বিজ্ঞাপন

সিরাজগঞ্জে বন্যায় সড়ক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ৬৭ কোটি টাকা

September 15, 2020 | 8:10 am

রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

সিরাজগঞ্জ: চলতি মৌসুমের বন্যায় সিরাজগঞ্জের সাতটি উপজেলার ২৭৪ কিলোমিটার সড়ক ও  ২০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার স্থানীয় সরকার অধিদফতর (এলজিইডি) ও জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য বলছে, এতে করে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

উজানের ঢলে গত ২৫ জুন থেকে যমুনা নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এরপর পর্যায়ক্রমে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া— অর্থাৎ জেলার সাতটি উপজেলাই প্লাবিত হয়। এই বন্যার কবলে পড়ে ৬০টি ইউনিয়ন। এতে করে একদিনে যেমন ব্রিজ-কালভার্টের সংযোগ সড়ক ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানে, তেমনি পানি উঠে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। এলজিইডি অফিস বলছে, সাত উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ২৭৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বন্যায়। আর যে ২০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-কলেজ ও মাদরাসা ১৪৫টি, বাকি ৬০টির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক বিদ্যালয়।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘চলতি বন্যায় জেলায় মোট ২৭৪ কিলোমিটার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনও সব জায়গা থেকে পানি না নামায় সম্পূর্ণ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এখনো যেহেতু পানি পুরোপুরি নেমে যায়নি, এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘বন্যার পানি নেমে গেলে এখন পর্যন্ত সড়কগুলোতে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে মেরামত বাবদ অন্তত ৬১ কোটি টাকা লাগবে। মেরামতের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’

সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ জানান, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় জেলার প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ২০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যে ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ছয় কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করেছি। সেগুলো সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কারে কাজ শুরু করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

বৃষ্টি কমলে নামবে পানি

এ বছর বেশ দীর্ঘ সময় ধরে বন্যার কবলে পড়ে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন সিরাজগঞ্জের সাত উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গত ২৫ ‍জুন থেকে যমুনার পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত হতে শুরু করে জেলার নিম্নাঞ্চল। তিন দিন পর ২৮ জুন সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর দুই পয়েন্টেই যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এরপর পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার নিচে নামলেও জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফের তা ওই সীমা অতিক্রম করে।

যমুনার পানির স্তরের হ্রাস-বৃদ্ধির সময়ক্রম তুলে ধরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ২৮ জুন সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর— উভয় পয়েন্টেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে পানি। এরপর ৪ জুলাই থেকে আবার তা কমতে শুরু করে। ৬ জুলাই বিপৎসীমার নিচে নেমে যায় যমুনার পানি। ৯ জুলাইয়ের পর ফের পানি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ১৩ জুলাই দ্বিতীয় দফায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে।

এই প্রকৌশলী আরও বলেন, টানা ২৫ দিন পর ৭ আগস্ট যমুনার পানি উভয় পয়েন্টেই বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। এরপর ১১ আগস্ট পর্যন্ত পানি কমলেও ১২ আগস্ট থেকে ফের বাড়তে শুরু করে পানি। ২০ আগস্ট পর্যন্ত পানি বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে আসে। তবে ২১ আগস্ট থেকে পানি কমতে শুরু করায় আর বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

বিজ্ঞাপন

‘১২ দিন ধরে পানি কমার পর ২ সেপ্টেম্বর ফের বাড়তে থাকে। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এখন যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভবনা নেই। বৃষ্টিপাত কমলেই দ্রুত গতিতে পানি কমবে,’— মন্তব্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের।

আরও পড়ুন:
সিরাজগঞ্জে বন্যার পানি কমেছে, ঘরে ফিরছে মানুষ
যমুনাপাড়ে ভাঙন আতঙ্ক, নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মানুষ
চলতি বন্যায় সিরাজগঞ্জে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ২৩ কোটি টাকা

সারাবাংলা/টিসি

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন