বিজ্ঞাপন

‘করোনার ধাক্কার পর অর্থনীতিতে রিকভারির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে’

September 6, 2020 | 11:38 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতির অনেক সূচক রয়েছে। করোনার প্রাথমিক ধাক্কার পর বর্তমানে আমরা অর্থনীতিতে একটা রিকভারির ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি। যেটা রফতানি, রেমিট্যান্স ও কৃষিখাত— সব জায়গায় ঘুরে দাঁড়ানোর ঈঙ্গিত বহন করছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ‘কোনদিকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সারাবাংলা’র বিশেষ আয়োজন  সারাবাংলা ফোকাসে অংশ নিয়ে ড. জাহিদ হোসেন এসব কথা বলেন। সারাবাংলা.নেট এর বিশেষ প্রতিনিধি এমএকে জিলানী সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম,  বিজিএমইএ‘র সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার মাঝেও অনেক নতুন নতুন পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ বলা চলে। বিশেষ করে পিপিই, মাস্ক, এপ্রোন, ভেন্টিলেটর ইত্যাদির প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য যে শিল্প থাকা দরকার তা হলো ফার্মাসিটিক্যালস এবং তৈরি পোশাক খাত। আমাদের এই দুইটি খাতই বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এই দুই খাতের মাধ্যমে আমরা উল্লেখিত পণ্যগুলো উৎপাদন করে সরবরাহ করতে পারি। সারাবিশ্বেই বর্তমানে এই পণ্যগুলোর চাহিদা রয়েছে এবং আগামি বেশ কয়েক বছর থাকবে। এমনকি ভ্যাকসিন আসলেও পিপিই, মাস্ক ভেন্টিলেটরের চাহিদা বন্ধ হবে না।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ৪০ শতাংশ কমবে। ২০২১ সালে সেটা আরও ১০ শতাংশের কমে যাবে। এমন ভবিষ্যৎবাণীর পরেও একটা সুখবর হলো চীন থেকে বিভিন্ন দেশ তাদের সরাসরি বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে। কারণ চীনে মজুরি বেড়ে গেছে। ফলে চীনে বিনিয়োগ করা জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। সেজন্য রি-লোকেশনের জন্য জাপান সরকার ভর্তুকিও দিচ্ছে। ইতোমধ্যে জাপানের বিনিয়োগকারীরা ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশকে তাদের বিনিয়োগের তালিকায় রেখেছে। এদিকে সরকার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি বিনিযোগের জন্য একটা সুযোগ দিয়েছে। জাপানী বিনিয়োগ আনার জন্য সরকারের আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। এটাকে যদি আমরা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, করোনা বিশ্ব অর্থনীতির তিনটি মৌলিক জায়গায় আঘাত করেছিলো। একটি হলো মোভিলিটি বা চলাচল, দ্বিতীয়টি অ্যাসেম্ভলিং বা সমাগমের ক্ষেত্রে এবং তৃতীয়টি হলো কনফিডেন্ট। এদের মধ্যে সমাগম কর্মক্ষেত্রে, হাটবাজার কিংবা দোকানপাট সবখানেই প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভোক্তা ও বিদেশী ক্রেতাদের একটা আস্থার ঘাটতিও তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে সেই অবস্থা নেই। এই সময়ে মানুষের মোভিলিটি বা চলাচল বেড়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক বিধিনিষেধে ছাড় দেয়া হয়েছে। মানুষের মাঝে এখন চলাচল করার পরিমাণ বেড়েছে। আস্থার ক্ষেত্রে যে ঘাটতি ছিল সেটাও কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। কাজেই বলা যায় দেশের অর্থনীতি কিছুটা উত্তোরনের পথে।

তিনি বলেন, গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্সে একটা অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। আবার আগষ্ট মাসে গত জুলাই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও এটা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। তবে করোনাকালে ৯৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। আবার অনেকেই ফেরত আসার অপেক্ষায় রয়েছে। যারা ফের এসেছেন তারা যদি তাদের সঞ্চয় নিয়ে আসেন এবং দেশে ফেরত আসার অপেক্ষায় থাকা প্রবাসীরা যদি তাদের সঞ্চয় পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন তাহলে রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে এই কারণগুলো রয়েছে।

তিনি বলেন, গত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে সারাবিশ্ব একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। করোনার সঙ্গে কীভাবে মোকাবেলা করবে তা নিয়েই সারাবিশ্ব আতঙ্কিত ছিল। ফলে ওই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিল। তবে মে, জুন ও জুলাই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কতটা বাড়বে কিংবা বাড়বে কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার কারণে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত যতটা নেমে গিয়েছিল এখন সেটা ৭০/৮০ শতাংশ পুনরুদ্ধার  হয়েছে। তবে তা করোনার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারেনি। অর্থনীতি কোন দিকে যাবে তা বলা যায় না। কারণ এখনও করোনাকাল কেটে যায়নি।

সারাবাংলা/জিএস/টিসি

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন