বিজ্ঞাপন

‘সংঘাত ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান আসবে না’

October 7, 2020 | 10:58 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মিয়ানমারের সঙ্গে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে বিকল্প পথে ভাবতে হবে। কেননা সংঘাত ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান আসবে না। পাশাপাশি বাংলাদেশও যে মিয়ানমারের বিভিন্ন অপকর্মের জবাব দিতে পারে, সেরকম কিছু সামর্থ্যের প্রয়োগ দেখাতে হবে। অনুমতি ছাড়া মিয়ানমারের হেলিকপ্টার যদি বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘণ করে, তাহলে একবার ওয়ার্নিং দিয়ে দ্বিতীয়বার যেন তার এয়ারক্রাফটটা ফেলে দেওয়া যায়, সেই সামর্থ্য ও সাহস বাংলাদেশের অর্জন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আলোচকরা এমন মন্তব্য করেন। এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ’। সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানীর উপস্থাপনায় এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমার একটি জেনোসাইডাল স্টেট। এটা আজকে হয়েছে, তা নয়। মিয়ামারের জন্মলগ্ন বা ১৯৪৮ থেকেই তারা এমন। দেশটিতে তারা যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, সে হিসাবে মিয়ানমার ৭০/৭২ বছর ধরে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র।’

তিনি বলেন, ‘বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে দেখা যাচ্ছে, বৈশ্বিক যে মানচিত্র তাতে মিয়ানমার খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এটি এমন একটি অবস্থান যে পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগস্থল। ইদানিং চীনের যে প্রয়োজন, প্রচলিত রাস্তায় চীনকে যেসব থ্রেট করা হচ্ছে, সেজন্য চীন যেভাবে তার বিকল্প রাস্তা খুলেছে, সেই বিকল্প রাস্তার মধ্যে অন্যতম পূর্ব দিকের (দ্য ইস্টার্ন সাইট) গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হচ্ছে মিয়ানমার। মনে রাখতে হবে, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আজকের নয়, শতাব্দী প্রাচীন এ সম্পর্ক, যখন চীন বা গণচীন ছিল না। চীন যখন বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তখন থেকে এই সম্পর্ক। বর্তমানে চীনের প্রয়োজন মিয়ানমারকে ওপেন করে একটি বাতায়ন তৈরি করা। এখন সেই জায়গাতে যদি আমরা বাংলাদেশকে স্থাপন করি, আমরা দেখব— জিও পলিটিক্যালি বর্তমান বিশ্বে যে পরিবর্তন হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই জিও-স্ট্যাটিক লোকেশনে আমরা হ্যান্ডিক্যাপড হয়ে আছি।’

বিজ্ঞাপন

এম সাখাওয়াত আরও বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে মিয়ানমারে গিয়ে রিফাইনারি স্থাপন বিষয়ে ভারত ৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে কৃষি উন্নয়নে অনেক বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভারত। তার অর্থ, সেখানে ভারতের একটি বড় জাতীয় স্বার্থ আছে। যেখানে মিয়ানমারের উন্নয়নে চীন ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করছে, সেখানে ভারতও বিনিয়োগ করছে। তার মানে সবগুলো দেশই তাদের জাতীয় স্বার্থ আগে দেখছে। অথচ আমরা মনে করি যে এই রাষ্ট্রগুলো আমাদের জন্য উজাড় করে দেবে। আসলে কিন্তু তেমন নয়। কোনো দেশই তার জাতীয় স্বার্থের বাইরে যাবে না। চীন যেমন যাচ্ছে না, ভারতও তেমন যাচ্ছে না। তাই তাদের কাছে বড় কিছু আশা করা ঠিক না।

তিনি আরও বলেন, এখন চীনের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্কের পেছনে রয়েছে বিনিয়োগ। ইন রিটার্ন আমরা চীনকে কী দিচ্ছি, সেটা বড় কথা। আমরা বিআরআই’তে আছি, কিন্তু ভারত বিআরআই’তে নাই। আমেরিকা আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, যার এগেইনস্টে চীন। আমরা সেখানে যাব বলে মনে হয় না, যাওয়া উচিতও হবে না। এসব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আমাদের চিন্তা করতে হবে যে কিভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করব।

মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি কেমন হতে পারে— এ প্রসঙ্গে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নাই। বাংলাদেশ এখনো মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে শান্তির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এখন ফ্যাক্ট হচ্ছে, এই রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ যেভাবে সমাধান করতে চাচ্ছে, সেভাবে সমাধান হবে না। এই সংকটের সমাধান করতে হলে বাংলাদেশকে অ্যাগ্রেসিভ ডিপ্লোমেসি চালাতে হবে। আমাদের সামরিক বাহিনীর যতটুকু সামর্থ্য আছে, তাতে আমি মনে করি ইউ ক্যান উইথস্ট্যান্ড মিয়ানমার। তবে বাস্তবতাও দেখতে হবে। আমাদের ওয়ান-টু-ওয়ান শক্তির কথা যদি বলি, সংখ্যাতত্ত্বের শক্তির কথা যদি বলি, ইক্যুইপমেন্টের শক্তির কথা যদি বলি— এর বাইরেও আমাদের সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতা, সেটি হলো আমাদের ডেপথ অব দ্য কান্ট্রি, আমাদের জিওস্ট্যাটিক লোকেশন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমাদের দেশের ভেতরে যে জায়গাটি সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর, সেই জায়গাতেই কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট শুরু হয়েছে। আমাদের ওই অঞ্চল অবস্থানগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে কোনো ধরনের ডিস্টার্বেন্স হলে তার অনেক বড় প্রভাব পড়বে। এই যে প্রকাশ পেয়েছে যে সেখানে প্রচুর মাদকের বাণিজ্য চলছে। এর সঙ্গে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জড়িয়ে গেছে। এটা কিন্তু মিয়ানমার থেকে পুশ করা হচ্ছে। শুধু মিয়ানমারই নয়, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও পুশ করা হচ্ছে। তাই বিকল্প ভাবার সময় এসেছে। কেননা এখন যে ১১/১২ লাখ রোহিঙ্গা আছে, তারা কি কখনো আমাদের সঙ্গে মিশবে? কখনই মিশবে না। কারণ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি, তাদের বাপ-দাদার ভিটা রেখে বাংলাদেশের কথা ভাববে না। তাহলে তারা (রোহিঙ্গারা) করবেটা কী? তারা যা করবে সেটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের ইন্টার্নাল ও এক্সটার্নাল নিরাপত্তা এবং এই অঞ্চলের জন্য সুখকর হবে না। কাজেই আমাদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই সমাধান বের করতে হবে। আমাদের বিকল্প ভাবতে হবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের কৌশলগত (জিও পলিটিক্যাল) গুরুত্ব যে কম, তা আমি বিভিন্ন সময়েই বলেছি। আমাদের যে গুরুত্ব কম, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। মালাক্কা প্রণালীকে অ্যাভয়েড করা এবং বিকল্প পথের জন্য চীনের কাছে বঙ্গপসাগরে প্রবেশ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের ভেতর দিয়েও সমুদ্রে প্রবেশ করার সামর্থ্য চীনের আছে। কিন্তু সেটা বহু দূরের পথ এবং সেই পথে চীনের কম উন্নত অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। অন্যদিকে চীনের সবচেয়ে উন্নত যে অঞ্চল, সেই অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মিয়ানমারের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাতে পারে চীন। ফলে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অলরেডি সেখানে তাদের দুইটি পাইপলাইন আছে, কাজ চলছে। তাই চীন কখনই মিয়ানমারকে ছাড়তে রাজি হবে না।

তিনি বলেন, ‘ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত যে টার্মটা ব্যবহার করেছেন যে বিকল্প ব্যবস্থা, আমরা এই পর্যন্তই যাই। বিকল্প ব্যবস্থা কী, সেটা অনেক ভেবেচিন্তে বের করতে হবে। বিশেষ করে যারা ক্ষমতার এক্সসারসাইজ করেন, যারা সরকারের ভেতরে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন, তাদের ভাবতে হবে এই বিষয়ে। কেননা এটা অবধারিত যে আমরা ৫ বা ১০ বছরও যদি ধরি, আর ১০ বছর ধরে যদি আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাই, এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করেও যদি আলোচনা চালিয়ে যাই, এর মধ্যে এমনকি যদি একটা রায়ও (আইসিসি ও আইসিজে’তে চলমান বিচার প্রক্রিয়ায়) আসে যে এই রেজিম (মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনরা) জেনোসাইড করেছে, তারপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে এই ১০/১২ লাখ বা ততদিনে ১৫ লাখ রোহিঙ্গার নিজেদের বসত-ভিটেতে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা তৈরি হবে না। তবে হ্যাঁ, একটা চাপ তৈরি হবে মিয়ানমারের ওপর। তারপরও আমি মনে করি যে মিয়ানমারের রেজিমের যে ধরন, কিছু সংঘাত ছাড়া এই সমস্যার সমাধান (রোহিঙ্গা সংকট) হবে না। তাই আমাদের আরেক ধাপ এগিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন।

সাবেক এই সচিব আরও বলেন, ‘আমরা যে বিকল্প চিন্তার কথা ভাবছি, সেখানে মিলিটারি এলিমেন্ট অবশ্যই আমাদের চিন্তা করতে হবে। তাই আমাদের এইটুকু শক্তি থাকা প্রয়োজন। আমি মনে করি যে সেই ধরনের প্রস্তুতির ঘাটতি আছে। অথচ মিয়ানমারের তুলনায়  আমাদের অর্থনীতি, জনশক্তিসহ অনেক অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শক্তিশালী। তাই আমি মনে করি যে মিয়ানমার যদি আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘণ করে, তাহলে একবার ওয়ার্নিং, দ্বিতীয়বার যেন তার এয়ারক্রাফটটা ফেলে দেওয়া যায়, সেই সামর্থ্য ও সাহস বাংলাদেশের অর্জন করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের সেই সামর্থ্য আছে। আমি আমাদের ডেপথের কথা বলেছি। আমি আপনার (মো. তৌহিদ হোসেন) সঙ্গে একমত যে আকাশসীমা লঙ্ঘণ করলে একবার ওয়ার্নিং, দ্বিতীয়বার মাস্ট শো স্ট্রেনথ। সেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে সরকারের। এখন মিয়ানমার যেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, বাংলাদেশ তা পারে না। কারণ বাংলাদেশ গণতন্ত্রের চর্চা করে।’

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘না, আমি তা মনে করি না। যেহেতু তিনবছর আমরা কাটিয়ে দিয়েছি- এটা স্পষ্টত যে, বাংলাদেশ ত্রিশবছরও রোহিঙ্গাদের রাখতে পারবে। সেই সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ এদের রাখতে পারবে এবং বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশের গ্রোথের কিন্তু কোনো ক্ষতি হয়নি। যারা হা হুতাশ করছে তারা বুঝতে পারছে না যে, আমাদের সামর্থ্য কিন্তু বিশাল। অনেকেই ভেবেছিল এই ১ দশমিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা, যা ভুটানের জনসংখ্যা থেকেও বিশাল, এরা এখানে আসলে বাংলাদেশের গ্রোথ ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। তা কিন্তু হয়নি। এমনকি প্যানডামিক হওয়ার পরেও কিন্তু আমরা যেভাবে যতটুকু পেরেছি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, ফাদার অব ন্যাশন সুন্দরভাবে বলেছিলেন- আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমি মনে করি এই জিনিসটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, দাবায়ে রাখতে পারবেন না। কারণ আমাদের ১৬ মিলিয়ন জনসংখ্যা। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া যেভাবে এই ১ দশমিক ১ মিলিয়ন নিয়ে ঘাবড়িয়ে যায়, আমরা কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশের নাগরিক হিসেবেও ভয় পাচ্ছি না।’

ড. ইমতিয়াজ আরও বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে যে, আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চেঞ্জ হচ্ছে কি না। দ্বিতীয় যেটা চিন্তা করা দরকার সেটা হচ্ছে, যে জায়গা থেকে ডিপ্লোমেসি ফেইল করতে পারে, সেটা বাংলাদেশ না, বাংলাদেশ ইজ অলওয়েজ লুকিং টু ডিপ্লোমেসি। এই যে ডিকাপলিংয়ের কথা বলা হলো, জাতিসংঘের কথা বলা হলো, আইসিসি-আইসিজে এটাই বাংলাদেশের সঠিক কাজ বলে আমি মনে করি। যে জায়গায় চিন্তার বিষয়, যেখানে ডিপ্লোমেসি কাজ হবে না। মনে রাখতে হবে, ১ দশমিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গার মধ্যে কিন্তু একটা বড় অংশ তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে; তারাতো আর বসে থাকবে না। ১৯টা দেশে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে আছে তারাতো বসে থাকবে না; যারা গ্লোবাল পাওয়ারস তারা যদি এগুলো চিন্তা না করে। এই জন্যই মিয়ানমার কিন্তু চাচ্ছে বাংলাদেশ আসুক, বাংলাদেশ আসুক। বাংলাদেশ উইল নট ইন্টারেস্টেড ইন এ ওয়্যার। আমাদের গ্রোথ খুব ভালো এবং আমাদের কোনো শত্রু নাই। মিয়ানমার আমাদের শত্রু না, রোহিঙ্গারাও আমাদের শত্রু না, মিয়ানমারের সাথে এখনও আমাদের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আছে। এখনও আমরা চাল আনছি, এখনও ওখান থেকে গরু আসে, এমনকি পেঁয়াজ পর্যন্ত আসে। তাই আমরা কোনো যুদ্ধে আগ্রহী নই। এবং আমরা সঠিক পথেই আছি। এ জন্যই আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক এলায়েন্স এবং ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোডের মেম্বার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘এই জায়গা থেকে আমি ভারত ও চীনের মধ্যে যে লড়াই হচ্ছে, সেখানে যেতে চাই না। চীন বা ভারতের শত্রু আমার শত্রু আমাদের শত্রু না। চীনের শত্রু চীনেরই শত্রু। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, এই পলিসিতেই থাকব। আমি কনফ্লিক্টে যেতেই পারি, কিন্তু কনফ্লিক্ট দিয়ে কী করব। হোয়াই সুড উই ফাইট উইথ এ জেনোসাইডাল স্টেট, আমার কী লাভ আছে ওই জায়গায়। তিন মিলিয়ন লোককে আমি রাখতে পারব। কথা হচ্ছে যে, এই তিন মিলিয়ন লোকের জাস্টিসটা আমি রক্ষা করছি। আমি আইসিসি-আসিজেতে কেনো যাচ্ছি? যেহেতু একটা জেনোসাইড হয়েছে, বাংলাদেশে যেহেতু ৭১-এ জেনোসাইড এর শিকার হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্বকে বলতে চাই যে, আর ইউ ইন্টারেস্টেড ইন রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস? আর ইউ ইন্টারেস্টেড ইন ইন্টারন্যাশনাল ল্য অর নট? ইফ ইউ আর নট টেল আস। তবে আজ জাতিসংঘ ভেঙে দাও, সাউথ চায়না সি নিয়ে জাপান বারবার রুলস বেইজড অর্ডার চাচ্ছে যে- ওটা ভেঙে ফেলো, ডব্লিওটিও ভেঙে ফেলো, সবকিছু ভেঙে ফেলো- সেই জায়গাটা স্পষ্ট করা দরকার।’

ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘সে কারণে আমি মনে করি, আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চেঞ্জ করা দরকার, এটাই হচ্ছে মূল কথা। আমি যখন একজন ইউরোপিয়ানের সঙ্গে কথা বলব, দেট ইউরোপিয়ান লুক মাস্ট ডাউন, নট লুকআপ মাই আই টু আই আফটার দ্য রোহিঙ্গা ইনসিডেন্ট। তারা যদি সাপোর্ট করে, ভারত যদি সাপোর্ট করে, সেই ভারত যেনে আমারা সঙ্গে চোখ নিচে নামিয়ে কথা বলে। কারণ হি অর দেট ইন্ডিয়া সাপোর্টিং এ জেনোসাইডাল রিজিম। এই জায়গাতে আমি নজর দিতে চাই, আমি গান্ধিকে নিয়ে আসছি সামনে, হোল মোরালিটিকে নিয়ে আসছি, ভারতের যে সভ্যতা সেটা নিয়ে আসছি, সেই জায়গায় আমার দম্ভ। আমার মনে হয়, সেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যখন চ্যাঞ্জ হবে, উই কেন ডিল উইথ মিয়ানমার, বিলিভ ইট অর নট।’

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন