বিজ্ঞাপন

‘সবার সুরক্ষা না হলে কেউ সুরক্ষিত নয়’

October 12, 2020 | 10:37 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সম্প্রতি করোনা নিয়ে মানুষের ভয় এবং প্রস্তুতি হারিয়ে যাবার মতো বিষয় দেখছি। আমি অনুরোধ করছি, সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কখনোই কোনও রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকে সুরক্ষিত নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ সুরক্ষিত নয়। তাই সবাই মিলেই সুরক্ষিত থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার ( ১২ অক্টোবর) ‘করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি ও এর জিন রূপান্তর’ শীর্ষক রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর এক যৌথ গবেষণার ফলাফল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কখনোই কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কার্যক্রম নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে কোভিড নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হবে।  যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকে সুরক্ষিত নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ সুরক্ষিত নয়। তাই সবাই মিলেই সুরক্ষিত থাকতে হবে।

তিনি বলেন, কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত না হতে চাই, তাহলে একমাত্র প্রটেকশন দিচ্ছে এবং সংক্রমণের আশঙ্কা কমাবে, যদি এর সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব এবং বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করে নেই, তাহলেই মাস্ক প্রটেক্ট করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, জনসমাগমে ভিড় করা যাবে না।  অত্যাবশ্যকীয় হলেই কেবল বাড়ি থেকে বের হতে হবে। তাই আমি অনুরোধ করছি, সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। কারন, এগুলোই কেবলমাত্র দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ আসবে কী আসবে না, তার আগে প্রয়োজন দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ যেন না আসে, সে বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি জোর দিতে হবে।

হার্ড ইমিউনিটি বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, হার্ড ইমিনিউটি হবে বা হয়েছে, এখনও আমাদের অনেক কিছু জানতে হবে। অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা। আমরা এখনও কোভিড-১৯ সম্পর্কে কিছুই জানি না। এতদিন জানতাম লক্ষণ-উপসর্গহীন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে করোনা ছড়ায় না। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, তাদের থেকেও করোনা ছড়ায়। নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গবেষণা থেকে নতুন বিষয় জানতে পারছি। তাছাড়া এতোদিন ধরে আমরা জানতাম পুরুষরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছে, মহিলাদের মধ্যে তুলনামূলক কম। কিন্তু এই জরিপ থেকে দেখা গেছে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে খুব একটা বেশি পার্থক্য নেই। সববয়সের মানুষেরাই কিন্তু আক্রান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি করোনা নিয়ে মানুষের ভয় এবং প্রস্তুতি হারিয়ে যাবার মতো বিষয় দেখছি। কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত না হতে চাই, তাহলে একমাত্র প্রটেকশন দিচ্ছে এবং সংক্রমণের আশঙ্কা কমাবে, যদি এর সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব এবং বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করে নেই, তাহলেই মাস্ক প্রটেক্ট করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, কারও লক্ষণ-উপসর্গ থাকে তাকেই কেবল শনাক্ত করে আমরা আইসোলেশনে নিচ্ছি। কিন্তু যার লক্ষণ-উপসর্গ নেই, তাকে আক্রান্ত বলে ধরছি না। তাই কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নন—সেটা না ধরে প্রত্যেকের মাস্ক পরা উচিত এবং সঠিকভাবে পরা উচিত।

স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। এখনও তৃতীয় ফেইজের ট্রায়ালে আছে। তাই ভ্যাকসিন কবে হবে সেটাও সময়সাপেক্ষ বিষয়। সুতরাং নিরাপদে থাকার জন্য আমাদের সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যারা পজিটিভ তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৮২ শতাংশের কোনো লক্ষণ-উপসর্গ নেই। তার মানে এমন হতে পারে, আপনি যার পাশে বসে আছেন তিনি হয়তো পজিটিভ, কিন্তু লক্ষণ-উপসর্গ না থাকার কারণে বোঝা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, যখন কারও লক্ষণ-উপসর্গ হয় আমরা তাকেই শনাক্ত করে আইসোলেশন করার জন্য জোর দিয়ে থাকি। কিন্তু যার লক্ষণ-উপসর্গ নেই তার বিষয়ে বোঝা কিন্তু কষ্টসাধ্য। কিন্তু যার লক্ষণ-উপসর্গ নেই, তাকে আক্রান্ত বলে ধরছি না। সুতরাং কার আছে, কার নেই সেই চিন্তা না করে আমাদের প্রত্যেকের মাস্ক পড়া উচিত। এর কোনো বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাত ধোয়ার অভ্যাস প্রতিনিয়ত করে যেতে হবে।

বিজ্ঞাপন

যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকে সুরক্ষিত নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ সুরক্ষিত নয়। তাই সবাই মিলেই সুরক্ষিত থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।

সেমিনারে জানানো হয়, গবেষণার জন্য ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্য থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ২৫টি ওয়ার্ড বেছে নেওয়া হয়। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একটি মহল্লা বাছাই করা হয়। প্রতি মহল্লা থেকে ১২০টি খানা জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া আটটি বস্তিকে এ জরিপে যুক্ত করা হয়। ঢাকা শহরের সাধারণ খানার নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত। আর বস্তির মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত।

করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা অনুমান করছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল। গবেষকেরা বলছেন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা ও টিকা দেওয়ার ব্যাপারে এসব তথ্য কাজে লাগবে।

অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন আইইডিডিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএইড মিশনের পরিচালক ডেরিক এস ব্রাউন ও আইসিডিডিআরবি’র বাংলাদেশ নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. তাহমিদ আহমেদ।

সারাবাংলা/এসবি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন