October 6, 2020 | 2:24 pm
সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর
সদ্যই শেষ হলো ইউরোপিয়ান ফুটবলের ২০২০/২১ মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন দলবদল। এবারের দলবদলের মৌসুমে ইউরোপ জুড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো এবার ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে। এরপরেই আছে ইতালিয়ান সিরি আ। ইতালিয়ান ক্লাবগুলো এবারের মৌসুমে মোট খরচ করেছে ৭৪৬ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ইউরো। এরপর যথাক্রমে আছে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান, স্প্যানিশ লা লিগা এবং বুন্দেস লিগা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ:
২০২০/২১ মৌসুমের দলবদল অপেক্ষাকৃত চুপচাপ হওয়ারই কথা ছিল। কেননা করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ক্লাবগুলো বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে ইংলিশ ক্লাবগুলোর ওপর যেন এর কোনো প্রভাবই পড়েনি। অন্ততপক্ষে দলবদলে তাদের অর্থের ঝনঝনানি তো সেটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো মোট ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে। আর বিনিময়ে খেলোয়াড় বিক্রি করে উপার্জন করেছে ৪৭৩ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ৯০১ দশমিক ০৫ মিলিয়ন ইউরো।
আর্সেনাল: নতুন কোচ মিকেল আর্তেতার অধীনে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আর্সেনালের। সেই লক্ষ্যে মৌসুমটা দুর্দান্ত শুরুও করেছে গানাররা। আর তাই তো দেখা মিলেছে নিজেদের প্রয়োজন মতো খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে। আর্তেতা নিজের রক্ষণকে আরও দৃঢ় করতে খেলোয়াড় ভিড়িয়েছেন, সেই সঙ্গে মধ্যমাঠেও ভিড়িয়েছেন কয়েকজন খেলোয়াড়। আবার সেই সঙ্গে দল ছেড়েছেন কিছু খেলোয়াড়।
লিভারপুল: ৩০ বছর পর প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ী অল রেডরা এবারের মৌসুমে অপেক্ষাকৃত চুপচাপই ছিল। আক্রমণ আর মধ্যমাঠে কয়েকজন সেনা ভেড়ালেও বাকিটা সময় নিরবেই কেটেছে রেডদের।
ম্যানচেস্টার সিটি: বরবারের মতো এই দলবদলের মৌসুমেও ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। এ মৌসুমেও বেশ কয়েকজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় নাম লিখিয়েছেন সিটিজেনদের ডেরায়। এই নিয়ে সিটিজেনদের হয়ে পাঁচ মৌসুমে ৪১৩ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি কেবল রক্ষণের পেছনেই খরচ করলেন পেপ। এবার অবশ্য রক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণেও টাকা ঢেলেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। অবশ্য সেই সঙ্গে দলও ছেড়েছেন কয়েকজন তারকা।
*এছাড়াও এবারের মৌসুমে ক্লাব ছেড়েছেন দীর্ঘদিন সিটির গোলবারের পাহারাদার ক্লদিও ব্রাভো। তিনি ফ্রিতে রিয়াল বেতিসে যোগ দিয়েছেন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড: দলবদলের মৌসুম শুরুর আগে থেকেই বেশ ব্যস্ত ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। গুঞ্জন ছিল এবারের মৌসুমে বেশ ব্যস্ত সময়ই পার করবে রেড ডেভিলরা। তবে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে জডান সানচোকে দলে ভেড়ানোর জন্য বেশ উঠে পড়েই লেগেছিল রেড ডেভিলরা। বুরুশিয়া জানিয়ে দিয়েছিল সানচোকে পেতে হলে ১২০ মিলিয়ন ইউরো গুনতে হবে যেকোনো ক্লাবকেই। আর এমন শর্তে আর এগোয়নি ইউনাইটেড। তাই তো জোর গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত বুরুশিয়াতেই এই মৌসুম থাকতে হচ্ছে সানচোকে। তবে সানচোকে না পেলেও আক্রমণে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছে রেড ডেভিলরা।
টটেনহাম হটস্পার্স: হোসে মোরিনহোর অধীনে নতুন করে দল গড়তে বেশ উঠে পড়ে লেগেছে স্পার্স। তাই তো মোরিনহোর পছন্দের খেলোয়াড়গুলোকে যেকোনো মূল্যেই দলে ভিড়িয়েছে স্পার্স। আক্রমণ এবং রক্ষণ দুই দিকেই মোরিনহোকে খেলোয়াড় এনে দিয়েছে স্পার্স।
চেলসি: এবারের দলবদলের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে চেলসি ফুটবল ক্লাব। প্রায় ২২০ মিলিয়ন ইউরো এবারের দলবদলের মৌসুমে খরচ করেছে ক্লাবটি। রক্ষণ থেকে শুরু করে মধ্যমাঠ এবং আক্রমণেও খেলোয়াড় ভিড়িয়েছে ব্লুজরা।
লেস্টার সিটি: ওয়েসলি ফোফানা সেন্ট এটিন ক্লাব থেকে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে লেস্টারে নাম লেখান, এছাড়াও আটালান্টা থেকে টিমোথি কাস্টাহনে ২৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভেড়ায় ক্লাবটি।
এভারটন: বেন গডোফ্রি নরউইচ সিটি থেকে ২৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে মার্সিসাইডের ক্লাবটিতে নাম লেখান। এছাড়া নাপোলি থেকে ২৫ মিলিয়নের বিনিময়ে অ্যালান, ওয়াটফোর্ড থেকে ২২ মিলিয়নে আবডুয়ালে এবং রিয়াল মাদ্রিদ থেকে কলম্বিয়ান তারকা হামেস রদ্রিগেজকে দলে ভেড়ায় এভারটন।
স্প্যানিশ লা লিগা:
এবারের দলবদলের মৌসুমটা বেশ ধীরেই কেটেছে স্পেনে। বিগ ক্লাবগুলো খুব বেশি পরিবর্তন আনেনি দলে। আর তাই তো খুব বেশি অর্থও খরচ হয়নি ক্লাবগুলোর। ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের ভেতর অর্থ খরচের দিক দিয়ে এবারের মৌসুম স্প্যানিশ লা লিগার অবস্থান চারে। স্প্যানিশ ক্লাবগুলো খরচের চেয়ে বেশি বিক্রি করে অর্থ ঘরে তুলেছে। তাই তো দিন শেষে দেখা মিলছে লা লিগা এবারে লাভ করেছে ৮২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ইউরো। লা লিগার ক্লাবগুলোর খরচ যেখানে ৪১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরো সেখানে খেলোয়াড় বিক্রি করে উপার্জন ৪৯৪ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ইউরো।
বার্সেলোনা: উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে ভরাডুবির পর দল থেকে বেশ কয়েকজন তারাকাকে ছেটে ফেলেছে বার্সেলোনা। যার মধ্যে আছে ক্লাব কিংবদন্তি লুইস সুয়ারেজ এবং ইভান রাকিটিচরাও। এছাড়াও দলের আক্রমণ, মধ্যমাঠ এবং রক্ষণে এসেছে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়।
রিয়াল মাদ্রিদ: দলবদলের মৌসুমের সবসময়ই ব্যস্ত সময় পার করে আসছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে এবার স্পেনের ক্লাবটি নিজেদের ইতিহাসের ৪০ বছরে এই প্রথম কোনো খেলোয়াড় দলে না ভিড়িয়েই ইতি টেনেছে দলবদলের মৌসুমের। উল্টো দল থেকে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে বিক্রি করেছে ক্লাব সভাপতি ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ। আর বিক্রি করে এবারের মৌসুমেই রিয়াল মাদ্রিদ উপার্জন করেছে ১০০ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি। এর মধ্যে আছেন গ্যারেথ বেল এবং হামেস রদ্রিগেজের মতো খেলোয়াড়রাও।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ: বার্সেলোনা থেকে ফ্রিতে লুইস সুয়ারেজকে দলে টেনেছে অ্যাটলেটিকো, এছাড়াও আর্সেনাল থেকে লুকাস তোরেইরাকে মধ্যমাঠে ভিড়িয়েছে তারা। আর আলভারো মোরাতাকে জুভেন্টাসে ধারে দিয়েছে ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। আর দলবদলের বাজারের শেষ দিনে থমাস পার্তের ৫০ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে তাকে দলে টেনেছে আর্সেনাল।
জার্মান বুন্দেস লিগা:
জার্মান বুন্দেস লিগা এবার খেলোয়াড় কেন বেচায় লাভ করেছে ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইউরো। যেখানে ৩২৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউরোর খেলোয়াড় ক্রয় করে ৩২৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ইউরোর খেলোয়াড় বিক্রি করেছে জার্মান ক্লাবগুলো।
বায়ার্ন মিউনিখ:
ইতালিয়ান সিরি আ:
অর্থ খরচের দিক দিয়ে এবারের মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পরেই অবস্থান সিরি আ’র। তবে সেই সঙ্গে খেলোয়াড় বিক্রি করেও বেশ অর্থ উপার্জন করেছে সিরি আ। ৭৪৬ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ইউরো খরচের বিপরীতে ৭০৯ দশমিক ০৮ মিলিয়ন ইউরো উপার্জন করেছে সিরি আ। এবারের দলবদলের মৌসুমে সিরি আ’র নেট খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ইউরো।
ইন্টার মিলান: আশরাফ হাকিমিকে ৪০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে, নিকোলো বারেল্লাকে ২৫ মিলিয়ন ইউরোড় বিনিময়ে কাগ্লিয়ারি সালসিও থেকে, স্টেফানো সেনসিকে সাসুলো থেকে ২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছে ইন্টার। এছাড়াও ফ্রিতে আর্তুরো ভিদাল এবং ধার শেষে ইভান পেরিসিচকে দলে ফিরিয়েছে ইতালিয়ান ক্লাবটি।
জুভেন্টাস: বার্সেলোনা থেকে আর্থার মেলোকে ৭২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে, আলভারো মোরাতাকে ধারে ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে, ফেডেরিকো চিয়েসাকে ধারে ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ফিওরেন্তিনা থেকে দলে ভিড়িয়েছে জুভেন্টাস।
* নাপোলি ৭০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে লিলে থেকে ভিক্টর ওসেমহেনকে দলে ভিড়িয়েছে।
ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান:
এবারের দলবদলের মৌসুমে পিএসজি খুব বেশি অর্থ খরচ না করলেও ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের দলগুলো ৪৩৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে। বিপরীতে ৩৭৬ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ইউরোর খেলোয়াড় বিক্রি করেছে। অর্থার লিগ ওয়ানের নেট খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ইউরো।
পিএসজি: ইন্টার মিলান থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে মাউরো ইকার্দিকে দলে টেনেছে পিএসজি। এছাড়া উল্লেখ যোগ্য তেমন খরচ করেনি এই ইউরোপিয়ান জায়ান্ট।
*তথ্যসূত্র: ট্রান্সফার মার্কেট
সারাবাংলা/এসএস