বিজ্ঞাপন

এ্যামফিটামিনের গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া, প্রেরককে খুঁজছে অধিদফতর

September 10, 2020 | 6:36 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ইয়াবার চেয়ে শক্তিশালী মাদক এ্যামফিটামিন কোথায় থেকে কিভাবে বাংলাদেশে এসেছে তা জানতে না পারলেও গন্তব্য জানতে পেরেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমন্বিত অভিযানে জব্দ করা হয় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াগামী ১৪টি বড় প্যাকেট। সেখানে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের মাদক এ্যামফিটামিন জব্দ করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, এই মাদকসহ কোনো মাদকই বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। জব্দ মাদক এ্যামফিটামিন চোরাচালানের জন্য ঢাকা রুট হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও ইউরোপে বহুল ব্যবহৃত। এই মাদক কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশে এসেছে। যার গন্তব্য ছিল হংকং হয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। প্রাপক দাস সিং ৩৪ কলম্বিয়া রোড, মেলবোর্ন নারে ওয়ারেন লিআইসি ৩৮০৫। এই মাদকের চোরাচালানের পেছনে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদকদ্রব্য এ্যামফিটামিন পাউডার পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দিগ্ধ হিসেবে মোট ৬ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আটকরা হলেন বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অর্থ) খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ (৫০) ও সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) রাসেল মাহমুদ (৩২)। ইউনাইটেড এক্সপ্রেস এর জেনারেল ম্যানেজার গাজী শামসুল আলম (৪৩)। ইক্সপোর্ট কার্গোর ভেতরে এমজিএইচ গ্রুপের লোডিং সুপারভাইজার কাজল থুটোকিশ গোমেজ, কার্গো হেলপার বা লোডার মো. হামিদুল ইসলাম(৩০) ও মো. নজরুল ইসলাম এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সদর দফতরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার এ সব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, হয়রত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে রপ্তানি কার্গো ভিলেজে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্তৃক বাংলাদেশ বিমানের মাস্টার এয়ারওয়ে বিল নম্বর ৯৯৭-৬২৪৪-৯১৩৩ এর বিপরীতে রফতানিতব্য ৩৪০ কার্টন পণ্য এসেসমেন্ট এবং বিধি মোতাবেক দৈবচয়নের ভিত্তিতে কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধির উপিস্থিতিতে সিভিল এভিয়েশনের ডুয়েল ভিউ সিকিউরিটি স্ক্যানিং ৩৪০ কার্টন পণ্যের মধ্যে ৭ টি কার্টনে তল্লাশী করে জিন্সের প্যান্টের আড়ালে কার্টনের গায়ে ১৪টি বড় প্যাকেট ও ১৪টি ছোট প্যাকেটে মোট ২৮টি কার্বনের লেয়ার দ্বারা প্রস্তুতকৃত পাতলা এলুমিনিয়াম প্যাকেটে উদ্ধার করা হয়। সেখানে অভিনব কায়দায় লুকানো মোট ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম সন্দেহজনক দ্রব্য পাওয়া যায়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে নমুনা টেস্ট করে এ্যামফিটামিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ক’ তফশিলভুক্ত মাদক।

বিজ্ঞাপন

যে ৭ টি কার্টনে এ্যামফিটামিন পাওয়া যায় সেগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত রফতানি দলিলাদি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লি. (ফেডেক্স) এর মাস্টারওয়ে বিল নং ৮১৫১৫৬০২৪৬২৬ এর ৬ টি কার্টন এবং মাস্টার ওয়ে বিল নং ৮১৪৯২৬৯৫১৯৭০ এর ১ টি কার্টন মোট ৭টি কার্টনে শিপার এর নাম নেপচুন ফ্রেইট লি. বাড়ি ৫০১, রোড ১৪ কেরানীগঞ্জ।

এই সকল পণ্য রফতানির জন্য কাস্টমসের জন্য ম্যানুয়ালি বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করেছেন রফতানিকারকের পক্ষে মেসার্স ডিনামিক ট্রেডার্স (AIN:101-960728). বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লি. (Fedex) লোকাল এজেন্ট হল ইউনাইটেড এক্সপ্রেস, ১৬৭, সার্কুলার রোড, ঢাকা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ডিজি বলেন, জব্দকৃত এ্যামফিটামিন পাউডারের আনুমানিক কেজি প্রতি মূল্য দুই কোটি টাকা। সে হিসেবে জব্দকৃত ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম এ্যামফিটামিন পাউডারের প্রায় ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নেপচুন ফ্রেইট লি. এর উত্তরার আশকোনায় একটি অফিস রয়েছে এবং ওই অফিসের রুবেল হোসেন নামীয় এক ব্যক্তি ওই ৭ কার্টনে তৈরি পোশাক-জিন্সের প্যান্ট অস্টেলিয়ায় প্রেরণের জন্য ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেড এ বুকিং দিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

বনানীস্থ ইউনাইটেড ফ্রেইটের পরামর্শক্রমে ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মত নেপচুন ফ্রেইট লি. এর ওই ৭টি কার্টন গ্রহন করে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লি. কার্টনসমূহ বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিঃ (ফেডেক্স) এ প্রেরণ করে। ফেডেক্স তার হাব(HUB) এ সংরক্ষণ করে এবং কার্গো ভিলেজে প্রেরণ করে।

কার্গো ভিলেজে International air Transport association Gi MGH নামীয় কোম্পানীর Air Ops Team বর্ণিত কার্টনসমূহ কার্গো ভিলেজে হ্যান্ডল করে।

তিনি বলেন, মামলা দায়েরের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরে ব্যাপকভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এবং এই আন্তর্জাতিক পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর ক্ষেত্রে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় প্রদান করা হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ওপর নজরদারি রাখছি। কেউ যাতে কোনোভাবে মিথ্যে তথ্য দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে মাদকের চোরাচালান করতে না পারেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে অধিদফতরের পরিচালক(অপারেশন) ডিআইজি মাসুম রব্বানী বলেন, ‘এই মাদক বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। তবে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার ও চীন উৎপাদন করে থাকে। সেখান থেকে কোনো না কোনোভাবে এটি বাংলাদেশে আসতে পারে।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন