বিজ্ঞাপন

লন্ডনের ‘প্রতারক শাহীন’ স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক!

September 26, 2020 | 10:44 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটি নিয়ে উঠেছে নানা অভিযোগ। মোস্তাফিজুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ১৪৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

আংশিক কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকের ব্যাপারেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সাধারণ কর্মীরা। নতুন মুখের পাশাপাশি কমিটির অনেকেই বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ না করেই পদ-পদবী পাওয়ায় অবাক হয়েছেন ত্যাগী নেতারা। অভিযোগ উঠেছে— কোনো কোনো নেতার বাজার-সদাই, ফুট-ফরমায়েশ খাটা লোকজনও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বতর ও ভয়াবহ অভিযোগটি হলো— স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে স্থান পেতে যাচ্ছেন লন্ডনে ‘প্রতারক শাহীন’ হিসেবে পরিচিত বর্তমান যুক্তরাজ্য সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমেদ শাহীন। নানা প্রতারণার অভিযোগে যার বিরুদ্ধে লন্ডনে রয়েছে একাধিক মামলা।

দলীয় সূত্রমতে, ঢাকা মাদরাসা-ই-আলিয়া থেকে পাস করা যুক্তরাজ্য সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমেদ শাহীন আগে থেকেই লন্ডনে ‘বাটপার শাহীন’ নামে পরিচিত। পেশায় ট্যাক্সিচালক এই শাহীন ট্যাক্সি চালানোর আড়ালে এমন কোনো প্রতারণা নেই, যা করেন না। বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, কোর্টে নকল সাক্ষী হাজির করা, ভিসা সংক্রান্ত জাল কাগজপত্র তৈরি, অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের কাছে বিএনপির ভুয়া দলীয় পরিচয়পত্র বিক্রি, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে নকল কাগজ সাপ্লাই, প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করাসহ নানা অপকর্মের হোতা এই শাহীন।

বিজ্ঞাপন

গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি বিবিসি’র অপরাধ অনুসন্ধানমূলক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়— কীভাবে এক দল প্রতারক ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে ‘লাইফ ইন দ্য ইউকে’ ভুয়া পরীক্ষা গ্রহণ ও পাস করিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নেয়। এই অনুষ্ঠানটি বিবিসিতে বিস্তারিতভাবে প্রচারিত হয়, যা এখনো বিবিসি লন্ডনের ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে। এই প্রতারণার মূল হোতা শাহীনের ভগ্নিপতি মাসুদ অনুষ্ঠান প্রচারের পর গ্রেফতার হন। এখনো তিনি কারাগারে রয়েছেন। তবে কৌশলে পার পেয়ে যান শাহীন । যদিও শাহীনের ওপর পুলিশি নজরদারি রয়েছে।

দলীয় সূত্রমতে, এই প্রতারণায় শাহীনের মূল কাজ ছিল ‘মক্কেল’ নিয়ে আসা। এই মক্কেল ধরে আনার বিষয়টি শাহীন ও তার অনুসারী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ মল্লিক কমিশনের ভিত্তিতে করে থাকেন। শাহীন-পারভেজ চক্র লন্ডনে প্রতারণাকে বলতে গেলে শিল্পে পরিণত করেছে। এই চক্রটি গত পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাসকরী বাঙালিদের কাছ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসার নাম করে লাখ লাখ পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছে বলেও শত শত অভিযোগ জমা পড়েছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ২০১৯ সালে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হলেও অর্থের বিনিময়ে দলে ফেরান যুক্তরাজ্য বিএনপির কিছু অসাধু নেতা। আন্তর্জাতিক ‘প্রতারক’ শাহীন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হচ্ছেন— এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর সংগঠনটির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে বিক্ষোভ করেন এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির মূল কমিটি, উপকমিটি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ‘আন্তর্জাতিক বিষয়ক’ পদগুলোতে লোক নিয়োগ দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার পছন্দের লোক ছাড়া এ পদে কেউ নিয়োগ পান না। সুতরাং ‘প্রতারক’ শাহীন স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদের জন্য মনোনীত হলে সেটা তারেক রহমানের সম্মতির ভিত্তিতেই হয়েছেন। এখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা বিএনপির অন্য কোনো নেতার করার কিছু থাকবে না। শুধু তাই নয়, এসব পদে যেহেতু তারেক রহমান নিজে লোক নিয়োগ দেন, সেহেতু বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতেও রাজি না।

অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিষয়ক পদগুলোতে তারেক রহমান নিজে লোক নিয়োগ দেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আর এসব পদে সাধারণত লন্ডনে বা নিউইয়র্কে থাকা নেতাদের অগ্রাধিকার দেন তিনি।’

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধু প্রতারক নয়, টাকা হলে দাগী সন্ত্রাসীও কমিটিতে পদ পেতে পারেন। টাকার বিনিময়ে বাসার কাজের লোককেও এরা (সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা) পদ দেয়।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন