বিজ্ঞাপন

পুলিশের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ করে ফাঁসলেন বাদী

September 14, 2020 | 5:28 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি মামলায় আনা অভিযোগের প্রমাণ না পেয়ে বাদীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল, যা তদন্তে মিথ্যা মামলা হিসেবে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১-এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ‘মিথ্যা মামলা’র বাদী মো. নুরুল আবছারকে। নিজেকে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক পরিচয় দিয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

২০১৯ সালের ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি মামলাটি দায়ের করেছিলেন। এতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসি (ঘটনার সময় পতেঙ্গা থানায় ছিলেন) আবুল কাশেম ভূঁইয়া, পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রণয় প্রকাশ, এসআই (নিরস্ত্র) আবদুল মোমিন, এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, এএসআই কামরুজ্জামান ও এএসআই মিহির কান্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। একই মামলায় মো. ইলিয়াছ, মো. জসিম ও মো. নুরুল হুদা নামে আরও তিন জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, যারা স্থানীয়ভাবে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালের ১ জুন বিকেলে নগরীর পতেঙ্গা কাটগড় এলাকা থেকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা নুরুল আবছারকে তুলে ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়ার কাছে নিয়ে যান। সেখানে তার কাছ থেকে মোবাইল, গাড়ির চাবি ও টাকা-পয়সা কেড়ে নেন। এরপর তাকে আটকে রাখা হয়। পরদিন দুপুর পর্যন্ত নুরুল আবছারকে ইয়াবা ব্যবসায়ী অপবাদ দিয়ে আটকে রেখে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন পুলিশ সদস্যরা। পরে ১৫ লাখ টাকা তিনি এসআই কামরুজ্জামানের হাতে দেন। কিন্তু অবশিষ্ট ১৫ লাখ টাকা না দেওয়ার তাকে বিদেশি মদ উদ্ধারের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়। ২৯ জুলাই তিনি জেল থেকে জামিনে বের হন।

বিজ্ঞাপন

আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে অভিযোগের সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১-এর উপসহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এরপর মামলার বাদী মো. নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৮ (গ) ধারায় মামলা দায়ের করেছেন নুরুল ইসলাম। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়।

দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, নুরুল আবছার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, অভিযুক্তরা তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিল। এর মধ্যে তারা ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিল এবং বাকি ১৫ লাখ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু তদন্তে এ সংক্রান্ত কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভয়ভীতি দেখিয়ে মিথ্যা মাদকের মামলা দেওয়ারও কোনো রেকর্ডভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি অভিযুক্ত এসআই তরুণের সঙ্গে বাদীর শ্যালকের মোবাইলে কথোপকথনেরও কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। সার্বিক তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণে বাদীর অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি। এতে প্রতীয়মান হয়, নুরুল আবছার অসৎ উদ্দেশে, জেনেশুনে, ইচ্ছাকৃতভাবে হয়রানি করার কু-মানসে আদালতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

বিজ্ঞাপন

দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপসহকারী পরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আবছার নামে পতেঙ্গার এক ব্যক্তি ছয় জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে দুদক। কিন্তু তদন্তে অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। মিথ্যা মামলা প্রমাণ করে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করার এখতিয়ার দুদকের আইনে আছে। ওই আইনে নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া বর্তমানে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আবছার বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ছিলেন। বিচারাধীন মামলার একজন আসামি গ্রেফতার অভিযান পরিচালনাকারী অফিসার এবং তদন্ত কর্মকর্তাসহ ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন, যা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। শুধু হয়রানির উদ্দেশে তিনি এই মামলাটি করেছিলেন। আমাদের বিশ্বাস ছিল, আমরা সুবিচার পাব। অবশেষে দুদকের তদন্তের মাধ্যমে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন