বিজ্ঞাপন

‘সবুজ-নিরাপদ বিশ্ব গড়তে মানবজাতিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে’

September 29, 2020 | 10:10 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারিকে মানবজাতির জন্য অভিন্ন হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো মোকাবিলা করে সবার জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এগুলো মোকাবিলায় একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তুলতে মানবজাতিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিবন্ধটি প্রকাশিত হয় লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী ওই পত্রিকায়।

নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, “আমাদের বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ আছে— ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। আমাদের এমন কিছুই করা উচিত নয়, যার জন্য আফসোস করতে হয়।”

বিজ্ঞাপন

গত মে মাসের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমার দেশ নদীমাতৃক দেশ। উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বহু লোক বাস করে। কিন্তু ২০২০ সালে আমাদের নজীরবিহীন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মে মাসে সাইক্লোন আম্পান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হেনে এর গতিপথে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন রেখে গেছে। এরপর মৌসুমী বৃষ্টিপাতে দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ শস্যের ক্ষতি হয়েছে।’

‘আমি সে সব দেশকে সতর্ক করতে চাই, যারা মনে করে তারা জলবায়ু সংকট থেকে মুক্ত। ব্যাংকার ও অর্থলগ্নিকারীদের যারা মনে করে এর প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে, আমি বলব— আপনি রক্ষা পাবেন না। কোভিড-১৯ দেখিয়েছে, কোনো দেশ বা ব্যবসা একা টিকে থাকতে পারে না। ২০২০ সাল এমন একটি বছর যখন আমাদের অবশ্যই বিজ্ঞানীদের কথা শুনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে। জলবায়ু, স্বাস্থ্য ও প্রকৃতির আমরা একটি ত্রিমুখী জরুরি অবস্থা ও সংকটের মুখোমুখি। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে ত্বরান্বিত হয় এবং তা আরও বাড়িয়ে তোলে,’— লিখেছেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের পাশাপাশি এ বছর বিশ্বব্যাপী যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিয়েছে, সেগুলোর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। অ্যামাজন, অস্ট্রেলিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া ও সাইবেরিয়ার দাবানল; যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবিয়ান এলাকা ও এশিয়ার বেশিরভাগ অংশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এসবের পেছনে মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রম জড়িত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যা, বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, ভূমিধ্বস ও খরা আরও বেশি বিরূপ ও তীব্রতার সঙ্গে উপলব্ধি করছি, যা খাদ্য সুরক্ষাও বিপন্ন করছে। আমাদের এগুলোর গুরুত্ব স্বীকার করতে হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বেড়ে গেলে তা ছোট ছোট দ্বীপ ও উপকূলীয় দেশগুলোকে নিমজ্জিত করবে। গলে যাওয়া হিমবাহ থেকে বন্যা হিমালয়ের দেশগুলোতে বিপর্যয় ডেকে আনবে। কয়েক কোটি মানুষ জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে। এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতা পৃথিবীর নেই।

জি-২০ দেশগুলো প্রায় ৮০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী উল্লেখ করে এসব দেশকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বর্তমান সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য দ্রুত অভিযোজনে অর্থ ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জি-২০ এর কাছ থেকে আরও সমর্থন চাইছে। এই গ্রুপে বাংলাদেশ বিরূপ আবহাওয়ার জন্য অন্যতম সেরা প্রস্তুত দেশ। আমরা সমুদ্রপ্রাচীর নির্মাণ করছি, ম্যানগ্রোভ বন রোপণ করছি, সব সরকারি কাজে স্থিতিস্থাপকতা যুক্ত করছি। তবে, আমরা এই যাত্রায় একা চলতে পারি না। ৬৪টি দেশ ও ইইউ এই সপ্তাহে পৃথিবীর জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার জন্য ‘নেচার টু রেসপন্ড’ অঙ্গীকারে সই করেছে। তারা প্রায় ১০৪ কোটি মানুষের এবং বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। সেখান থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে অভিন্ন রাজনৈতিক সদিচ্ছা তৈরি করা দরকার।”

তিনি বলেন, পরবর্তী সিওপি, জি-৭ ও জি-২০ সভাগুলোর আয়োজক হিসেবে, যুক্তরাজ্য ও ইতালিকে অবশ্যই এই এজেন্ডাটি পরিচালনা করতে হবে। ব্যবসায়ী নেতা, সিইও, সিএফও ও সব স্তরের বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা পালন করতে হবে। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। কেননা প্রকৃতি যদি লাঞ্ছিত হয়, তবে এটি আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। তখন আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা লিখেছেন, কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক অর্থনেতিক বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর এর প্রভাব মিশে রয়েছে। আমি সবুজ পুনরুদ্ধারের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ইইউ’কে স্যালুট জানাই। আমরা বাংলাদেশেও একই পরিকল্পনা হাতে নিছি এবং আমি আশাবাদী— আমার সহকর্মী সরকারি নেতাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতারাও এটি করবেন। ভবিষ্যতের কাজগুলো অবশ্যই অগ্রাধিকার দিয়ে আগামী দশকের জন্য শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে হবে। আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যার জন্য পরে আফসোস করতে হয়। বাসস।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন