বিজ্ঞাপন

‘শিশু নির্যাতন রোধে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা’

October 10, 2020 | 5:03 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। তিনি মনে করেন, এটি প্রতিরোধে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। এজন্য সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১০ অক্টোরর) দুপুরে ‘বিশ্ব শিশু দিবস’ উপলক্ষে সেভ দ্য চিলড্রেন আয়োজিত ‘শিশু অধিকার ও সুরক্ষা: করোনাকালীন পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ আহ্বান জানান তিনি।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রামণ শুরু হওয়ার পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি উপজেলাতে শিশুদের জন্য আলাদা করে একটি খাদ্য ফান্ড পাঠিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, আমাদের শিশু পরিবার কেন্দ্র আছে ৮৫টি, কারিগরি শিক্ষার জন্য রয়েছে ৬টি প্রতিষ্ঠান, ছোট-মনি নিবাস আছে ৬টি, ডে কেয়ার রয়েছে ১৩টি, দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে তিনটি। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট উপকারভোগী ১৭ হাজার। সেইসঙ্গে দেশে বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে তিন হাজার ৯২০টি। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ লাখ শিশুকে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি। এছাড়াও আমরা আরও কিছু শিশু নিবাস তৈরির পরিকল্পনা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনার যে মহামারি চলছে, একটা সময়ে এটা কিন্তু আর থাকবে না। কিন্তু শিশুদের বর্তমানে যে অবস্থা (নির্যাতন) তাতে করে এ জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্যই আমরা বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। যেগুলো শিশু অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’

বিজ্ঞাপন

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুশ্রম বা শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই সামাজিকভাবে অবস্থান নিতে হবে। এটা শুধু একা সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা বা সরকারের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। এজন্য সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। যদি সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এগিয়ে আসে তবে শিশুদের অধিকার অবশ্যই সুরক্ষিত হবে। আমরাও বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব।’

সেমিনারে সেভ দ্য চিল্ড্রেনের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান মেনেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার যেসব উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের কার্যকরী উদ্যোগের ফলে দেশে এখন প্রায় ৮০ শতাংশ নাগরিক সচেতন হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রায় ৫০ শতাংশ নাগরিক শিশু অধিকার নিয়ে সোচ্চার বা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কাজ করছে। আর এর মাধম্যে অচিরেই শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

সেমিনারে দেশব্যাপী ন্যাশনাল চিল্ডেন ট্রাস্কফোর্সের (এনসিটিএফ) সদস্যরা শিশুদের পক্ষ থেকে তাদের মতামত তুলে ধরে বলে, ‘শিশুদের অধিকার রক্ষায় সরকার সচেষ্ট থাকলেও সম্প্রতিকালে শিশুদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বেড়েছে।’ তাই এসব নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সরকারের জোরালো ভূমিকার দাবি জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

সেমিনারে সমাজ সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) শেখ রফিকুল ইসলাম শিশুদের অধিকার রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বতর্মান সরকার হচ্ছে শিশু বান্ধব সরকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শিশুদের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিশু আইন প্রণয়ন করছে। আর জাতিসংঘ শিশু সনদ প্রণয়ণ করছে ১৯৯০ সালে। এদিক থেকেও যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে স্পষ্ট দেখা যায় বাংলাদেশ কিন্তু অনেক আগে থেকেই শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করেছে। দেশের প্রতিটি জেলায় বালক এবং বালিকা এতিম শিশুদের জন্য দুইটা করে বিদ্যালয় আছে। ১ লাখ শিশুকে সরকার ২ হাজার টাকা করে দিচ্ছে। দেশে বেশকিছু শিশু উন্নয়ণ কেন্দ্র আছে, যারা শিশুদের আইনি সুরক্ষা দিচ্ছে। এমন অনেক আয়োজন রয়েছে সরকারে। কিন্তু এগুলোও প্রয়োজনের তুলনায় কম। আর এটা সরকারের একার পক্ষেও করা সম্ভব নয়। এজন্য সমাজের সকল অংশীজনদের অংশ নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার শিশু ও মহিলাদের জন্য আলাদা হটলাইন সেল চালু করেছে। প্রতিটি উপজেলায় সাহায্য সেল গঠন করেছে। কিন্তু এসবের মাধ্যমে শিশু ও নারীদেরকে সুরক্ষা দেওয়া শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রয়োজন সামাজিক ভূমিকা। শুধু আইন করে পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমাদের আইনের পাশাপাশি সচেতনও হতে হবে।

শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপের উদ্যোগ নিচ্ছি। তা হলো ঢাকা শহরগামী শিশুদের যে স্রোত এটিকে বন্ধ করা। বর্তমানে ঢাকায় যে সকল শিশুরা আসছে তারা কিন্তু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তারা কিন্তু অনাদরে অবহেলায় মানুষ হচ্ছে। তারা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে নানা প্রকার বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বাবা রিকশা চালাচ্ছে, মা অন্যের বাসায় কাজ করছে। কিন্তু তার শিশুটি কি করছে, কীভাবে মানুষ হচ্ছে- তা কিন্তু কেউ দেখে না। তার কোনো শিক্ষা নেই। সে যখন চোখের জল ফেলে সেটি কেউ মুছে দিচ্ছে না। তার যদি ক্ষুধা লাগে, তাহলে কেউ তাকে খাবার দিচ্ছে না। কেউ যাওয়ার সময় হয়তো তাকে মেরেছে, তার সঙ্গে অন্যায় ব্যবহার করেছে। এই যে অন্যায় সইতে সইতে সমাজের প্রতি তার যে একটা ঘৃণা সৃষ্টি হচ্ছে, সমাজের প্রতি যে একটা অনাস্থার সৃষ্টি হচ্ছে, মানুষের প্রতি যে একটি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হচ্ছে, এখান থেকেই পরবর্তী সময়ে সে যেকোনো অন্যায় ও অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারে। আর তার এমন সুযোগ কাজে লাগাবে দুষ্কৃতিকারীরা।”

সেমিনারে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মুহিবুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে শিশু ও নারীদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে আইন সংস্কারের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে সরকার নতুন আইনের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু বিদ্যমান যে আইনি কাঠামো রয়েছে সেটিও যদি আমরা যথাযথ প্রয়োগ বা কার্যকর করতে পারি তাহলেও কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন