বিজ্ঞাপন

‘করোনার সঙ্গে সমন্বয় করেই জীবন-জীবিকা চালাতে হবে’

August 31, 2020 | 12:14 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: খুব শিগগিরই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ কমছে না। বরং করোনাভাইরাস আমাদের সঙ্গে আজীবন থাকবে— এটা ধরে নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। করোনার সঙ্গে সমন্বয় করেই আমাদের জীবন ও জীবিকা পরিচালনা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০ আগস্ট) রাতে সেন্টার ফর সোস্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিচার্স ফাউন্ডেশনের (সিসার্ফ) উদ্যোগে ‘সারাবাংলা লাইটহাউজ’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত এই আয়োজনের এ পর্বের বিষয় ছিল ‘করোনার অর্থকাল’। শবনম আযীমের উপস্থাপনায় আলোচনায় অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান।

অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমার একটা ধারণা ছিল, এইটা (করোনা সংক্রমণ) হয়তো খুব শিগগিরই কমে যাবে বা কমার প্রবণতা দেখা যাবে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা কোনো সুখবর পাচ্ছি না। আবার অর্থনৈতিক দিক থেকেও কোনো সুখবর পাচ্ছি না। বিশেষ করে এখন সারাবিশ্বের অর্থনীতি এতটাই ইন্টিগ্রেটেড যে যেকোনো প্রান্তের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব সবখানে পড়ে। সেদিক থেকে সুখবর আসলে কোথাও নেই।

বাংলাদেশের অর্থনীতির কথা তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, সত্যি কথা বললে আমার মধ্যে এখন ভীতি আছে। এই ভীতির আরেকটি কারণ হলো, গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে অর্থনীতি সুন্দর একটি অবস্থায় ছিল। প্রতিনিয়তই অর্থনীতির আকার বাড়ছিল। এই ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্তও একটানা বাড়ছিল। কিন্তু সেখানে প্রভাব পড়েছে। সেই তাল বা ছন্দ কেটে গেছে। সব মিলিয়ে সার্বিকভাবেই এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যেও দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে স্বস্তি জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এতকিছুর মধ্যেও একটি বিষয়ে স্বস্তি আছে যে আমাদের অর্থনীতিটা কৃষিনির্ভর। করোনায় কৃষি অতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যে কারণে সবকিছু চলে গেলেও অন্তত আমরা নুন-পানি দিয়ে ভাতটা খেয়ে শুয়ে পড়তে পারব। উন্নত দেশগুলো তো এমন একটি অবস্থানে পৌঁছে গেছে যে তাদের পানিটা পর্যন্ত আমদানি করে নিতে হয়। ওই জায়গা থেকে আমরা অন্তত অতটা খারাপ অবস্থানে নেই। তাছাড়া ঝড় হলে বড় গাছপালা ভেঙে পড়ে। ঘাসের কিন্তু তেমন কিছু হয় না। আমাদের অর্থনীতি কিন্তু এখনো ওদের বিচারে অনেক নিচের ধাপে। তাই ইন্টারকানেক্টেড হলেও ওদের ওপরে যতটা প্রভাব পড়েছে, আমাদের ওপরে ততটা প্রভাব পড়েনি।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের করোনার ছোবল থেকে বাঁচতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। একইসঙ্গে অর্থনীতির চাকাও সচল রাখতে হবে। করোনা আমাদের সঙ্গে আজীবন থাকবে। এ থেকে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে। করোনার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। অর্থনীতি ও জীবনধারণের গতির মধ্যে সমন্বয় করে চলতে হবে।

আলোচনায় স্বচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, আমরা সবাই এটা উপলব্ধি করতে পারছি যে করোনা থেকে সহসাই আমাদের মুক্তি নেই। এর অনেকটাই নির্ভর করছে ভ্যাকসিনের ওপর। আমরা সবাই আসলে ভ্যাকসিনের দিকে চেয়ে আছি। কিন্তু বিশ্বের অন্তত ৮০ শাতংশ মানুষের জন্য দুইটি করে ডোজ নিশ্চিত করাটা কত স্বল্প সময়ের মধ্যে করা যাবে, সেটা কিন্তু বড় একটি প্রশ্ন। ফলে আমাদের মেনে নিতে হবে, করোনার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। ওইভাবেই নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ডা. আর্সলান বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী যে কথাটি বলেছেন, আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর— এটি কিছুটা হলেও স্বস্তির কথা। কারণ এই খাতটি অন্যান্য খাতের মতো অতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যেমন আমাদের তৈরি পোশাক খাকে অনেক বড় প্রভাব পড়েছে, যদিও তারাও এখন অর্ডার পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই অর্থনীতিকে সচল রাখা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্যেকার সমন্বয়টা আমরা অনেকখানি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করেছি। তারপরও আমি মনে করি, কোনো না কোনোভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেছে। কিন্তু সামনের দিনগুলোর কথা খেয়াল রাখতে হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ। এই অবস্থায় করোনার সঙ্গে বসবাসের জন্য আমাদের নিজেদের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর সেই উপযুক্ততা হলো সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। সেটি করেই আমাদের অর্থনীতিতে সচল রাখার পথ বের করে নিতে হবে।

স্বাচিপ সভাপতি বলেন, পোশাক খাত কাজে ফিরেছে। তাদের ওখানে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি খেয়াল করা হচ্ছে। ১ তারিখ (১ সেপ্টেম্বর) থেকে আমাদের গণপরিবহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে শুরু করবে। সেখানে যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধিটা অনুসরণ করতে পারি, এরকম অন্যান্য স্থানেও যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হয়, তাহলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে। আর তা যদি না করতে পারি, তাহলে কিন্তু সংক্রমণের গতি বাড়বে। এখানে একটু বলে রাখতে চাই, আমরা আমাদের হেলথ ম্যানেজারদের মধ্যে যে আত্মতুষ্টি বা আত্মতৃপ্তি দেখতে পাচ্ছি, আমি মনে করি না আমরা সেখানে পৌঁছে গেছি। তাই আমাদের এখনো সতর্কতার সর্বোচ্চ অবস্থানেই থাকতে হবে।

ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে ডা. ইকবাল আর্সলান আরও বলেন, বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের জন্য ৩৪ কোটি ভ্যাকসিন লাগবে। সেটা সল্প সময়ের মধ্যে বিনা পয়সায় পাওয়াটায় বড় বিষয়। বিশ্ববাজারে করোনার ভাইরাসের ওষুধ সর্বনিম্ন ৩ ডলার থেকে ৪৫ ডলার পর্যন্ত দাম রাখা হচ্ছে। ভ্যাকসিন কেনাবেচার মধ্যেও রাজনীতি ঢুকে গেছে। আমাদের দেশে বড় বড় ব্যবসায়িকরাও শুরু করেছেন। তাই এটা নিয়ে সরকারকে এখন থেকেই কাজ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এআই/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন