বিজ্ঞাপন

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়া অনন্য ঘটনা : সিপিডি

March 10, 2018 | 7:55 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হচ্ছে, এটা সাম্প্রতিক উন্নয়ন ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। কারণ এর আগে যে সমস্ত দেশ এই স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে বের হয়েছে তারা অত্যন্ত ছোট ছোট দেশ ছিল। তাদের জনসংখ্যা ও উৎপাদনের পরিমাণও কম ছিল।

শনিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনার শেষে সিপিডির সিনিয়র রিচার্স ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের সেমিনারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের ভেতরে ‍যদি স্থিতিশীলতা না থাকে, দেশের ভেতরে যদি ঐক্যবোধ না থাকে, তাহলে এই উত্তরণটাকে আমরা একটি সুফল হিসেবে, সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাব।

বিজ্ঞাপন

‘স্বল্পোন্নত তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ: কী পাবো কী হারাবো’ শীর্ষক সেমিনারের তিনটি সেশনে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সেমনিারে বক্তব্য রাখেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক প্রমুখ।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে ইতোমধ্যে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে গেছে। বাংলাদেশ এখন এসডিজি বা বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে এবং একটা উন্নত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই রকম একটা পর্যায়ে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়াটা বাংলাদেশকে এক ধরণের নতুন ত্বরণ দেবে। নতুন সুযোগ করে দেবে।’

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটলে প্রায় সব দেশেই প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক সাহায্যের পতন ঘটে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর ফলে তাদের যে আর্থিক ব্যবস্থাপনা তার ওপর নতু চাপ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যদি কর আদায়ের পরিমাণ না বাড়তে পারে।’

বিজ্ঞাপন

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অন্যদেশগুলো এই সময়কালে অনেক বেশি প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে। প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আগামী দিনে সফল হবে কী-না সেটি এখন দেখার বিষয়। তিনি বলেন, যে জিনিসিটা সামনে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আসবে, সেটি হলো বাংলাদেশ আগে যে রেয়াতি সুবিধা পেত, বৈদেশিক সাহায্যে পেত। সেখান থেকে বের হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ যদিও প্রক্রিয়াকরণ খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং রপ্তানি বাড়ছে। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি একটিমাত্র পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। অপরদিকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ খাতে শ্রমের উৎপাদনশীলতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা রয়েছে। সেই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের কীভাবে আগামী দিনে নেওয়া হবে সেটা একটা বড় বিষয়। সবচেয়ে বড় বিষয় বাংলাদেশ যখনই উত্তরণের দিকে যাচ্ছে, তখন বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি কিন্তু অনুকূলে না। বাংলাদেশে যে বৈষ্যম্য বাড়ছে এবং নারীর প্রতি যে বৈষম্য রয়েছে। ছোট ছোট জনগোষ্ঠি রয়েছে তাদের ওপর যে বৈষ্যম্য আছে। এগুলো নিয়ে যদি কৌশল তৈরি না হয়। তাহলে কিন্তু এই উত্তরণের সুফল থেকে সবাই সুখি হতে পারবে বলে মনে হয় না।

স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণের পর নতুন চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষি থেকে যে জনগোষ্ঠিকে আমরা ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো তারা যেন উৎপাদনশীল শ্রমে নিয়োজিত হতে পারে। স্বল্পমূল্যে শ্রম নিয়োগ করে বাংলাদেশ যে শিল্প গড়ে উঠেছে। আগামী দিনে তা টেকসই হবে বলে আমাদের মনে হয় না।’

বিজ্ঞাপন

কাগজেপত্রে আমরা ২০২১ সালে আমরা বিভিন্ন সূচক অর্জন করবো। কিন্তু আমাদের আরো তিন তিন আরো ছয় বছর পর্যবেক্ষণে রেখে দিবে। যাতে গড়িয়ে আবার পিছনে যায় কী-না। সেই ৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। অনুষ্ঠানিকভাবে এই তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য। বাংলাদেশ সূচকগুলো অর্জন করবে এই বছর। কিন্তু ৬ বছর পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

তিনি আরও বলেন, জিএসপি এখন শুধু আয়ের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয় না। আরও অনেক দিক বিবেচনা করা হয়, মানবাধিকার এবং শ্রমঅধিকার এগুলো একটা বড় বিষয়। এগুলো থাকলে পরে জিএসপি প্লাস আমরা ২০২৪ সালের  পরেও তিন বছরতো পাবই। তারপরেও আরও ৬ বছর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুল্কের যে তারতম্য সেগুলোর ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। এগুলোর প্রয়োজনীয়তাও আমাদেও কমে যাবে। ফলে এই দশ বছর কিভাবে আমরা প্রস্তুতি নেয় প্রতিযোগীতার সক্ষমতা বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়ন উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এগুলো বিষয় রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘আমাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে গুণগত বিনিয়োগ, প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। তবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জা আজিজ বলেন, আমাদের বিনয়োগ বাড়াতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ এক বছর ধরে স্থির হয়ে আছে। এফডিআইর বাড়াতে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়েল প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণে বৈদেশিক ঋণে সুদের হার বাড়বে। আগামী দুই-এক বছরেই সুদের হার আরও ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে। তবে এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি ঋণ পাওয়ার সুযোগ পাবে। তবে এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর পরারাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে আমাদের গুণগতমান বাড়বে। তবে আমাদের জন্য সুশাসন একটি বড় ইস্যু। আমাদের দুর্নীতি কমাতে হবে। যদিও কোনো দেশ একেবারেই দুর্নীতিমুক্ত নয়। চলমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখাও আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসরাণের পক্ষে মত দেন তিনি।

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, উন্নয়নে আমাদের বিশ্ব অর্থনৈতিক বিষয়ের পাশাপাশি বিশ্ব রাজনৈতিক বিষয়ের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। এ কারণে বিশ্ব রাজনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করছে তারাই অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আঞ্চলিক ফোরামগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের পাশাপাশি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা করতে পারে বলে ও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলে আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সিপ্পো বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির ৯০ শতাংশই আসে অগ্রাধিকার বাজার সুবিধার মাধ্যমে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তনি কমবে। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে। এর জন্য শক্তিশালী মানব সম্পদ তৈরি করতে হবে।

সারাবাংলা/জিএস/এমআই

 

 

 

 

 

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন