বিজ্ঞাপন

পদত্যাগ করলেন শিনজো আবে, মেয়াদ পূরণ করতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ

August 28, 2020 | 4:47 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দলের পক্ষ থেকে জানানা হয়েছিল আগেই। শারীরিক অসুস্থতার কোনো প্রভাব যেন দায়িত্ব পালনে না পড়ে, সে কারণে পদত্যাগ করবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণাই দিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। বলছেন, জাপানের জনগণ তার কাঁধে দায়িত্ব তুলে দিলেও পুরো মেয়াদ শেষ করতে না পারার জন্য দুঃখিত।

বিজ্ঞাপন

বিবিসির খবরে বলা হয়, শুক্রবার (২৮ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন শিনজো আবে। ৬৫ বছর বয়সী জাপানি এই সরকার প্রধান দীর্ঘ দিন ধরে আলসারজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে এই সমস্যা অনেক তীব্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পদত্যাগের ঘোষণায় শিনজো আবে বলেছেন, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে তার আলসারের সমস্যা বেড়ে যায়। ওই সময় থেকেই তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে। বর্তমানে শারীরিক এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য টানা চিকিৎসা নিতে হবে তাকে। আর সেটা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন হবে।

আরও পড়ুন- পদত্যাগ করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে

বিজ্ঞাপন

আবে বলেন, এমন শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আমি ভুল করতে চাই না। ফলে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বিবেচনাতেই আমি বুঝতে পেরেছি, এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে না।

শিনজো আবে বলেন, জাপানের জনগণের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। তারা আমাকে যে সময়ের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তার একবছর আগেই আমাদের সরে দাঁড়াতে হচ্ছে। এটি এমন একটি সময় যখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। এছাড়া বেশকিছু নীতিমালাও বাস্তবায়নে কাজ চলছে।

প্রায় এক দশক আগে বেশকিছু জাপানি নাগরিক অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। উত্তর কোরিয়া থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আবে। রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রতিশ্রুতি ছিল তার। সামরিক বাহিনীকে আরও বেশি ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান সংশোধনের অঙ্গীকারও করেছিলেন আবে। এসব প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেন আবে।

বিজ্ঞাপন

শিনজো আবে জাপানের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে একটানা দায়িত্ব পালন করে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী। ২০১২ সাল থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে এর আগেও তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময়েও আলসারজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ওই সমস্যার কারণে ২০০৭ সালে হুট করেই পদত্যাগ করেন।

গোঁড়া রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী হিসেবে শিনজো আবের পরিচিতি রয়েছে। তিনি সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত তার আগ্রাসী অর্থনীতির জন্য। তিনি যে অর্থনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেন, তার নতুন নামই দেওয়া হয়েছে ‘আবেনমিকস’। জাপানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে তার এই কৌশলকে মূল কারণ মনে করা হয়। তবে কেবল অর্থনীতি নয়, প্রতিরক্ষা ও সামরিক খাতেও আবে’র ভূমিকা ছিল আগ্রাসী। অনেক সমালোচনার মুখেও এই দুই খাতে বাড়তি খরচে পিছুপা হননি তিনি।

আবে উত্তরসূরী কে হবেন?

পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও পরবর্তী উত্তরসূরী নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে হবে শিনজো আবে’কে। তিনি নিজেও বলেছেন, সে পর্যন্ত তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

বিজ্ঞাপন

শিনজো আবে পদত্যাগ করায় নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতাসীন এলডিপি পার্টিতে অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে তার বিকল্প একজনকে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে। সংবাদ সংস্থা কিয়োডো জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার এই নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এলডিপি পার্টি। নির্বাচন আয়োজনের পর বিজয়ী প্রার্থীকে সংসদীয় ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে হবে।

শিনজো আবে’র উত্তরসূরী হিসেবে এই মুহূর্তে আলোচনায় আছেন জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী তারো আসো, প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা, এলডিপি পার্টির নীতি বিষয়ক প্রধান ফুমিও কিশিদা। এর মধ্যে তারো আসো’কে নিয়ে ‍গুঞ্জন বেশি হলেও কিশিদা আবার আবে’র পছন্দের প্রার্থী বলে প্রচলিত আছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যিনিই আবে’র স্থলাভিষিক্ত হবেন না কেন, তাতে করে সরকারের বর্তমান নীতির তেমন একটা হেরফের হবে না।

পার্টি প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যিনি নির্বাচিত হবেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবে’র অসমাপ্ত মেয়াদে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন