বিজ্ঞাপন

ডায়াবেটিস নিয়ে নিবেদিত স্টার্টআপ: ডা. ফাহরীনের ‘ঢাকা কাস্ট’

September 16, 2020 | 12:29 pm

ফারহানা হোসেন শাম্মু

‘কঠিনেরে ভালবাসিলাম’ কথাটির একটি আদর্শ উদাহরণ ঢাকা কাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার ফাহরীন। পেশায় ডেন্টিস্ট। চাইলেই মানুষের মুখটা হা করে দিনে হাজার হাজার হাজার টাকা আয় করতে পারতেন। স্কেলিং, ফিলিং, ক্যানেলিং, হোয়াইটেনিং আরও কত কি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু হুট করেই তার ১৫ ফুট বাই ১২ ফুটের চেম্বার থেকে মন উঠে গেলো। ইচ্ছে হল অনেক মানুষের জন্য বড় একটা স্বপ্ন নিয়ে কাজ করার। একটু আলাদা, একটু ব্যতিক্রম, কিন্তু বিস্তৃত।

খুব প্রাণখোলা তার গল্পটা। ইংরেজি কথা বলায় দক্ষতা বাড়াতে তখন সার্চ ইংলিশ নামে একটা স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানে নাম লেখান তিনি। সার্চ ইংলিশ গ্রামীণফোনের এক্সিলারেটর প্রোগ্রামের পঞ্চম ব্যাচ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছিল। সার্চ ইংলিশে ইংরেজি শিখতে গিয়ে তাকে অনেক ইংরেজি আর্টিকেল পড়তে হতো, ট্রান্সলেট করতে হতো। সার্চ ইংলিশের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে তাদের উৎসাহ দিত উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার। এভাবেই শুনতে-শুনতে, ভাবতে-ভাবতে স্টার্টআপের কণ্টকাকীর্ণ পথে ঢুকে পড়লেন ডা. ফাহরীন।

এরই মধ্যে খুব অসুস্থ হয়ে গেলেন তার শ্বাশুড়ি। ডায়াবেটিসের রোগী তিনি। তার পরিচর্যার জন্য একজন কেয়ার গিভার দরকার, তার রুটিন চেকআপের জন্য উত্তরা থেকে বারডেম ছুটোছুটি। যদি নিয়মিত ওষুধগুলো কেউ বাড়িতে এসে দিয়ে যেত, তার সুষম পুষ্টির জন্য যদি পাওয়া যেত ফুড বাস্কেট, যদি নিয়মিত চেকআপটা বাড়িতেই পাওয়া যেত! ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ স্বামীর সাথে সে কথা বলতে বলতে নিজেই হাত বাটলেন ডায়াবেটিস সেবায়। তৈরি হল ডায়াবেটিস সেবার জন্য দেশের একমাত্র নিবেদিত প্ল্যাটফর্ম ‘ঢাকা কাস্ট’।

বিজ্ঞাপন

পার্কে পার্কে তিনি ঘুরেছেন। একজন ডায়াবেটিস রোগী কি চান, কোন সেবা কেনার জন্য তিনি প্রস্তুত। কতটুকু অর্থ খরচের সাধ ও সাধ্য রাখেন তারা। জনে জনে এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে তবে তিনি ঢাকা কাস্টকে সাজালেন। তিনজন সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, সুষম খাবার, হোম স্যাম্পল সংগ্রহ, বাসায় ওষুধ পৌঁছে দেওয়া- সব তিনি নিয়ে এসেছেন এক ছাতার নিচে। তার জানা তথ্য মতে দেশে ৭০ লাখের মতো ডায়াবেটিস রোগী। ফাহরীনের স্বপ্ন দেশের প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীকে ঢাকা কাস্টের স্বাস্থসেবা পৌঁছে দেওয়া। স্বপ্নটি বড়, কিন্তু একজন মানুষও তার স্বপ্নের সমানই বড়।

উই প্ল্যাটফর্মের শুরুর দিকে তিনি যুক্ত ছিলেন। স্টার্টআপ জগতে একটু একটু করে জায়গা করে নিয়েছেন তাদের হাত ধরে। কাজ করেছেন গ্রামীনফোনের ন্যাশনাল আউটরিচ প্রোগ্রামের কমিউনিটি লিডার হিসেবে। বেইজিংভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রোগ্রাম ‘She Loves Tech’, ভারতের ‘Female Foundering Business Growth’ সহ নানা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে নিজেকে ক্রমান্বয়ে শানিত করেছেন তিনি মাত্র এক বছরে।

এই সাহসী নারীর দুঃসাহসিক স্বপ্নযাত্রা দেখে স্টার্টআপ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা জাবীন বলেন, ‘ডা. ফাহরীন তার সময়ের একজন অগ্রপথিক। অনেক ধৈর্য আর আবেগ থাকলেই একটি স্থিতিশীল পেশা ছেড়ে একজন মানুষ এমন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় আসতে পারে। আমি মনে করি একদিন সে অনেক সফল হবে এবং সমাজের হাজারো নারীকে স্বপ্ন দেখতে শেখাবে।’

বিজ্ঞাপন

গ্রামীণফোনের এক্সেলেরেটর প্রোগ্রামের ৬ষ্ঠ ব্যাচ থেকে গ্রাজুয়েশন করে ঢাকা কাস্ট। আইসিটি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘call4nation’ এ ঢাকা কাস্ট ‘Honorable mention’ পায় কোভিডকালে তাদের বিশেষ উদ্যোগের জন্য।

স্টার্টআপ বাংলাদেশের সিইও টিনা জাবীন এবং তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন ঢাকা কাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ডা. ফাহরীন হান্নান

অনেক কঠিন পথে হাঁটছেন ফাহরীন তার ঢাকা কাস্ট নিয়ে, কিন্তু সঠিক পথে। একটি মেয়েকে সংগ্রাম করে বেড়ে উঠতে গেলে চামড়া মোটা করে চলতে হয়। এইটাই তার চলার পথের শিক্ষা। থামলেই ছোঁড়া ঢিলটা সহজে গায়ে লাগে, এগিয়ে গেলে দুর্জনের ঢিল লক্ষ্যচ্যূত হয়। এই বোধকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাক ঢাকা কাস্ট। ফাহরীনের জন্য শুভ কামনা।

জাগ্রত মানবতার প্রেসিডেন্ট তাহসীন বাহার এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশের সিইও টিনা জাবীনের কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন ডা. ফাহরীন হান্নান।

লেখক- পোর্টফলিও ম্যানেজার, জিপি এক্সেলেরেটর প্রোগ্রাম

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/আরএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন