বিজ্ঞাপন

‘রত্ন’ হারিয়ে শোকস্তব্ধ ভারত

August 31, 2020 | 10:05 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাজনীতিবিদ হিসেবে দীর্ঘ পাঁচ দশকের ক্যারিয়ার। কংগ্রেসের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ খেতাব জুটেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক বাঁকবদল শক্ত হাতে সামাল দেওয়ার সক্ষমতার কারণে। তবে কেবল দলীয় পরিচয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি নিজেকে। ছিলেন না কেবল ‘বাঙালি’ও। প্রণব মুখার্জি হয়ে উঠেছিলেন সর্বভারতীয়। ভারতরত্ন খেতাবে ভূষিত প্রণব ছিলেন সত্যিকার অর্থে ভারতের ‘রত্ন’। আর তাই তার প্রয়াণের সংবাদে শোকস্তব্ধ গোটা ভারত।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩১ আগস্ট) দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতের বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন তো বটেই, সব শ্রেণিপেশার মানুষ তার মৃত্যুর সংবাদে শোকাহত। ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার-ফেসবুকের ফিড এখন প্রণবময়।

প্রণবের ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি সোমবার সন্ধ্যায় এক টুইটে বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানান সবাইকে। তিনি লিখেন, বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সবাইকে জানাচ্ছি— হাসপাতালে টিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এবং গোটা ভারতের সব মানুষের সবার দোয়া ও প্রার্থনাকে অতিক্রম করে আমার বাবা প্রণব মুখার্জি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার পাশে থাকার জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

প্রণবের মৃত্যুকে ‘একটি যুগের অবসান’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি পদে তার উত্তরসূরী রাম নাথ কোবিন্দ। সিরিজ টুইটে তিনি লিখেছেন, প্রণব মুখার্জি ছিলেন তার জীবনের চেয়েও বড় একজন মানুষ। একজন ঋষির পাণ্ডিত্য দিয়ে তিনি ভারতমাতাকে সেবা দিয়েছেন। জাতি তার অন্যতম যোগ্য একজন সন্তানকে হারিয়ে আজ শোকাতুর। তার পরিবার, স্বজন ও সকল ভারতীয় নাগরিকের প্রতি আমার সমবেদনা।

ভারতের রাষ্ট্রপতি আরও লিখেছেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও জ্ঞানের বিশেষ গুণের অধিকারী, ভারতরত্ন শ্রী মুখোপাধ্যায় ছিলেন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক মূর্ত প্রতীক। দীর্ঘ পাঁচ দশকের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তার। যত বড় দায়িত্বেই থাকুন না কেন, তিনি সবসময় থাকতেন শেকড়ের কাছাকাছি। নিজেদের সব ধরনের রাজনৈতিক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

“‘ফার্স্ট সিটিজেন’ হিসেবেও তিনি প্রত্যেকের সঙ্গে সংযোগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছিলেন, রাষ্ট্রপতি ভবনকে জনগণের আরও কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। জনগণের জন্য তার দরজা তিনি অবারিত করে দিয়েছিলেন,”— লিখেছেন কোবিন্দ।

ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেনকাইয়া নাইড়ু লিখেছেন, জাতি আজ তার অগ্রজ একজন রাষ্ট্রনায়ককে হারালো। কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি তৃণমূল থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন হয়েছিলেন। কর্মজীবনে তিনি যখন যে পদেই ছিলেন, সেই পদের জন্য তিনি মর্যাদা বয়ে এনেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রণব মুখার্জির প্রয়াণে সিরিজ টুইটের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তিনি লিখেছেন ভারতরত্ন শ্রী প্রণব মুখার্জির প্রয়াণে ভারত শোকে মূহ্যমান। তিনি জাতির উন্নয়নের ধারাকে অনপনেয় স্থানে উন্নীত করেছেন। উৎকর্ষের শিখড়ে পৌঁছানো একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত ও একজন গৌরবময় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সব ধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে ছিলেন প্রশংসনীয় একজন ব্যক্তি।

মোদি লিখেছেন, দশকের পর দশক বিস্তৃত রাজনৈতিক জীবনে প্রণব মুখার্জি অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়গুলোতে দীর্ঘস্থায়ী অবদান রেখে গেছেন। অনন্য একজন পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তিনি ছিলেন সদাপ্রস্তুত, অত্যন্ত বাগ্মী এবং বুদ্ধিদীপ্ত। ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে সাধারণ নাগরিকদের প্রবেশের সুযোগ অবারিত করেছিলেন প্রণব মুখার্জি। রাষ্ট্রপতি ভবনকে তিনি শিক্ষা, উদ্ভাবন, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছিলেন। বিভিন্ন নীতিগত বিষয়ে তার বিজ্ঞ পরামর্শ কখনোই ভুলতে পারব না।

প্রণব মুখার্জির সঙ্গে স্মৃতি তুলে ধরে মোদি আরও লিখেছেন, ২০১৪ সালে (প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময়) আমি দিল্লিতে ছিলাম নতুন। প্রথম দিন থেকেই প্রণব মুখার্জির নির্দেশনা, সমর্থন ও আশীর্বাদ পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তার সঙ্গে আমার সংযোগগুলোকে আমি সবসময় লালন করে থাকি। তার পরিবার, স্বজন এবং ভারতজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তার শুভানুধ্যায়ী ও সমর্থকদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। শান্তিতে থাকবেন।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লিখেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখার্জির প্রয়াণে গভীরভাবে বেদনাহত। অত্যন্ত অভিজ্ঞ একজন নেতা ছিলেন তিনি, যিনি সর্বোচ্চ আত্মনিবেদনের সঙ্গে তার ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রণব দা’র অসামান্য ক্যারিয়ার গোটা জাতির জন্য গৌরবের। তিনি আরও লিখেছেন, তার মৃত্যুতে ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা পূরণ হওয়ার নয়।

প্রণব মুখার্জির মৃত্যুকে ‘একটি যুগের অবসান’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রণব মুখার্জির তার সম্পর্ককে বাবা-মেয়ের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।

মমতা লিখেছেন, গভীর দুঃখের সঙ্গে আজ লিখতে হচ্ছে যে ভারতরত্ন প্রণব মুখার্জি আর আমাদের মাছে নেই। আমার প্রথম সংসদ সদস্য হওয়া, মন্ত্রিসভায় জ্যেষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে তাকে পাওয়া থেকে শুরু করে আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় তার রাষ্ট্রপতির পদে থাকা— দশকের পর দশক ধরে তিনি আমার কাছে পিতার মতো ছিলেন। তার সঙ্গে হাজারও স্মৃতি। প্রণব দা নেই অথচ দিল্লি সফরে যাব, এটা চিন্তাই করতে পারি না। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি— সব বিষয়েই তিনি একজন কিংবদন্তী। তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। সবসময় তার অভাব বোধ করব। অভিজিৎ ও শর্মিষ্ঠার (প্রণব মুখার্জির দুই সন্তান) প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।

ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রেসিডেন্ট জে পি নাদ্দা টুইটে লিখেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রনায়ক প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে বেদনাহত। তিনি নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার সঙ্গে দেশমাতৃকার সেবা করেছেন। বুদ্ধিমত্তা ও অধ্যাবসায়ের জন্য তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে প্রশংসিত ছিলেন।

কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধি টুইটে লিখেছেন, অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে আজ জাতিকে আমাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হয়েছে। গোটা ভারতের সঙ্গে আমিও তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তার পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

আরএসএস প্রধান মোহন ভগত লিখেছেন, রাজনৈতিক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে প্রণব মুখার্জি সবসময় জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতেন। তিনি আমাদের কাছে ছিলেন একজন পথনির্দেশকের মতো। আমরাও ছিলাম তার স্নেহধন্য। তার প্রয়াণ আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

সাবেক কূটনীতিক এবং কেরালার লেখক ও রাজনীতিবিদ শশী থারুর লিখেছেন, মাত্র কয়েকমাস আগেই আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় প্রণব দা’র সঙ্গে একই মঞ্চে ওঠার সৌভাগ্য হয়েছিল। তাকে বেশ সুস্থ মনে হচ্ছিল। তিনি তার মতো করে অনন্য ভঙ্গিমাতেই বক্তব্য রাখছেন। তাকে হারানো কেবল রাজনৈতিকভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবেও একটি বড় ক্ষতি। একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং পথনির্দেশকের প্রয়াণ ঘটলো।

এছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মন্ত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিগোষ্ঠীর মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রণব মুখার্জিকে। বাদ যাননি বলিউড তারকা, ভারতের ক্রীড়াজগতের বর্তমান খেলোয়াড় ও সাবেক কিংবদন্তীরাও। সে তালিকায় রয়েছেন বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার, শহীদ কাপুর, কঙ্গনা রনৌত থেকে শুরু করে ক্রিকেট মায়েস্ত্রো শচিন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলিও।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন