কেউই রক্ষা পাবে না— মির্জা ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন ছাড়া কেউই রক্ষা পাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘মুক্ত সাংবাদিক অন্তর্ধান’ দিবস উপলক্ষে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এ ভার্চুয়াল আলোচনা আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ভার্চুয়াল আলোচনার মধ্য দিয়ে এই মেসেজটা সকলকে দিতে পারেন যে, এখন থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া দেশকে, গণতন্ত্রকে— কাউকেই রক্ষা করা যাবে না, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকেও রক্ষা করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটা কথাই বলব, অবস্থা বদলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বদলে দেওয়ার একটাই পথ আন্দোলন-সংগ্রাম। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনই হচ্ছে আমাদের একমাত্র পথ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে যদি মুক্তি পেতে হয় আমাদের ঐক্য দরকার। যেটা আমরা চেষ্টা করছি সব সময়। একটা ঐক্য সৃষ্টি করেই আমাদেরকে এগুতে হবে। আসুন গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাই। সব রাজনৈতিক দলকে একখানে আনার চেষ্টা করি এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে আনি।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকারের কোনোরকমের মূল্য বোধ নেই। আওয়ামী লীগ তো গণতন্ত্রই বিশ্বাসই করে না। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না, কখনোই যায় না। ওদের যে রসায়ন তার মধ্যে গণতন্ত্র হয় না। ওদের ভাবটাই হচ্ছে যে, আমি ছাড়া আর কেউ নেই। একমাত্র আমিই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করব, আমি দেশ চালাব, আমি সব কিছু।’

‘এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, পারস্পরিক সমস্যাগুলোকে দূর করতে হবে। ন্যাশনাল ইউনিটি এই সময় বেশি প্রয়োজন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আজকে যে অবস্থায় পড়েছি এটা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে খারাপ সময়, সবচেয়ে কঠিন সময়। এখানে এমন একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছে, বিশেষ করে ভয়-ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে যে, আজকে কেউ সাহস করছে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যত সাংবাদিক এখন বেকার আছেন, এত বেকার বোধহয় কখনও ছিল না। পঁচাত্তর সালে বাকশাল করার পর ৪টি পত্রিকা রেখেছিল, বাকিগুলো চলে গিয়েছিল। আজকে কিন্তু পরোক্ষভাবে ওইরকমই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের কথা যারা বলবে, তাদের পক্ষে যারা থাকবে তাদের পত্রিকা চলবে, তাদের চ্যানেল চলবে, তাদের গণমাধ্যমগুলো চলবে। অন্য যারা আছে তাদেরগুলো তারা চলতে দেবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা অনেক ভুক্তভোগী, আপনারা অনেক কষ্ট করছেন, অনেকের চাকরি নেই, অনেকে জেল-জুলুমের মামলার মধ্যে পড়েছেন। সাগর-রুনি থেকে শুরু করে অনেকে খুন হয়ে গেছেন, অনেকে গুম হয়ে গেছেন, অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তারপরেও আপনাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’

‘কারণ আপনারাই হচ্ছেন গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। মুক্ত সাংবাদিকতা বা মুক্ত সংবাদমাধ্যম না থাকলে গণতন্ত্র কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। গণতন্ত্রের মূল বিষয়টাই হচ্ছে- গণমাধ্যম সব দেশে, সব যুগে, সব কালে সাংবাদিকরা একটা প্রধান ভূমিকা পালন করে। আপনারা চেষ্টা করছেন, সব সময় করেছেন’— বলেন মির্জা ফখরুল।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এই আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মো. গোলাম পারোয়ার, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজের বাকের হোসাইন, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, নুরুল আমিন রোকন, বাছির জামাল, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোরসালীন নোমানী, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি একেএম মহসিন প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম