বিজ্ঞাপন

সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ বাংলাদেশের জন্য হুমকি: বিএনপি

October 2, 2020 | 1:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ বাংলাদেশর নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২ অক্টোবর) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এরই মধ্যে আমরা অবগত, বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে গত ১১ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে মাছ ধরার ট্রলারে করে মিয়ানমারের সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ করা গেছে। অন্তত তিনটি পয়েন্টে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সৈন্যদের উপস্থিত হতে দেখা গেছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের অন্তত তিনটি পয়েন্ট— কা নিউন ছুয়াং, মিন গা লার গি ও গার খু-এ ট্রলার থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সৈন্যদের নামতে দেখা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘সীমান্ত পয়েন্টগুলোর মধ্যে একটির দূরত্ব আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখার (২০০ মিটার) মধ্যে। ওই তিন পয়েন্টে মাছ ধরার ট্রলারের কাঠের নিচে বসিয়ে সৈন্যদের জড়ো করা হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, মিয়ানমার সেনাবাহিনী একদিনেই এক হাজারের বেশি সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে গণহত্যা শুরুর সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ঠিক একইভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করেছিল। ফলে ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে শুরু হওয়া সেনা সমাবেশের কারণে রাখাইনে এখন যেসব রোহিঙ্গা রয়েছেন, তাদের মধ্যে নতুন করে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সন্দেহজনক গতিবিধির মাধ্যমে এ ধরনের সেনা সমাবেশ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও মিয়ায়নমারের রাখাইনে আবদ্ধ রোহিঙ্গাদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সেনা তৎপরতা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি রক্তচক্ষুর বার্তার সমতুল্য। বিনা উসকানিতে সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা অধুষিত আন্তর্জাতিক সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ ধরনের সমাবেশ শুধু যে মিয়ানমারের নৃতাত্ত্বিক রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর জন্য আতঙ্কের বিষয় নয়, একইসঙ্গে চলমান আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্র কর্তৃক আইন অবমাননার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’

সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশের ঘটনায় সরকারকে ‘আন্তঃআঞ্চলিক কূটনৈতিক’ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি আজ মিয়ানমারের কাছে স্পষ্ট। এর পরিপূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেই মূলত মিয়ানমার সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ অযাচিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে সেনা সমাবেশ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে।’

‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এহেন সেনা সমাবেশের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই ধরনের অপতৎপরতা রুখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক আন্তঃআঞ্চলিক কুটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কেন আমরা কথা বলছি? ভারত-চীন সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ হয়— এটা নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায়। আমাদের সরকারের কোনো কথা নেই। তারা একবারে চুপচাপ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে একটি চিঠি দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কার্য্কর কোনো পদক্ষেপ এই সরকার এ ব্যাপারে নিতে পারেনি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত নিপীড়ন-নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার তিন বছর পূর্তির প্রাক্কালে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সমাবেশের তৎপরতা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিক ফলাফল মাত্র। ১২ লক্ষাধিক (গণমাধ্যমে প্রকাশিত) শরণার্থী সমস্যার সমাধানে যে ধরনের সমন্বিত বহুমুখী তৎপরতা অত্যাবশ্যক ছিল, তা এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার নিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে— রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। বিশ্বের মানচিত্রে এই জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় বেসামরিক তদারকিতে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলকে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে যথাযথ নাগরিক অধিকার ও মর্যাদায় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের আবাসভূমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নাই।’

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘কোনো একটা পত্রিকায় ছাপা হলো যে স্থায়ীভাবে শরণার্থীদের বসবাসের জন্য ভাসানচরে একটি সিটি গড়ে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ রোহিঙ্গারা স্থায়ীভাবে এখানে থাকবে সেই বিষয়টা বোধহয় সরকার নিশ্চিত করছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘স্থায়ীভাবে তাদেরকে রেখে দেওয়াটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণের নয়। এটা যে বাংলাদেশের মানুষের কত বড় যে সমস্যা, তা কিছুদিন পর আমরা অনুধাবন করতে পারব। এটা একটা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বলে আমরা মনে করি। এখানই যদি সরকার এটাকে (রোহিঙ্গা সমস্যা) অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকারভাবে বিবেচনায় না নিয়ে আসে জাতিসংঘে, তাহলে কিন্তু এটা বাংলাদেশের জন্য একটা ভয়ানক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে,’— বলেন বিএনপি মহাসচিব।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন