বিজ্ঞাপন

জীবন বাঁচায় পোষা প্রাণী

October 14, 2020 | 7:15 pm

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রাণী পোষা বা দত্তক নেওয়ার মানে শুধু একটি প্রাণীর জীবন রক্ষা করাই নয়, নিজেকেও রক্ষা করা। অর্থাৎ নিজের জন্য একটি সুস্থ আর সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা। এখন বিশ্বব্যাপি বেড়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুহার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণই হার্ট ও ফুসফুসের রোগ। আর এই হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেই ভূমিকা রাখে পোষা প্রাণী। এভাবে তারা মানুষের আয়ু বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।  কীভাবে তা দেখে নেই চলুন।

বিজ্ঞাপন

স্ট্রেস কমায়
সারাদিনের কাজের শেষে ক্লান্তি দূর করতে জুড়ি নাই আপনার পোষা কুকুর, বেড়াল বা অন্য প্রাণীর। আপনাকে নানাভাবে বিনোদিত করবে সে। দেখাবে ভালোবাসা আর মমত্ব। এভাবে সে আপনার মনের গভীরে আটকে থাকা কোন দুঃসহ যন্ত্রণা বা নেতিবাচক দিক বের করে আনবে। এমনকি পোষা প্রাণী পরিবারের সদস্য বা ভালোবাসার মানুষের চেয়েও বেশি মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমায়। নিউ ইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেসপূর্ণ কোন কাজের সময় পোষা প্রাণী সঙ্গে থাকলে মানুষ অনেক বেশি চাপমুক্ত থাকে। তা পরিবারের সদস্য, সঙ্গি বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর চেয়েও বেশি।

এমনকি দেখা গেছে পোষা প্রাণী পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস সিনড্রোম দূর করতেও সাহায্য করে। যুদ্ধফেরত সৈনিকদের মধ্যে পিটিএসডি বেশি দেখা যায়। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে দেখা গেছে। আমেরিকায় ‘কে৯ ফর ওয়ারিয়র’স’ নামক এক সংগঠন যুদ্ধফেরত সৈন্যদের জন্য এমন কুকুর সরবরাহ করে।

রক্তচাপ কমায়
পশু-পাখি পুষলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে। এর কারণ, পোষা প্রাণীর পেছনে আপনাকে অনেকটা সময় দিতে হয়। দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। আর অ্যাকটিভ থাকার কারণেই রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। তাই যারা সেডেন্টারি বা অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত তাদের জন্য প্রাণী পোষা হতে পারে দারুণ স্বাস্থ্যকর।
আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ থেকে ৭৫ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে চার হাজার ব্যক্তির উপর চালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে বেড়াল পালেননা এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বেশি আর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার হার ৩০ শতাংশ বেশি।

বিজ্ঞাপন

রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়
পোষা প্রাণীর মালিকদের মধ্যে বিশেষত পুরুষদের রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা তুলনামূলক কম থাকে। রক্তে এগুলোর মাত্রা বেশি থাকলে হার্টে ব্লক ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কুকুরের মালিকদের ক্ষেত্রে হার্টে ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কারণ, কুকুরদের সঙ্গে অনেক দৌড়াদৌড়ি ও খেলাধুলা করতে হয়। পাঁচ হাজার ২০০ জন কুকুরমালিকের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখে গেছে কুকুর নাই এমন ব্যক্তিদের চেয়ে তাদের শারীরিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার হার ৫৪ শতাংশ বেশি।

ব্যাথা কমায়
পশুপাখি পালার কিছু অসুবিধা থাকলেও সুবধাই বেশি। যেমন আর্থ্রাইটিস, মাইগ্রেন বা অন্য কোন কারণে যাদের ক্রনিক ব্যাথা আছে তাদের ব্যাথা কমানোয় ভূমিকা রাখে পোষা প্রাণী। লয়োলা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখে গেছে হাড়ের জয়েন্টে অপারেশনের পর থেরাপি দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের সাহায্য নেওয়ার পর দ্রুত সুস্থ হয়েছেন। এক্ষত্রে যারা কুকুরের সাহায্য নেননি তাদের সুস্থ হতে সময় বেশি লেগেছে। পিটসবার্গের একটি ব্যাথা নিরাময় ক্লিনিকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে কুকুরের সঙ্গে সময় কাটানো রোগীরা সময় না কাটানো রোগীদের চেয়ে কম ব্যাথা অনুভব করেছেন। ৮৪ জন রোগী চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার আগে ১৫ মিনিট কুকুরের সঙ্গে খেলাধুলা করেন যারা বাকি ৪৯ জন রোগীর চেয়ে ব্যাথা, ক্লান্তি ও স্ট্রেস কম দেখা দেয়।

বিষণ্ণতা কমায়
মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কুকুর পোষেন, তাদের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার হার অনেকটাই বেশি। অন্য প্রাণী পুষলেও তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।পোষা প্রাণী নিঃশর্ত ও সহজ ভালোবাসা প্রদর্শন করে যা কোন ব্যক্তির নিজের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এছাড়াও পোষা প্রাণী আপনার মনযোগ ও দায়িত্ব প্রত্যাশা করে যা আমাদের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ও মনযোগ বাড়ায়। সঙ্গ দেওয়ার পাশাপাশি এরা প্রতিদিনের জীবনে নিয়মতান্ত্রিকতা নিয়ে আসে যা বিষণ্ণতা কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে পোষা প্রাণী আমাদের শরীরে ফিল-গুড অর্থাৎ মন ভালোকারী হরমোন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কুকুর ও বেড়াল আমাদের মস্তিষ্কে সেরাটোনিন ও ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায় যা বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখে।

বিজ্ঞাপন

অ্যালার্জি কমায়
বাড়িতে কুকুর থাকলে তা শিশুদের অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা কমায়। পরবর্তীতে অ্যাজমা হওয়ার হারও কমায়। এসব ছাড়াও যেসব বাড়িতে একের অধিক পোষা প্রাণী আছে, সেসব পরিবারের শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে বলেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে।

পশুপাখি পুষলে তার আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এভাবে তা আমাদের জীবন বাঁচায়। তাই সুস্থ সুন্দর দীর্ঘ জীবনের জন্য কোন প্রাণী দত্তক নিন।

সারাবাংলা/আরএফ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন