বিজ্ঞাপন

৩ মেডিকেলে ছাত্রলীগের কমিটি, ‘বিতর্কিত’দের স্থান দেওয়ার অভিযোগ

October 5, 2020 | 2:26 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার তিন মেডিকেল কলেজ ইউনিটের জন্য নতুন শাখা কমিটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। অভিযোগ উঠেছে, এসব কমিটিতে ফের ‘বিতর্কিত’দের স্থান দেওয়া হয়েছে। এসব কমিটিতে স্থান পাওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগ থাকলেও সেগুলোকে কমিটি ঘোষণার আগে আমলে নেওয়া হয়নি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে কেন্দ্রের দাবি, এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পরই তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সই করা পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন তিন মেডিকেল ইউনিটের কমিটির তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ইউনিটের জন্য নতুন কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ইউনিটের আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে একবছরের জন্য নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢামেক ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে আগামী এক বছরের জন্য শেখ মো. আল-আমিনকে সভাপতি ও মো. জামিউল ইসলাম ফুয়াদকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এর আগেই গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে আগামী এক বছরের জন্য সভাপতি পদে মজনু মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাইদুল ইসলামকে নির্বাচিত করে কমিটি দেওয়া হলো। একইসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে এই শাখার জন্য সৌরভ ঘোষকে সভাপতি ও আল আসিফ দিহান খানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় ঢামেক শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছিল। এখানে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। এছাড়া স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটিও অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এই দুই শাখাতেও নতুন কমিটির দাবি ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই দাবি পূরণ হলেও এসব কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের কাউকে কাউকে নিয়ে ‘বিতর্ক’ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এসব নেতাদের কারও কারও বিরুদ্ধে ‘ভিন্ন মতাদর্শ’ ধারণ করা ছাড়াও মাদক সেবন, চাঁদাবাজিসহ ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে।

নতুন ঘোষিত কমিটির মধ্যে ঢামেক শাখা ছাত্রলীগে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন শেখ মো. আল-আমিন। তিনি এর আগে ২০১৯ সালে বিলুপ্ত ঢামেক ছাত্রলীগের ফজলে রাব্বি হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালে এমবিবিএস পাস করেছেন তিনি। চিকিৎসক হিসেবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) নিবন্ধনও রয়েছে তার। ছাত্রত্ব শেষ হলেও রেজিস্টার্ড চিকিৎসক হিসেবে থেকেই ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিতে নানা তৎপরতা শুরু করেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ‘অসামাজিক’ কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন দোকানপাট ও ক্যান্টিনে চাঁদাবাজির অভিযোগ। বহিরাগতদের কাছে হলের মাঠ ইজারা দেওয়া, হলের রুম ভাড়া দেওয়া, হলের সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করার মতো অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ আল-আমিনের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট, এমনকি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

ঢামেক শাখা ছাত্রলীগে দায়িত্ব পাওয়া আরেক নেতা জামিউল ইসলাম ফুয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণকারী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। বহিরাগতদের নিয়ে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক আক্রোশের বশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি দেখানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বহিরাগত ‘ক্যাডার’দের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভেতরে ও সংলগ্ন এলাকার দোকানগুলোতে চাাঁদাবাজির অভিযোগও বহুদিন ধরে দিয়ে আসছেন ভুক্তভোগীরা। তবে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য জামায়াত-শিবির অনুসারীদের আশ্রয় দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে অনেকের। এর বাইরেও জামিউল ইসলাম ফুয়াদ একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের দুই নেতার মধ্যে সৌরভ ঘোষের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার একাধিক ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি রীতিমতো ছাত্রদলই করতেন বলে জানিয়েছেন অনেকে। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি জোবাইদুর রহমান জনিসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতার সঙ্গেও সৌরভের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। মেডিকো কোচিং সেন্টার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মেডিকেল কলেজগুলোর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগের মতো একটি আদর্শিক ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠনে এরকম ‘বিতর্কিত’দের উত্থানে তারা শঙ্কিত। এসব ব্যক্তিকে নিয়ে আগে থেকেই রয়েছে বিতর্ক। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছেও এসব অভিযোগ গিয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন্দ্র থেকে শেষ পর্যন্ত তাদেরই দায়িত্ব দেওয়ায় তারা হতাশ। তারা ঘোষিত কমিটিগুলো থেকে ‘বিতর্কিত’দের বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত, সৎ, চরিত্রবান ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানান।

‘বিতর্কিত’দের কমিটিতে স্থান দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য সারাবাংলাকে বলেন, কমিটি করার আগে সবার নামে যে অভিযোগগুলো ছিল, সেগুলো আমরা যাচাই-যাচাই করে দেখেছি। অভিযোগগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। তারপরই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর যেসব ছবির কথা বলা হচ্ছে, আমরা জানতে পেরেছি সেগুলো এডিট করা ছিল।

বিজ্ঞাপন

প্রায় একই কথা বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা ঢাকার তিনটি মেডিকেল ইউনিটের তিনটি কমিটি ঘোষণা করেছি। এসব ইউনিটে যারা দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট করেছেন, করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়েও কষ্ট করেছেন, যারা ত্যাগের রাজনীতি করেছেন, তাদের আমরা নেতৃত্বে এনেছি। আমরা আশা করছি, নেতৃত্বের মাধ্যমে তারা নিজ নিজ ইউনিটের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

তিন কমিটির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। তবে যে ছবি নিয়ে এত কথা, সেই ছবি এডিট করা হয়েছে বলে জেনেছি। যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার অভিযোগ— ছবি এডিট করে বিরোধীপক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তারপরও যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো বিষয়ে সত্যতা জানার চেষ্টা আমরা করছি। কোনোভাবে এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখছি।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন