বিজ্ঞাপন

কমে গেছে চা উৎপাদন, বেড়েছে দাম

September 21, 2020 | 9:12 pm

হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

মৌলভীবাজার: করোনাকালে চা বাগানগুলো চালু থাকলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর দেশে চা উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত বছর দেশে চায়ের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ হলেও চলতি বছর উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। শুধু তাই নয়, বাজারে মজুদকৃত চা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। ব্যাপক লোকসানের মুখে চায়ের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। বিরূপ আবহাওয়া ও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার চা উৎপাদন ও কেনাবেচায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশে চা উৎপাদিত হয়েছে ৩৩.৯ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৩৯ লাখ কেজি। গত বছর (২০১৯) একই সময়ে চা উৎপাদন হয়েছিল ৩৯.০৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার কেজি। এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এই বছর জুলাই পর্যন্ত ৫১ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন কম হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, চলতি বছর চা উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে। বাকি সময়টুকু অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর চলতি মৌসুমের চা উৎপাদন শেষ হবে। এ সময়ে বড় কোন বিপর্যয় না ঘটলে চা উৎপাদন গত বছরের মতো না হলেও এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে চা শিল্প।

চা গবেষণা ইসস্টিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী সারাবাংলাকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে চা উৎপাদনে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পিছিয়ে থাকলেও বছরের শেষ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এবার চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫.৯৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি। আশা করি বাকি সময়টুকু কোন বিপর্যয় না হলে খুব সহজেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হব আমরা।

শ্রীমঙ্গলের জেরিন টি গার্ডেনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সেলিম রেজা সারাবাংলাকে বলেন, মৌসুমের শুরুতে লম্বা খরা, অতিবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদন ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, চা শিল্প বর্তমানে চা উৎপাদনে গত বছরের তুলনায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ পিছিয়ে আছে।

জানা গেছে, চা সংশ্লিষ্টরা প্রতিকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি অধিক উৎপাদনের আশায় চা শ্রমিকদের বেশি করে পেস্টিসাইড ব্যবহার করতে বলেন। কিন্তু আবহাওয়া অনুযায়ী পেস্টিসাইড প্রয়োগে ভুল হলে উৎপাদনে বিপর্যয় আসতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের (বিটিআরআই) পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রথমে খরা ও পরে অতিবৃষ্টি, মেঘলা পরিবেশের কারণে এবার দেশে চা উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। এবার চা মৌসুমের নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত খরা এবং এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অতিবৃষ্টি। শুধু জুন মাসে ৩৪০.৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ আবহাওয়া চায়ের জন্য উপযোগী ছিল না।

ড. মোহাম্মদ আলীর মতে, রাতে বৃষ্টি ও দিনে রোদ চায়ের জন্য উপযোগী, কিন্তু মে জুনে দিন- রাত বৃষ্টি হওয়ায় চা গাছের কুঁড়ি তৈরিতে বাধা পায়। এতে  চলতি বছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বছরের বাকি সময়ের মধ্যে চায়ের উৎপাদন ঘুরেও দাঁড়াতে পারে— এমনটা মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট ভ্যালি সভাপতি ও জেমস ফিনলের ভাড়াউড়া চা ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী সারাবাংলাকে জানান, এ বছর প্রচণ্ড খরার মুখে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হয়। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাত্র ২১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। জুলাই-আগস্ট মাসে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে থাকায় উৎপাদন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। তবে তা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম।

এদিকে উৎপাদন ধরে রাখতে সরকারি সিদ্ধান্তে চা বাগানগুলো চালু রাখা হলেও দেশে করোনা সংক্রমণের মুখে সার্বিকভাবে চায়ের বেচাকেনা কমে গেছে। এর ধারাবাহিকতায় নিলামে তোলা বেশিরভাগ চা পাতা অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। এর প্রভাবে বাজারে চায়ের দামও কিছুটা বেড়েছে বলে স্থানীয় চা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে দেশে ১৬৭ টি বাগানে চা চাষ হচ্ছে। যা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চা শিল্পের উন্নয়নে ‘উন্নয়নের পথ নকশা: বাংলাদেশ চা শিল্প’ নামে মহাপরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চায়ের উৎপাদন ১৪০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার।

সারাবাংলা/টিসি

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন