বিজ্ঞাপন

‘ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে হলে এই সরকারকে সরাতে হবে’

October 9, 2020 | 1:43 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারকে সরাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই ঘটনাগুলোর জন্য। এর চেয়ে লজ্জা আর কী হতে পারে একটা জাতির জন্য? যে জাতি সারাজীবন সংগ্রাম করেছে, যে জাতি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অতীতে লড়াই করেছে, যে জাতি উন্নয়নের জন্য আজকে লড়াই করেছে, সেই জাতিকে আজ ধর্ষণের মতো একটা ভয়ংকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। আজ এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে তাদেরকে (সরকার) সরাতে হবে, আর সময় দেওয়া যাবে না।’

শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। দেশব্যাপী নারী ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও মা-বোনদের সম্ভ্রম হানির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এ মানবন্ধন আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অব্যহতভাবে নারী নির্যাতন, নারী নিপীড়নের মাধ্যমে দেশে যে পরিস্থতি সৃষ্টি হয়েছে, এটা কোনো সভ্য সমাজের চিত্র নয়। এটা সম্পূর্ণভাবে অসভ্য সমাজের চিত্র। যে সমাজে কোনো নৈতিকতা নেই, যে সমাজে কোনো আইনের শাসন নেই, যে সমাজে কোনো বিচার নেই, সেই সমাজের চিত্র এটি। আর এই পরিস্থিতির জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সকার সম্পূর্ণ দায়ী।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যারা আজকে এসব অপরাধ ঘটাচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের দ্বারা, এই সরকারের দ্বারা প্রশ্রয় পাচ্ছে। সে কারণে, এই সমস্ত অপকর্ম করতে তারা আরও উৎসাহিত হচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের সমর্থনে এই সরকার আসেনি। যার ফলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য দুর্বৃত্তদের তারা আশ্রয় দেয় এবং রাষ্ট্রযন্ত্রণকে ব্যবহার করে জোরপূর্বক ক্ষমতায় টিকে থাকে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে চেতনা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণ করবার জন্যে, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ করবার জন্যে, সেই চেতনা আজ ভূলুণ্ঠিত। দুর্ভাগ্য আমাদের— এই সরকার প্রথম থেকেই চেষ্টা করে আসছে ভিন্নমতকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার। আজ কেন আমাদের নারীদের নিরাপত্তার অভাব? কেন আমাদের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে? কেন আমাদের মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে? একটাই মাত্র কারণ— এই সরকার জনগণের সরকার নয়। এই সরকার তাদেরকেই মদত দেয়, যারা এই সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার  জন্য গুন্ডমী করে, সন্ত্রাস করে।’

‘একটা জিনিস আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এই সরকার সবসময় জোর করেই টিকে থাকতে চায়। তারা একটা ফ্যাসিবাদী সরকার। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে, গণতান্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকে,’— বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আজ পত্রিকায় একটা খবর এসেছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে একটা সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। এই সার্কুলারে বলা হয়েছে, উচ্চমধ্যামিক পরীক্ষার্থীদের কেউ সোস্যাল মিডিয়াতে এমন কোনো বক্তব্য দিতে পারবে না, যা সরকারের বিরুদ্ধে যাবে, সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন করবে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে একেবারে কিশোর অবস্থা থেকে এই দেশের ছাত্রদেরকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে। আজকে বিস্মিত হতে হয়— সার্কুলার জারি করে স্কুল পর্যায়ে, কলেজ পর্যায়ে ছাত্রদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ধ্বংস করা হচ্ছে।’

ফখরুল বলেন, ‘শুধু এখানে নয়, আজকে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এমনকি যারা আইন পেশায় আছেন, তারাও মত প্রকাশ করতে পারছেন না। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ, যারা সারাজীবন মুক্ত অবস্থায় বাস করতে চেয়েছে, যারা মুক্ত অবস্থায় বাস করার জন্য সংগ্রাম করেছে, যুদ্ধ করেছে, তারা এই রকম বাংলাদেশ দেখতে চায়নি। তারা দেখতে চেয়েছিল একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যে দেশে মানুষের স্বাধীনতা থাকবে, বহু মত থাকবে, বহু মতের ভিত্তিতে একটা গণতান্ত্রিক সৌরভ থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজ প্রায় এক যুগ ধরে এ দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, তারা মানুষের অধিকারকে ধ্বংস করেছে, মানুষের বেঁচে থাকার যে ন্যূনতম অধিকার, একজন নারীর, একজন শিশুর যে অধিকার— সব অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দলমত নির্বিশেষে, বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ঐক্যবব্ধ হয়ে এই সরকারকে সরাসরি বলতে হবে— আর সময় দেওয়া যাবে না। এখন সরে পড়ো।’

মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নীলোফার চৌধুরী মণি, শাম্মী আক্তারসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন