বিজ্ঞাপন

২০৪১-এ কাজে নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণ— অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

October 2, 2020 | 9:17 am

সারাবাংলা ডেস্ক

২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার পাশাপাশি ওই সময় কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ সমান-সমান করার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে তাদের চাকরি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। নারীর সমতা, ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকার নবায়ন ও প্রচেষ্টা জোরদারেরও আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে উচ্চ পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে ‘ফোর্থ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন উইমেন’-এর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনসহ অন্যান্য বড় বড় কর্মক্ষেত্রগুলোতে অভিবাসী শ্রমিকসহ নারী কর্মীদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে, যেন তারা আবারও প্রান্তিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।

নারী কর্মসংস্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি মেয়ের কাছ থেকে বিশ্ব উপকৃত হতে পারে, যার সম্ভাবনা এরই মধ্যে উপলদ্ধি করা গেছে। শিক্ষার মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকের মেধা ও সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। দ্বিতীয়ত, আয় ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমেই ক্ষমতায়ন তৈরি হয়। তাই আয় বাড়ানোর উপযোগী কর্মকাণ্ডে নারীদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

‘ফোর্থ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন উইমেন’-এর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫তম এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণ সমান সমান, অর্থাৎ ৫০-৫০-তে উন্নীত করার অঙ্গীকার করতে চাই।

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ বিশেষ করে নারীদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মহামারির এই সময়ে নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছে। পারিবারিক সহিংতার শিকারও বেড়েছে। এ কারণে নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের কষ্টার্জিত অর্জন হুমকির মুখে।

তিনি বলেন, জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে ১৯৯৫ সালের বেইজিং ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশন একটি বড় ধরনের রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এটি নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছে এবং ইতিবাচক উন্নয়নের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। তখন থেকে প্রায় সব দেশে নারী ও মেয়েদের সুরক্ষায় আইনি কাঠামো গঠন করে। ২০৩০ এজেন্ডাও সব লক্ষ্যে নারী ক্ষমতায়নকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা যেহেতু ডিকেড অব অ্যাকশনে প্রবেশ করেছি, তাই আমাদের অবশ্যই প্রতিশ্রুতি নবায়ন করতে হবে এবং নারী-পুরুষের সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আমাদের প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ে নারী প্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দেওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে নারীদের বসিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দেশে নারী-পুরুষ সমঅধিকারভিত্তিক একটি সংবিধান নিশ্চিত করা হয়। আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীদের বাস্তবসম্মত প্রয়োজন পূরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই উন্নয়নে সমাজের সব স্তরের সব ধরনের মানুষকে অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ জন্যই আমরা শিক্ষার পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে জোর দিয়েছি। আমরা নারীদের আমাদের উন্নয়নের সক্রিয় কর্মী হিসেবে বিবেচনা করি। এর অংশ হিসেবে সরকার ২০১১ সালে একটি প্রগতিশীল নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। সংসদ নেতা, সংসদীয় উপনেতা, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও স্পিকার— সবাই নারী। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। আর জনসেবাতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, নারীরা এখন উচ্চ আদালতের বিচারক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আরও অনেক কিছু হয়ে উঠছেন। জেন্ডার বাজেটিং, মাইক্রো ফাইন্যান্স এবং এ ধরনের উদ্যোগগুলো নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে। নারীদের ক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগ নারী সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুফল বয়ে আনছে। আজ ২ কোটি নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছেন এবং ৩৫ লাখেরও বেশি নারী তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছেন, যা আমাদের বৃহত্তম রফতানি আয়ের ক্ষেত্র। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার নারী সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নারীরা বাধা ভাঙছেন এবং বিভিন্ন ধরনের পেশায় সফল হচ্ছেন, যা আমাদের আগের প্রজন্ম কখনই কল্পনাও করতে পারত না। নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী অনেক প্রশংসা অর্জন করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুযায়ী আমরা নারীদের সামগ্রিক ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছি। ১৪৯টি দেশের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পঞ্চম স্থানে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সপ্তম স্থানে রয়েছে। আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। বাসস।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন