বিজ্ঞাপন

থ্রি পাস শ্বশুর, টেন পাস জামাই: চিকিৎসা দিচ্ছেন এমবিবিএস সেজে!

October 19, 2020 | 6:38 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: টেনে টুনে টেন পাস করেছেন জাহিদুল ইসলাম, এসএসসি উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তিনিই এমবিবিএস ডাক্তার সেজে লিখছেন প্রেসক্রিপশন। তার শ্বশুর নুর হোসেন। তিনি পড়ালেখা করেছেন ক্লাস থ্রি পর্যন্ত। তিনিও সেজেছেন এমবিবিএস ডাক্তার। জামাইয়ের লেখা প্রেসক্রিপশনে সই করেন তিনি। ঠিকমতো ওষুধের নাম না বলতে পারলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে সেবা দিচ্ছেন এই জামাই-শ্বশুর। রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘পঞ্চগড় ডেন্টাল ক্লিনিক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও।

বিজ্ঞাপন

অভিযান চালিয়ে জামাই-শ্বশুরের এই ভুয়া ক্লিনিকের সন্ধান বের করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (১৯ অক্টোবর) অভিযানে তাদের দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু সারাবাংলাকে বলেন, ‘পঞ্চগড় ডেন্টাল ক্লিনিক’ পরিচালনার আড়ালে অন্য চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করা প্রেসক্রিপশন প্যাডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন তারা। ভুক্তভোগী কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাড়ার ওই ক্লিনিকে অভিযান চালিয়েছি। অভিযানে অভিযুক্ত শ্বশুর নূর হোসেনকে দুই বছর ও তার জামাতা জাহিদুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পঞ্চগড় ডেন্টাল কেয়ার নামক প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের সব অভিযোগের প্রমাণই পাওয়া যায় অভিযানে। এখানে এসে দেখা যায়, অন্য ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে সার্জারিসহ দাঁতের সব ধরনের চিকিৎসা দিচ্ছেন নূর হোসেন ও জাহিদুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

অভিযানের সময় র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া চিকিৎসক নূর হোসেন ওষুধের নামই ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারছিলেন না। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তার জামাতা জাহিদুল ইসলাম এর আগে পাথর কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরে সেই চাকরি ছেড়ে শ্বশুরের সঙ্গে এসে ডেন্টাল ক্লিনিকটিতে বসতে থাকেন, তিনিও নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিতেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, জিহান কবির নামক এক চিকিৎসকের প্যাডে তারা সই করে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। জামাই জাহিদুল ওষুধের নাম লিখতেন, আর শ্বশুর নুর হোসেন শুধু সই করতেন প্রেসক্রিপশনে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া চিকিৎসা দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।

অভিযানের সময় বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, দালালদের মাধ্যমে তারা জেনেছেন, ওই ডেন্টাল কেয়ারে অভিজ্ঞ চিকিৎসক বসেন। অনেকে চিকিৎসাপত্রও নিয়েছেন। কিন্তু তারা এটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, তৃতীয় ও দশম শ্রেণি পাস দু’জন ব্যক্তি চিকিৎসক সেজে তাদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, নূর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণায় জড়িত। তিনি আগে চিকিৎসকদের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে তিনি চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসাপত্র দিতেন। বছরখানেক আগে তিনি নিজেই বেশি লাভের আশায় এই ‘পঞ্চগড় ডেন্টাল কেয়ার’ গড়ে তোলেন।

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন