বিজ্ঞাপন

খুনিরা বাইরে: ‘এসআইয়ের যোগসাজসে জেল খাটছেন নির্দোষ নারী’

October 15, 2020 | 4:35 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর কদমতলী এলাকায় ১১ বছরের কিশোর রাব্বীকে (১১) শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় খুনিদের আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে। কিশোর রাব্বীর মায়ের দাবি কদমতলী থানার এসআই শহিদুল মামুন যোগসাজস করে প্রকৃত হত্যাকারীদের না ধরে কিশোর রাব্বীর নিরপরাধ মামা, মামি ও মামাতো ভাইকে ধরে জেলে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দুই-আড়াইমাস পর মামা সিরাজ ও মামাত ভাই সাগর হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পেলেও রাব্বীর মামি সাজেদা এখনও জেলহাজতে রয়েছেন। অথচ হত্যাকারী সুদের ব্যবসায়ী কামাল ও তার স্ত্রী সালমা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত কিশোর রাব্বির মা জবেদা খাতুন, মামা সিরাজ ও মামাতো ভাই সাগর খুনের আগে ও পরের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

রাব্বির মামা সিরাজ বলেন, ‘রাব্বি সাত বছর ধরে আমার চায়ের দোকানে কাজ করত। পরিবারের সবাই আমরা চায়ের দোকান ও মুদি দোকান করি। স্থানীয় সুদ ব্যবসায়ী কামাল এবং আমরা একই বাড়িতে থাকি। কামাল মাঝে-মধ্যেই রাব্বির কাছে বাকি খেত। টাকা-পয়সা দিত না। রাব্বিকে বুদ্ধি দিতো দোকানের টাকা-পয়সা চুরি করে তাদের কাছে জমা রাখতে। মামার দোকান ছেড়ে তার মুদি দোকানে কাজ করতে বলত। এ সব কথা রাব্বি মামাকে বলে দিতো। মামা কামালকে এ সব বিষয়ে বকা দিলে কামাল জানায়, এরপর কিছু বলে দিলে রাব্বিকে মেরে ফেলবে।’

বিজ্ঞাপন

গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে রাব্বি বাসায় খেতে যায়। এ সময় বাসায় মামা, মামিসহ পরিবারের কেউ ছিল না। সবাই দোকানে ছিল। তখন একা পেয়ে কামাল ও তার স্ত্রী সালমা বালিশ চাপা দিয়ে রাব্বীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

হত্যার পর রাব্বির মরদেহ বাথরুমে ঝুলিয়ে রাখেন খুনিরা। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে রাব্বির নিথর দেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাব্বিকে মৃত ঘোষণা করে।

রাব্বির মা জবেদা বেগম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে ওইদিন রাতে আমি ও আমার স্বামী লিটন মিয়া কদমতলী থানায় মামলা করতে যাই।’

বিজ্ঞাপন

জবেদা আরও বলেন, ‘থানার ডিউটি অফিসার এসআই শহীদুল্লাহ মামুনকে বিষয়টি জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কামালের বাসায় পুলিশের টিম নিয়ে হাজির হন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কামাল পালিয়ে যান। পরে বাসা থেকে খুনি কামালের স্ত্রী সালমা বেগমকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া এবং আমার ভাবি সাজেদা বেগমের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে থানায় নিয়ে যান।’

এসআই একটি মামলা লিখে আমার স্বামী মো. লিটন মিয়ার স্বাক্ষর নেন। এরই মধ্যে ফয়সাল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে এসআই শহীদুল্লাহ মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কামাল।

ওই রাতেই থানা পুলিশকে ম্যানেজ করার জন্য ফয়সালকে তিন লাখ ৪১ হাজার টাকা ও এসআই শহীদুল্লাহ মামুনকে ছয় লাখ টাকা দেন কামাল। এর বিনিময়ে কামালের স্ত্রী সালমা ছাড়া পান। কিন্তু আমার ভাবি সাজেদাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

রাব্বীর মা বলেন, ‘এজাহার কপিতে এসআই শহীদুল্লাহ মামুন কী লিখেছে তা আমরা জানতে পারিনি। পরে ফয়সাল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমার ভাই সিরাজ ও তার ছেলে সাগরকে ডেকে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি, এজাহার কপিতে ওই এসআই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার ভাই সিরাজ ও তার স্ত্রীর নাম দিয়েছে। শুধু তাই নয় আমার ভাই সিরাজ ও ভাগ্নে সাগরকে থানায় নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের ব্যাপক মারধর করে। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যায় এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লেখা কাগজে ভাতিজা সাগরের স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। এরইমধ্যে দীর্ঘ দুইমাসের বেশি সময় পর্যন্ত জেল খেটে ভাই ও ভাতিজা বের হলেও ভাবি সাজেদার এখনও জামিন হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে, মূল হত্যাকারী কামালের স্ত্রী সালমা বেগম থানায় থাকাকালীন মোবাইল ফোনে আমাকে ও আমার স্বামীকে ফোন দিয়ে তারা জানায় রাব্বিকে রাগের মাথায় তারা শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। বিনিময়ে তাদের ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানায়। আমরা বিষয়টি এসআই মামুনকে জানাই। এসআই মামুনকে মোবাইলের রেকর্ডিং শোনাই। তিনি জানান, এ সব দিয়ে কোনো লাভ হবে না। এরপর অসংখ্যবার কামাল ফোনে রাব্বি হত্যা মামলায় তাদের না জড়াতে বলে মোটা অংকের টাকার অফার করে এবং সে তার মুদি দোকানটি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়ে স্ব-পরিবারে পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তারা পলাতক থেকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। যা আমাদের কাছে রেকর্ড করা আছে।

রাব্বি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কামাল ও তার স্ত্রী সালমা আক্তার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শহীদুল মামুনের যোগসাজসে নিহতের মামা-মামী ও মামাতো ভাইকে ফাঁসিয়ে জেল খাটানোর প্রতিবাদে এবং কামাল ও তার স্ত্রী সালমা আক্তারের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়াও আমার ভাই-ভাবি ও ভাতিজার মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে ঘটনায় জড়িত কদমতলী থানার তৎকালীন এসআই শহীদুল্লাহ মামুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বলেন রাব্বির মা জবেদা খাতুন।

এ দিকে টানা লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে ফয়সাল বলেন, ‘আমি তাদের উপকার করতে গিয়েছিলাম। এখন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আর টাকা লেনদেনের সময় আমি সেখানে ছিলাম না।’

অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শহীদুল্লাহ মামুনকে ফোন করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন