বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যার আসামির ওপর হামলা, আদালতে মারামারি

October 12, 2020 | 5:35 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় হাজিরা দেওয়ার পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে কয়েকজন আসামির ওপর প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় স্লোগান দিতে দিতে দু’পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে মোক্তার আহমেদ নামে এক আসামিসহ অন্তত তিনজন আহত হন। মারামারিতে জড়িতরা সবাই সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে নতুন আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় চট্টগ্রামের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

সুদীপ্ত হত্যা মামলার আসামি মোক্তারের আইনজীবী শাহেদুল আজম শাকিন সারাবাংলাকে জানান, মোক্তারসহ ১০ জন আসামি সোমবার সকালে ওই আদালতে হাজিরা দেন। হাজিরা শেষে বের হওয়ার পর আদালত কক্ষের সামনেই প্রথমে ২০-২৫ জন মিলে মোক্তারকে টানাহেঁচড়া শুরু করে। হাজিরা দেওয়া কয়েকজন আসামিসহ মোক্তারের কয়েকজন বন্ধু তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। এসময় তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন হামলাকারীরা।

তিনি আরও জানান, এর মধ্যেই অন্তত অর্ধশত তরুণ-যুবক ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে সেখানে আসেন এবং মোক্তারদের মারধর শুরু করেন। কয়েকজন ছোরাও বের করেন। হামলায় আহত মোক্তারসহ তিনজন কোনোরকম ছাড়া পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে ঢুকে যান। মোক্তার নিজেই আদালতকে বিষয়টি জানান। তখন আদালত তাকে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। থানা মামলা গ্রহণ না করলে আদালত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।

বিজ্ঞাপন

শাকিন বলেন, ‘হাজিরা দেওয়ার পর মোক্তার নিজেই আমার কাছে তার ওপর হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। আমি আদালত কক্ষে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমার কথার গুরুত্ব দেননি। পরে যখন সত্যিই হামলা শুরু হয়, পুলিশ সদস্যদের দেখি ভীতসন্ত্রস্ত্র অবস্থায় আদালত কক্ষের ভেতরে জড়ো হয়ে আছেন। আমি হামলা ঠেকানোর অনুরোধ করতে পুলিশের এডিসি-প্রসিকিউশনের কক্ষে যাই। সেখানে তিনি ছিলেন না। পরে কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ আসে। ততক্ষণে হামলাকারীরা চলে যায়।’

নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে মোক্তারের ওপর হামলা হয়। তারপর আসামিদের দু’পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। মোক্তার ও আরিফ নামে দুজন সামান্য আহত হয়েছেন। মোক্তারের বন্ধু জাবেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’

আহত মোক্তার বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার কোতোয়ালি থানায় জমা দিয়েছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা নোবেল চাকমা।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে যে ঘটনাটি ঘটে গেল, এটি খুবই ন্যাক্কারজনক। আদালতে যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে সেটা উদ্বেগের। আমরা এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।’

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

ঘটনায় জড়িতরা সবাই নগরীর লালখান বাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে দিদারুল আলম মাসুমের নির্দেশে সুদীপ্তকে খুন করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। মিজানুর রহমান নামে এক আসামিও জবানবন্দিতে ‘বড় ভাই’ মাসুমের নির্দেশে খুনের কথা উল্লেখ করেন বলে গণমাধ্যমে তথ্য এসেছে।

পরে অবশ্য আসামিদের মধ্যে দু’টি পক্ষ তৈরি হয়। আইনজীবী শাহেদুল আজম শাকিন বলেন, ‘আসামি মোক্তার আদালতে ১৬৪ ধারায় একটি জবানবন্দি দেন। এছাড়া সুদীপ্তের ওপর হামলার ভিডিও তিনি ফেসবুকে ছেড়ে দেন। এতে আসামিদের একপক্ষ তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। মূলত তারাই মোক্তারের ওপর হামলা করেছে।’ মোক্তারের ওপর হামরায় জড়িতরা দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী বলে অভিযোগ করেন আইনজীবী শাকিন।

বিজ্ঞাপন

সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট দিদারুল আলম মাসুমকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছিল তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। মামলাটি এখনও তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন