুক জড়িত। তাহলে অনেকেই প্রশ্ন করবেন, আপনারা তো সবই জানেন, কমিশন করার দরকার কী? আমি বলব, দরকার আছে। কমিশনটা একটা কোয়াশি-জুডিশিয়াল কমিশন হবে। সব রেকর্ডপত্র গ্রহণ করবে। এই রেকর্ডপত্রকে এভিডেন্স হিসেবে গ্রহণ করবে। তারা বলবে, আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে, আমরা এই তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বলছি— অমুক এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন, তমুক জড়িত ছিলেন। এগুলো তখন ডক্যুমেন্টস হয়ে থাকবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই বিষয়ে গবেষণা করতে গেলে তাদের জন্য ডক্যুমেন্ট হয়ে থাকবে। সবাই জানতে পারবে কারা এই বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে, কাদের বংশধরদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। এ কারণেই আমি মনে করি কমিশনটা হওয়া প্রয়োজন। এবং আমি এটাও বলতে পারি— আমাদের সবার নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কিন্তু বলেছেন, কমিশন গঠন হবে।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস। সভায় ১৫ আগস্টসহ সব শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ভার্চুয়াল এই সভায় সংযুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ রেজাউর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল বাসেত মজুমদার, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী মাহাবুব আলী, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আবদুল্লাহ আবু, এম আমিন উদ্দিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

সারবাংলা/এনআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন