বিজ্ঞাপন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই হয়ে উঠতে পারে এক একটি মৃত্যুপুরী

September 8, 2020 | 8:41 pm

ইয়াহিয়া মিজানুর

চীনে করোনাভাইরাস জানুয়ারি মাস থেকে ছড়াতে থাকলেও আমাদের দেশে আক্রান্ত প্রথম রোগী  শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর সারাদেশে করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং একই সাথে চলে লকডাউন। গাড়ি চলাচল বন্ধ, ওষুধের দোকান এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ছাড়া সবই বন্ধ থাকে। বেশ কড়াকড়িভাবেই লকডাউন পালন করা হয় কিছুদিন।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস থেকে দেশের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হয় ১৭ ই মার্চ থেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্য দিয়ে এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া  উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এখন পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে। এর ফলে দেশের প্রায় ১২ লাখ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক প্রকার অনিশ্চয়তার মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। ১৭ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দফায় দফায় এ ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে পর্যাপ্ত ক্লাস না হওয়ায় সরকার এরই মধ্যে পিএসসি, জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বল্প সময়ের মাঝে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে নেওয়ার কথা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বারবার ঘোষণা করেছেন।

লকডাউন তুলে দেওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে দেশের সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।রাস্তায় গাড়ি চলছে, ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা এখন, অফিসগুলো চলছে ঘড়ির কাটার নিয়মে। এমন একটা পরিস্থিতিতে সকলের নজর এখন একদিকেই আর চোখে মুখে প্রশ্ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে কবে।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পূর্বে আমাদের সবার একবার আমাদের দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া উচিৎ। আমাদের দেশে প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে নিয়মিত যাতায়াত করেন যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।  আমাদের ক্লাস রুমগুলোতে এক প্রকার গাদাগাদি করে বসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করেন। এক একটি বেঞ্চে তিন, চার বা পাঁচজন করে বসে থাকেন। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করছেন। দেশের এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বাস, রিকশা বা পায়ে হেটে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস করে থাকেন। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে আসতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে সামাজিক স্বাস্থ্যবিধি যে মানা সম্ভব হবে না তা চোখ বন্ধ করে  বলে দেওয়া যায়। এছাড়াও এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করানোর সকল পরিকল্পনা যে মুখ থুবড়ে পড়বে তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রূপ নেবে করোনা সংক্রমণের নতুন জোন হিসাবে।

বিজ্ঞাপন

আইইডিসিআর এর বয়ঃভিত্তিক তথ্য বিভাজনে দেখা যায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যে শতকরা ৭-৮ শতাংশ স্কুলগামী বয়সের। এছাড়াও আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি এর যৌথভাবে পরিচালিত জরিপে দেখা যায় শতকরা ৪-৫ ভাগ শিশু সংক্রমিত হয়েছে। এছাড়াও লক্ষ্য করার বিষয় হলো আমাদের দেশের মোট প্রায় তিন লক্ষ্য করোনা আক্রান্ত রোগীর মাঝে শুধু আগস্ট মাসেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পঁচাত্তর হাজার। আগস্ট মাসে গড়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার রোগী নিয়ে এখন আমরা করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় ১৪ তম। সার্বিক দিক বিবেচনায় এই মুহূর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে উঠবে পুরো জাতির জন্য আত্মঘাতী।

 শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও চিন্তার বড় একটি জায়গা, শিক্ষার্থীদের আবাসন নিয়ে। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ধারণ ক্ষমতার বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। এছাড়াও যে সকল শিক্ষার্থীর হলে জায়গা হয়ে উঠে না তারা বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে ছয় সাত জন মিলে থাকেন। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক হলের সুবিধা থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সুবিধা একেবারেই নেই। দীর্ঘ পাঁচ মাসের ছুটির কারণে এ সকল শিক্ষার্থীরা তাদের ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাই হঠাৎ করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মানে হলো এই সকল শিক্ষার্থীকে খোলা আকাশের নীচে রাতে ঘুমিয়ে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে  ক্লাস করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সিদ্ধান্তের সাথে সাথে ভাবতে হবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, মানসিক এবং আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে।

করোনার এ সময়ে শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে সরকার এরই মাঝে সংসদ টেলিভিশনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য “ঘরে বসে শিখি” এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য “আমার ঘরে আমার স্কুল” অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে একঘেয়েমিতায় না ভোগেন তার জন্য এই প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবিদার।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করছেন এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একই পথে হাটার পরিকল্পনা করছেন।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ও আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি, আমাদের দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা বিচার বিশ্লেষণ করে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আমাদের আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। একই সাথে সরকার ও পরিবারগুলোর লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন দীর্ঘদিন ঘরে থাকার কারণে একঘেয়েমিতায় না ভোগেন।

করোনা পরিস্থিতিতে পড়াশোনা করে বিশাল বিদ্বান হওয়ার সময় এখন নয়, করোনা পরিস্থিতিতে বড় ব্যবসায়ী, চাকুরে হওয়ার সময় এখন নয়। এই সময়টা প্রাণপণে বেঁচে থাকার লড়াই করার সময়। হতাশা দুরে রেখে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুস্থ থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করার সময় এখন।

একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশ, জাতির কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার জন্য সারাটা জীবন সামনে রয়েছে। এই করোনাকালে সরকার ও পরিবারের উচিত শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে অভিযোজিত করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনযোগী করে তোলা। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা যাতে মনোবল হারিয়ে না ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। এবং করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী,  আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ। 

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন