বিজ্ঞাপন

‘মৃত নবজাতক জীবিত’ হয়ে ওঠায় চিকিৎসকদের ব্যর্থতা রয়েছে: ঢামেক

October 20, 2020 | 7:02 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পর দাফন করার সময় নবজাতকের নড়েচড়ে ওঠার ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসকদের ব্যর্থতা খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে চিকিৎসক ও নার্সদের চেষ্টায় কোনো ঘাটতি ছিল না বলেও মন্তব্য করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ওই নবজাতককে মৃত ঘোষণা করা ও পরে কবরস্থানে নবজাতকটির জীবিত হয়ে ওঠার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে প্রতিবেদন নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের সভাকক্ষে ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক সংবাদ সম্মেলন করেন।

পরিচালক বলেন, শাহিনুর বেগম নামে ওই রোগীকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন তার অবস্থা ভালো ছিল না। ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে চলে যাচ্ছিল। শিশুটি ২৬ সপ্তাহে অপরিণত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়। মায়ের গর্ভে ৩৮ সপ্তাহ পার হলে সন্তান সুস্থ ও পরিপূর্ণ হয়। সে হিসাবে এই শিশুটি স্বাভাবিক অবস্থার অনেক আগেই ভূমিষ্ঠ হয়েছে।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর চিকিৎসক-নার্সরা নিয়ম অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করেছেন। তবে নবজাতকটির পালস বা হৃদস্পন্দন পাননি। তার শ্বাস-প্রশ্বাস, নড়াচড়া, কান্নাকিছুই পাওয়া যায়নি। ঘণ্টাখানেক তাকে পর্যবেক্ষণে রেখে কয়েকটি বেসিক পরীক্ষার পরই তাকে মৃত ঘোষণা করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর আরও ৩ ঘণ্টা নবজাতক তাদের কাছেই ছিল। পরে দাফনের জন্য নিয়ে গেলে সেখানে নড়েচড়ে ওঠে। এটি একটি বিরল ঘটনা। এরপর কবরস্থান থেকে শিশুটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবার। বিষয়টি জানার পর এনআইসিইউতে রাখা হয় নবজাতককে।

ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ঘটনার পরপরই তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটিই আজ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন ও কিছু সুপারিশ করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে, জন্মের পর নবজাতকটির কোনো ‘সাইন অব লাইফ’ ছিল না। এটি একটি বিরল ঘটনা। তবে চিকিৎসকদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। মা ও নাবজাতক দু’জনকেই বাঁচানোর চেষ্টা ছিল তাদের। আনফরচুনেটলি এমনটি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিয়ে পরিচালক বলেন, যেহেতু শিশুটি পরে জীবিত হয়েছে, তার অর্থ শিশুটি জীবিতই ছিল। ফলে এখানে চিকিৎসকদের ব্যর্থতাও রয়েছে। কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। আমরা এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেজন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই ঘটনায় আদালতে রিট হয়েছে। সেখান থেকে আরও যদি তদন্ত করার বিষয় আসে, তাহলে সেটিও করা হবে। তবে এখনই আমরা কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ আনছি না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, আমাদের অনেকগুলো প্যারামিটার আছে, যেগুলো দিয়ে আমরা কোনো নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। সবই করা হয়েছিল, তবুও তারা নবজাতকটির কোনো ‘সাইন অব লাইফ’ পাননি। ওই সময়ে যে চিকিৎসক ও নার্সরা কাজ করেছেন, তারা হয়তো কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি।

শিশুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে তদন্ত কমিটি ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জী বলেন, শিশুটিকে এখন অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। স্যালাইন চলছে। আগের চেয়ে ভালো আছে। আজ তাকে মুখে খাবার খাওয়ানো শুরু করা হয়েছে। শিশুটি বেঁচে গেলে মিরাকল হবে। আমরা আশাবাদী, তবে এখনো ইনফেকশনের ভয় আছে। শিশুটিকে এখনো আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

ডা. মনীষা আরও বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে আমাদের মনে হয়েছে, এটি অনিচ্ছাকৃত ভুলের মধ্যে পড়েছে। তবে আমাদের এখানে ‘নিওন্যাটাল লিক’ ও ‘নিওন্যাটাল পেশেন্ট মনিটর’ নেই। এগুলো থাকলে এরকম ঘটনা ঘটনার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।

ঢামেক হাসপাতালে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) ভোরে ওই নবজাতকটি ভূমিষ্ঠ হয়। নবজাতকটির বাবা ইয়াছিন জানান, ৬ মাস ১৬ দিনের অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী শাহিনুর বেগমকে গত বুধবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। তার রক্তচাপ অনেক বেশি ছিল। ওই অবস্থায় তাকে জরুরিভিত্তিতে ডেলিভারি করানো হয়। তবে হৃদস্পন্দন না থাকায় শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

শুক্রবার সকালে শিশুটিকে নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে ভর্তি করাতে গেলে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় ইয়াছিন তাকে রায়েরবাগ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করতে নিয়ে যান। দাফনের আগে কবর খোঁড়ার শেষ পর্যায়ে হঠাৎ কান্নার শব্দ পেলে তারা বুঝতে পারেন, শিশুটি নড়াচড়া করছে। পরে তাকে ফের ঢামেক হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়।

এ ঘটনায় শুক্রবার হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন— হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শিখা গাঙ্গুলি, অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুব্রত কুমার মন্ডল ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন)।

পরে তদন্ত কমিটির সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথা বলে শনিবার (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত’ নবজাতকের ‘জীবিত’ হয়ে ওঠার এই ঘটনাটি ‘মিরাকল’।

সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন