বিজ্ঞাপন

আগস্টে প্রতিদিন সড়কে গড়ে ১০ দুর্ঘটনা, মৃত্যু গড়ে ১২ জনের

September 3, 2020 | 4:26 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গত আগস্ট মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩০২টি। নিহত ৩৭৯ জন এবং আহত ৩৬৮ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৬, শিশু ৩২। গড় হিসাবে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ১০টি। আর প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন গড়ে ১২ জন। এ মাসে ১৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত, ৩২ জন আহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ছয়টি পৃথক রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ জন।

বিজ্ঞাপন

এককভাবে সড়ক ‍দুর্ঘটনার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। এই মাসে ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১২৯ জন মারা গেছেন। সে হিসাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা মোট দুর্ঘটনার ৪০ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার মোট দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ৩৪ দশমিক ০৩ শতাংশ। এদিকে, দুর্ঘটনায় ৮১ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৭ জন, মোট নিহতের ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে আগস্ট মাসের এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় ৪৬ জন ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যাত্রী, ১৬ জন বাস যাত্রী, আট জন ট্রাক যাত্রী, ১৫ জন পিকআপ যাত্রী, তিন জন কাভার্ড ভ্যান যাত্রী, ১৩ জন মাইক্রোবাস যাত্রী, ১৭ জন প্রাইভেটকার যাত্রী, তিন জন ট্রলি যাত্রী, একজন লরি যাত্রী, দুই জন ট্রাক্টর যাত্রী, একজন জিপ যাত্রী, ১০ জন সিএনজি যাত্রী, ২১ জন নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্রা যাত্রী, ছয় জন রিকশা যাত্রী, তিন জন লেগুনা যাত্রী এবং চার জন বাইসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে শিক্ষক ১১ জন, চিত্রশিল্পী ১ জন, পর্বতারোহী ১ জন, পুলিশ সদস্য ১ জন, গ্রাম পুলিশ ১ জন, বিমান বাহিনীর কর্মচারী ১ জন, পল্লী বিদ্যুতে চাকরিজীবি ১ জন, স্কুল প্রহরী ১ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৩ জন, ঔষধ ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ৯ জন, রাজমিস্ত্রী-কাঠমিস্ত্রী ২ জন, মিল শ্রমিক ২ জন, পোশাক শ্রমিক ৮ জন, মাছ-সবজি ও গরু ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ী ২৯ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ২ জন এবং শিক্ষার্থী ৫৮ জন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন ও ঢাকা কলেজের ১ জনসহ)। ফরিদপুর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজ কর্মএলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১১৩ টি (৩৭.৪১%) জাতীয় মহাসড়কে, ৯৮ টি (৩২.৪৫%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩ টি (১৭.৫৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (১২.৫৮%)শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাসমূহের ৭৬ টি (২৫.১৬%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮৭ টি (২৮.৮০%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৮৩ টি (২৭.৪৮%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪৪ টি (১৪.৫৬%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১২ টি (৩.৯৭%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২০.৮৯ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৩.৯১ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-এ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৬.৫২ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৪.১৭ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৩.৬৯ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-লেগুনা) ১৬.৬০ শতাংশ,
নসিমন-পাখিভ্যান-অটোভ্যান-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র ১০.৬৩ শতাংশ, রিকশা, বাই-সাইকেল ২.৭৯ শতাংশ এবং অন্যান্য (ড্রাম ট্রাক, রোড রোলার, লাটা হাম্বার, কনস্ট্রাকশন মিকচার মেশিন) ০.৭৪ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৩৬ টি। (ট্রাক ৭২, বাস ৭৬, কাভার্ডভ্যান ১৬, পিকআপ ২৪, লরি ৭, ট্রলি ৬, ট্রাক্টর ৮, মাইক্রোবাস ১২, প্রাইভেটকার ১৭, এ্যাম্বুলেন্স ৪, জীপ ২, ড্রাম ট্রাক ১, রোড রোলার ১, লাটা হাম্বার ১, কনস্ট্রাকশন মিকচার মেশিন ১, মোটরসাইকেল ১২৭, বাই-সাইকেল ৪, নসিমন-পাখিভ্যান-অটোভ্যান ২৫, ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র ৩২, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-লেগুনা ৮৯ এবং রিকশা ১১টি।

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.৩০%, সকালে ৩০.১৩%, দুপুরে ২২.১৮%, বিকালে ১৯.৫৩%, সন্ধ্যায় ১০.৯২% এবং রাতে ১২.৯১%।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৭৩ টি দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪ জন। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ২২ টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জন। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৬ টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত। সবচেয়ে কম মুন্সিগঞ্জে। ১ টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বিজ্ঞাপন

গত জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে। জুলাই মাসে ২৯৩টি দুর্ঘটনায় ৩৫৬ জন নিহত হয়েছিলেন। এই হিসাবে আগস্ট মাসে দুর্ঘটনা ৩.০৭% এবং প্রাণহানি ৬.৪৬% বেড়েছে।

দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ২৭৩ জন, অর্থাৎ ৭২%। আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কের তুলনায় জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বাড়ছে। জাতীয় মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং মোটরসাইকেল ও স্বল্পগতির যানবাহনের অবাধ চলাচল এ জন্য দায়ী।

সারাবাংলা/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন