বিজ্ঞাপন

জিয়া পরিবারে সবার হাতেই রক্তের দাগ: শেখ হাসিনা

September 1, 2020 | 2:23 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তাদের সন্তান— সবার হাতেই রক্তের দাগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, জিয়া, জিয়ার স্ত্রী, জিয়ার ছেলে— সবগুলোর হাতেই রক্তের দাগ। তারা এভাবেই রাজনীতি করেছে। গুণ্ডামি, অত্যাচার আর খুনের রাজত্বই তারা কায়েম করতে চেয়েছিল। তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল ভোগের বস্তু। আর আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে একটা দায়িত্ব— দেশের জনগণের জন্য, দেশের মানুষের জন্য।

সোমবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের এই সাংগঠনিক নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন- ‘জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলো, দেশকে কিছু দিতে পারবে’

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এছাড়া ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। সভার শুরুতে জাতির সব শহিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া ছাত্রলীগের প্রকাশনা মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

আলোচনায় জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম, আন্দোলন ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের এগিয়ে চলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পঁচাত্তরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে। কিন্তু তাই বলে একটা গোটা পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে? মাত্র ১৫ দিন আগে আমি ও রেহানা বিদেশে গিয়েছিলাম। দুই মাসের জন্য যাওয়া। তারপর একদিন শুনলাম— আমাদের কেউ নেই, আমরা নিঃস্ব। সব শেষ আমাদের। বিদেশে আমাদেরকে রিফিউজি হিসাবে থাকতে হলো। ছয়টা বছর পর যখন আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করলো, আমি ফিরে এলাম। অনেক বাধা অতিক্রম করে আসতে হয়েছে। আমি আসার পর জিয়াউর রহমান কিন্তু ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমি যে ৩২ নম্বরে মিলাদ পড়ব বা দোয়া করব— সেটাও করতে দেয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিএনপি যতই গলাবাজি করুক, সত্যকে তারা চাপা দেবে কিভাবে? কর্নেল ফারুক আর রশিদ তো বিবিসি’র অ্যান্থনি মাসকারেনহাসকে ইন্টারভিউ দিয়েছে। সেখানে তারা নিজেরাই বলেছে— জিয়া তাদের সঙ্গে ছিল। জিয়া তাদের এগিয়ে যেতে বলেছে এবং জিয়া তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। কাজেই এখন এটা আর অস্বীকার করতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- তোমরা আগামী প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত— ছাত্রলীগকে শেখ হাসিনা

জিয়াউর রহমান ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ছাত্রসমাজের হাতে অস্ত্র-অর্থ তুলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, এভাবে ছাত্রসমাজকে পর্যন্ত ধ্বংস করেছে তারা। বহু মেধাবী ছাত্র ছিল। হাতে অস্ত্র অর্থ তুলে দিয়ে তাদের বিপথে ঠেলে দিয়েছে। একটা জাতিকে ধ্বংস করার যা যা দরকার, তাই করে গিয়েছিল। ঠিক একই চিত্র আমরা দেখেছি খালেদা জিয়ার আমলেও। সে ধমক দিলো— আওয়ামী লীগকে সোজা করতে নাকি ছাত্রদলই যথেষ্ট। তারা ছাত্রদলের হাতে অর্থ-অস্ত্র তুলে দিয়েছে, আর আমি ছাত্রলীগের হাতে তুলে দিয়েছিলাম খাতা-কলম। ছাত্রদের পড়ালেখা করতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে উঠতে হবে।

গুম-খুন নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, এই গুম-খুন শুরু করেছে কে? এ তো জিয়াউর রহমানই শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর অফিসাররা ছুটিতে ছিল। তাদের মেরে ফেলে দিয়েছে। তাদের পরিবার লাশও পায়নি। এভাবে সারাদেশকে তারা রক্তাক্ত করেছে শুধু ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য। একই চরিত্র দেখি খালেদা জিয়ারও। একের পর এক হত্যাকাণ্ড। অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দিয়ে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান, পুরস্কৃত করেছিল। আর খালেদা জিয়া অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে যাদের দিয়ে এরকম মানুষ হত্যা করেছে, তাদের আবার ইনডেমনিটি দিয়েছে, পুরস্কৃত করেছে। কাজেই জিয়া, জিয়ার স্ত্রী, জিয়ার ছেলে— সবার হাতেই রক্তের দাগ এবং তারা এভাবেই রাজনীতি করেছে। শিক্ষা-দীক্ষা তো নেই, শুধু এই ‍গুণ্ডামি, অত্যাচার আর খুনের রাজত্বই তারা কায়েম করতে চেয়েছিল।

জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পেছনের পরিকল্পনাকারীদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের আমরা বিচার করেছি। হত্যাকারীদের বিচারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যে ন্যায় বিচার হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি। এখনো কিছু আসামি পলাতক আছে। কিন্তু তারপরও সে হত্যকারীদের বিচার করেছি। হ্যাঁ, এটা ঠিক— ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, হয়তো সেসব বিষয় এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ইতিহাস একদিন বেরুবে, এসব খবরও বেরুবে। এটা একসময় বের হয়ে আসবেই।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের করণীয় তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি বলব— রাজনীতি যারা করবে, তাদের ভেতরে যদি দেশপ্রেম না থাকে আর দেশের মানুষের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের মনোভাব না থাকে, তাহলে এই নেতৃত্ব কাজের নয়। হ্যাঁ, অল্প সময়ের জন্য বেশ জ্বলে ওঠা যায়, কিন্তু ওটা আবার নিভেও যায়। সেটা মানুষকে কিছু দিতে পারে না। আর মানুষকে কিছু দিতে গেলে নিজের কথা ভুলতে হবে। দেশের মানুষের কথা ভাবতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। কী পেলাম কী পেলাম না, মূল্যায়ন হলো কি হলো না— এসব কথা চিন্তা করলে মানুষের জন্য কিছু করা যায় না। কিন্তু মানুষের জন্য কাজ করলে একদিন না একদিন অবশ্যই মূল্যায়ন হয়। জাতির পিতা যেমন কখনো কোনোদিন পেছনে ফিরে তাকাননি, শুধু কাজ করে গেছেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন