বিজ্ঞাপন

বন্ধু উইনসনই ভারতীয় ছাত্র আতেফকে খুন করে: পিবিআই

March 12, 2018 | 7:14 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম ব্যুরো

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে ভারতীয় শিক্ষার্থী মো. আতেফ শেখ (২৪) খুনের আট মাস পর খুনির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষায়িত এই তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশে পড়তে আসা একই দেশের মাইসনাম উইনসন শিং (২৪) গলা কেটে তাকে খুন করেছে। এরপর নিজে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। সহপাঠীদের মদের পার্টিতে এই ঘটনা ঘটে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (চট্টগ্রাম মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুনের মামলাটির তদন্তভার পাওয়ার পর আমি আতেফের দুই বন্ধু উইনসন শিং এবং গানঞ্জমাই নীরাজকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। নীরাজ প্রথম থেকেই ঘটনা অস্বীকার করে। উইনসন বার বার দাবি করে, ঘটনার বিষয়ে সে কিছুই মনে করতে পারছে না। আমরা আদালতের নির্দেশে মেডিকেল বোর্ড বসাই। ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড জানায়, উইনসন মানসিকভাবে সুস্থ আছে।’

তিনি বলেন, ‘এরপর নীরাজ ও উইনসনের ডিএনএ ও ছোরার বাটের ডিএনএ প্রোফাইল পরীক্ষার ব্যবস্থা করি। পরীক্ষায় নিরাজের সাথে ডিএনএ-এর মিল পাওয়া যায়নি। উইনসনের সঙ্গে পাওয়া গেছে।’

বিজ্ঞাপন

পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম মেট্রো) মো. মঈন উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পাবার পর আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি যে উইনসনই খুনি। এই ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই। এখন উইনসন অস্বীকার করলেও আর কোনো সমস্যা নেই। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তার সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়েছে। তবে খুনের মোটিভ জানার জন্য তাকে আমরা আবারও রিমান্ডে আনব।’

২০১৭ সালের ১৪ জুলাই রাতে নগরীর আকবর শাহ থানার আব্দুল হামিদ রোডে লেকভিউ সোসাইটির হাজী ইউসুফ ম্যানশনের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ গলাকাটা অবস্থায় আতেফ শেখ এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করে গুরুতর আহত উইনসনকে উদ্ধার করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আতেফকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সহপাঠী নিরাজকে এ সময় পুলিশ আটক করে। চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর উইনসনকে মামলায় গ্রেফতার দেখায় পিবিআই।

বিজ্ঞাপন

আতেফ শেখ ভারতের মণিপুর রাজ্যের আব্দুল হামিদ শেখ ও ফারেতোজান শেখের ছেলে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি)-এর এমবিবিএস এর ছাত্র ছিল আতেফ।

সূত্রমতে, খুনি নিশ্চিত হওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই-এর ডিআইজির কাছে সোমবার (১২ মার্চ) একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই ফ্ল্যাটে মদের পার্টির আয়োজন করেন আতেফ ও তার বন্ধুরা। বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন মাইনসাম উইনসন শিং, গানঞ্জমাই নীরাজ, তোঙ্গবরম জয়েস্তানা দেবী, প্রভাকর লাইসরাম, মালেমনগনবা মায়েংবাম, অথোকপাম রোনাল্ড, প্রমোশ চাকমা টুকু এবং সজল চাকমা মুন। এরা সবাই ইউএসটিসির বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র এবং ভারতীয়। ঘটনার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা ৫০ মিনিটের মধ্যে উইনসন শিংয়ের কক্ষে খুন হয়েছেন আতেফ।

অগ্রগতি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মেডিকেল রিপোর্ট, ডিএনএ রিপোর্ট ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়েছেন, প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মাইনসাম উইনসন শিং আতেফ শেখকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ব্যবহৃত প্যান্টের বেল্ট দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

সূত্রমতে, ঘটনা ছয়দিনের মাথায় গত বছরের ২০ জুলাই মামলাটির তদন্তভার আসে পিবিআই-এর কাছে। এরপর কয়েক দফা উইনসনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু প্রতিবারই উইনসন ঘটনার বিষয়ে কিছু মনে করতে না পারার কথা জানায়। পরে ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে তার মধ্যে কোনো সমস্যা না থাকার কথা বলার পরও উইনসন বিষয়টি অস্বীকার করেন।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ আদালত ডিএনএ পরীক্ষার অনুমোদন দেয়। গত ৮ মার্চ সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের ডিএনএ পরীক্ষক মো. হারুন-অর-রশিদ পিবিআইয়ের কাছে পরীক্ষা প্রতিবেদন পাঠায় যাতে খুনি সাব্যস্ত হয়েছেন উইনসন।

সারাবাংলা/আরডি/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন