বিজ্ঞাপন

ব্যাংককে বিক্ষোভ: নেপথ্যে কী?

September 21, 2020 | 7:59 am

একেএম জাকারিয়া, নিউজরুম এডিটর

থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্র সাংবিধানিকভাবে সর্বজনের সমালোচনা থেকে সুরক্ষিত। সেই আইনি বাস্তবতার তোয়াক্কা না করেই হাজার হাজার গণতন্ত্রকামী থাই নাগরিকের প্রতিবাদ বিক্ষোভে রাজধানী ব্যাংকক উত্তাল আগস্ট থেকেই। দিনকে দিন সেই বিক্ষোভের আওয়াজ আরও স্পষ্ট হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনকারীরা সর্বশেষ গত শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে ব্যাংককে জড়ো হতে শুরু করেন। সারারাত ধরে সংগঠিত হয়ে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোরে ১০ দফা দাবি নিয়ে রাজপ্রাসাদ অভিমুখে রওনা হন। রাজা মহা বাজিরালংকর্ণের ক্ষমতা পুনঃনির্ধারণ, প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচার অপসারন, শাসন ব্যবস্থা সংস্কার, পুনরায় নির্বাচন আয়োজনের মতো বিষয়গুলো ১০ দফায় স্থান পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক সংকট নিয়ে পরিবেশিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই বিক্ষোভ এবং গণঅসন্তোষের স্বরূপ অনুসন্ধান করা হয়েছে। চলুন, দেখে আসি…

বিজ্ঞাপন

এ বিক্ষোভের শুরু যেখানে

২০১৯ সালের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা’র বিরুদ্ধে সোচ্চার দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল – ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টিকে থাই আদালত নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরপরই এই আন্দোলন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে, আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল – প্রধানমন্ত্রীর অপসারন, নতুন সংবিধান গ্রহণ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ওপর নিপীড়ণ বন্ধ করা।

তারপর, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের মুখে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত জুলাইয়ে আন্দোলন পুনয়ায় শুরু হয়। তখন এই আন্দোলনের দাবিগুলোকে ১০ দফার অধীনে একীভূত করা হয়। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ গণমাধ্যমে জানিয়েছেন – তারা রাজতন্ত্রের বিলোপ চান না, কিন্তু এর সংস্কার চান। তবে, সাংবিধানিক ক্ষমতার বাইরে গিয়ে গণতন্ত্রকামীদের এই দাবিকে ভালো চোখে দেখছেন না রক্ষণশীলরা।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা বলেছেন, বিক্ষোভ চলতে দিলে থাই রাজতন্ত্রের সমালোচকরা লাগামহীন আচরণ শুরু করবেন।

বিজ্ঞাপন

রাজপ্রাসাদের নির্লিপ্ততা

তবে ট্যাবু ভেঙ্গে যে রাজপ্রাসাদের ক্ষমতাকে পুনঃনির্ধারণের দাবি উঠেছে – তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করলেও রাজপরিবারের অবস্থান এ ব্যাপারে একেবারে নির্লিপ্ত। এখন পর্যন্ত বিক্ষোভের ব্যাপারে কোনো মন্তব্যই করেননি রাজকীয় কর্তৃপক্ষ।

বিক্ষুব্ধদের দাবি-দাওয়া

রাজতন্ত্রের বিলোপ নয় বরং ২০১৭ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে রাজার সাংবিধানিক ক্ষমতা বৃদ্ধির আদেশ বাতিল এবং রাজতন্ত্রের ক্ষমতা পুনঃনির্ধারণ চাইছেন আন্দোলনকারীরা।

তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৯৩২ সালে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের পথে আবার হাঁটছে থাইল্যান্ড। আর এই চলার পথে তাদের সঙ্গী দেশটির সেনাবাহিনী। রাজতন্ত্র সেনা সহযোগিতায় গণতন্ত্রকে হত্যা করছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও, প্রত্যেক নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে, রাজার সমালোচনার বিরুদ্ধে থাই দণ্ডবিধির ১১২ ধারা প্রয়োগের অবসান কামনা করেছেন আন্দোলনকারীরা (১১২ ধারা অনুসারে, রাজাতন্ত্রের মানহানি করলে বা রাজতন্ত্রকে হুমকি দিলে সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে)।

কেন এই অসন্তোষ

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, ২০১৯ সালের এক প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জিতে সামরিক জান্তা প্রায়ুথ চান ওচা রাজার অনুগ্রহে প্রধানমন্ত্রী হন। তারপর থেকেই তিনি বিরোধী মতামত দমনের এক মহাযজ্ঞ শুরু করেন। দমনের হাতিয়ার হিসেবে সংবিধান, আইন, আদালত এবং রাজকীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যবহার করতে থাকেন। কিন্তু, রাজা মহা বাজিরালংকর্ণের এদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই ইউরোপে বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে মেতে থাকেন।

পাশাপাশি, রাজপরিবারের সদ্যদের জীবনযাত্রা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত রাজার চতুর্থবারের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসা এবং তার লাগামহীন বিলাসিতা নিয়ে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

ফলক অদল-বদল

থাইল্যান্ডের রাজকীয় উদ্যানে ১৯৩২ সালের সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বিলোপের স্মৃতিতে একটি ফলক স্থাপন করা হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল – থাইল্যান্ড রাজতন্ত্রের নয় জনগণের। কিন্তু, ২০১৭ সালে মহা বাজিরালংকর্ণ রাজা হওয়ার পর কোনোরকম ব্যাখা ছাড়াই ওই ফলকটি সরিয়ে ফেলা হয়। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) সেই ফলক ফের থাইল্যান্ডের রাজকীয় উদ্যানে পুনঃস্থাপন করেছেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে, আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ফের বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছেন ব্যাংকক আন্দোলনের কর্মীরা। যদিও, রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ রয়েছেন দেশের বাইরে। এখন, রাজতন্ত্র-শাসন কাঠামো-সেনা ক্ষমতায়নের মতো স্পর্শকাতর ক্ষেত্রগুলোতে সংস্কার দাবি করে গড়ে ওঠা আন্দোলনটি থাইল্যান্ডের গণতান্ত্রিক পরিবেশ উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি না – তাই দেখার বিষয়।

সারাবাংলা/একেএম

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন