বিজ্ঞাপন

‘আমাদের পর্যটন সম্পদ পর্যাপ্ত, একে পণ্যে পরিণত করতে হবে’

October 1, 2020 | 1:43 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পর্যটন নিজে থেকে বিকশিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা এখন প্রায় এক কোটি। তবে আমরা পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা যদি পর্যটনকে সম্পদে পরিণত করতে পারি, তাহলে এই খাত আরও উন্নত হবে। দেশে পর্যটনের উপযোগী প্রায় ‍দুই হাজার স্পট রয়েছে। দেশব্যাপী রয়েছে ১৩৫টির মতো জাদুঘর। রয়েছে অর্ধশত পাহাড়। এগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে একইসঙ্গে সেবা-বিক্রিও বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘অভ্যন্তরীণ পর্যটন সংস্কৃতির টেকসই বিকাশ নাই কেন?’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ, গবেষক, লেখক ও পর্যটন ব্যক্তিত্ব জামিউল আহমেদ, ট্রাভেলার ও প্রশিক্ষক মীর শামসুল আলম বাবু এবং  ট্রাভেলার কি-এর সিইও এম জেড আই ডাল্টন জহির। আলোচনা সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানি।

গবেষক, লেখক ও পর্যটন ব্যক্তিত্ব জামিউল বলেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটন নিজে থেকে বিকশিত হচ্ছে। এক সময় আমাদের দেশের মানুষ বেড়াতে যেত না। কিন্তু সেই প্রবণতা তৈরি হয়েছে। পর্যটকের সংখ্যা এখন প্রায় এক কোটি। আমাদের প্রচুর পর্যটন সম্পদ আছে। এই পর্যটন সম্পদকে পণ্যে পরিণত করতে হবে। সেটা করতে না পারলে এই সেবা বিক্রি করা যাবে না। গন্তব্য কখনো পণ্য নয়। আমরা যদি প্রকৃত সেবা দিতে না পারি, তাহলে সেবা বিক্রি করব কী করে? আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। তাহলে পণ্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিক্রি করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, বিছানাকান্দি-কক্সবাজার-রাতারগুল— এসব স্থান পর্যটন সম্পদ। এসব স্থানে কিন্তু অভ্যন্তরীণ পর্যটকের অভাব নেই। কিন্তু পর্যটকরা কী চায়? তারা সেবা চায়। সেই সেবা নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ আমাদের কিছুই পরিকল্পনামাফিক হয়নি। আমরা পর্যটনের উন্নয়নের করতে পারিনি। সরকারের কাছে টাকা চাইতে হবে। কিন্তু টাকা কোন কাজে ব্যয় হবে, সেটা তো ঠিক করতে হবে। তাহলেই না সরকার টাকা দেবে। পরিকল্পনা না থাকায় আমরা টাকা চাইতে পারি না। এছাড়া পর্যটনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত কিছু সমস্যা হয়ে গেছে। আর ব্যবস্থাপনাও খুব দুর্বল। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নামই তো ভুল। শক্তিশালী মন্ত্রণালয় হলে এটা হতো না। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাজ সমন্বয় করা। তার হাতে টাকা নেই, ক্ষমতা নেই। তাহলে সে করবেটা কী!

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ বলেন, আমরা পর্যটকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে পারিনি। ইউরোপ-আমেরিকা বাদ দিলাম, ভারতেও যেসব সুবিধা আছে সেগুলো পর্যন্ত আমরা দিতে পারছি না। আমরা যেভাবে পর্যটনকে দেখি, পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিকরা সেভাবে দেখে কি না, জানি না। এই শিল্পের প্রতি তাদের কতটা দায় আছে, সেটা প্রশ্ন রয়েছে। ট্রান্সপোর্ট ও সিকিউরিটির সমস্যা রয়েছে। যারা সেবা দিচ্ছে, তারা কি পর্যটকবান্ধব? ওই লোকগুলোকে যদি পর্যটকবান্ধব করতে পারতাম, তাহলে সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তা থাকত না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের ১১/১২ বছরে পর্যটনের অনেক উন্নতি হয়েছে। কুয়াকাটায় রাস্তা হওয়ায় পর্যটন বাড়বে। মার্কেটিং তথা ব্র্যান্ডিং হবে। আমি সমস্যার কথা বলেছি। কিন্তু সমাধানের পথে হাঁটছি। অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজমে উন্নয়ন হয়েছে। সমন্বয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেসব মন্ত্রণালয় পর্যটন নিয়ে কাজ করে, তাদের নিয়ে নিয়মিত বসা দরকার। পর্যটনের উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান দরকার। আমাদের রিসোর্স আছে। ২০১০ সাল থেকে মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে। আগামী মার্চ বা এপ্রিলে আমরা এই মাস্টারপ্ল্যান পেয়ে যাব।

‘ট্রাভেলার কি’-এর সিইও এম জেড আই ডাল্টন জহির বলেন, প্রোডাক্ট সিলেক্ট করা দরকার। একজন বিদেশি কক্সবাজার গেলে দেখে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে নেই। ময়লার পানির স্তূপ দেখা যায়। আমাদের সমুদ্র আছে, পাহাড়ও আছে। ট্রাভেলার আসার আগে আমাদের চারপাশ ভালো করা প্রয়োজন। আশপাশে হোটেলের ময়লা পড়ে থাকে। এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করা দরকার। প্রতিদিন ট্রাভেলার বাড়ছে। আমাদের ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের দাবি সবার এক। কিন্তু আমাদের কথা শুনবেন— এমন একটি মন্ত্রণালয় নাই।

বিজ্ঞাপন

ট্রাভেলার ও প্রশিক্ষক মীর শামসুল আলম বাবু বলেন, সাজেক এখন জঙ্গল হয়ে গেছে। প্রকৃতিকে নষ্ট করে নির্মাণ করা ঠিক না। মনে করেন, সাজেক হেঁটে গিয়ে যে দৃশ্য পাওয়া যায়, গাড়িতে গিয়ে কিন্তু সেই দৃশ্য পাওয়া যায় না। পাহাড়ের ওপর হোটেল করার দরকার কী? পর্যটকরা বিল্ডিং-রাস্তা বা ব্রিজ দেখতে যায় না, তারা পরিবেশ দেখতে যায়। তাদের সেই পরিবেশটা তো দিতে হবে।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন