বিজ্ঞাপন

করোনার ধাক্কা সামলে ফের চাঙ্গা পাহাড়ের পর্যটন

October 21, 2020 | 8:23 am

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ধাক্কা সামলে ফের পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পার্বত্য রাঙ্গামাটি। কোভিডের প্রভাবে দীর্ঘসময় পর্যটনে স্থবিরতা কাটানোর পর পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ায় ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করেছে পর্যটক। তাতে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পর্যটন। খাতসংশ্লিষ্টদের মাঝেও ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূলত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই পার্বত্য রাঙ্গামাটিতে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম, চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরই মধ্যে পাহাড়ি এই জেলার প্রায় সব পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুদের সমাগম বাড়তে শুরু করেছে। জেলার ‘দার্জিলিং’খ্যাত সাজেক ভ্যালি, ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’খ্যাত পর্যটন ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, ধুপপানি ঝরনা, সুবলং ঝরনাসহ অন্যান্য পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে রাঙ্গামাটি পর্যটন ঝুলন্ত সেতুতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, করোনার ভয় উপেক্ষা করেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে এসেছেন। কেউ বন্ধু-বান্ধব, কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌ-ভ্রমণও করছেন। এসময় কথা হয় ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ইসমাইল আলীর সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার ভয়কে যেমন উড়িয়ে দেওয়া যায় না, ঠিক তেমনি ঘরবন্দি থাকার অবস্থাও আর নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা চাকরির সবকিছুই নিউ নরমাল লাইফে চলছে। আমরাও তাই ক’দিনের ছুটি নিয়ে পাহাড়ে বেড়াতে এসেছি। বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরিসহ অন্যান্য স্পট ঘুরে রাঙ্গামাটি এলাম। এখান থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক যাব।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম আসা একটি পিকনিক দলের একঝাঁক তরুণ-তরুণী জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় চট্টগ্রামে ঘোরাঘুরি করতে তেমনটা ভালো লাগে না। তাই ভাবলাম পাহাড়েই যাই। তাই বন্ধুরা ঘুরতে এলাম, এখন ঝরনায় পানি থাকায় ঝরনায় বেড়াতে গিয়ে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি।

সাজেকে বেড়াতে আসা আজিজুর রহমান বলেন, করোনায় বাসাবাড়িতে বন্দি থেকে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছি। সেই অবসাদ কাটাতেই সাজেক এলাম। সাজেকের প্রেমে আমরা মুগ্ধ। সাজেকে এসেই বুঝলাম কেবল আমরাই না, কোনো ভ্রমণপিসাসুরা এখন আর ঘরে নেই। আমরা আসার এক সপ্তাহ আগে রুম বুকিং দিয়েও রুম পেতে কষ্ট হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বান্দরবান থেকে রাঙ্গামাটির সুবলং ঝরনা থেকে ঘুরে এসে অং চিং হ্লা মারমা বলেন, এই পাহাড়েই আমার বেড়ে ওঠা। শৈশব-কৈশোরে কত না ঘুরে বেড়িয়েছি। অথচ এখন চাকরির কারণে ব্যস্ত হয়ে সেইসব দিন হারিয়েছে। দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল, এখানে এসে ঘুরে বেড়ালাম। ঝরনার জলধারার শরীর জুড়ালাম।

সুবলং শিলারডাক ঝরনার (বড় ঝরনা) টিকেট বিক্রেতা জানান, যেহেতু এখন ঝরনায় পানি আছে তাই পর্যটকরাও এদিকে আসছেন। তবে শুক্রবার-শনিবার ভ্রমণপ্রেমীদের চাপ কিছুটা বাড়ে। গত দুই দিনে গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে। তবে ঝরনার পানি শুকিয়ে গেলে তা শূন্যে নেমে আসবে।

পর্যটন খাতের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু হোটেল-মোটেল মালিকরা। পর্যটন ঝুলন্ত সেতু এলাকায় স্থানীয়ভাবে তৈরি তাঁত বস্ত্র বিক্রেতা মেরিনা চাকমা বলেন, যখন পর্যটন ঝুলন্ত সেতু বন্ধ ছিল, আমরা বলতে গেলে বেকার ছিলাম। এখন সেতু খুলেছে। পর্যটকরা আসছেন। বেচাকেনাও বেড়েছে। কুয়াশা চাকমা নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, এখন বিশেষ করে চাদর জাতীয় কাপড় বিক্রি হচ্ছে, যেহেতু শীত দরজায় কড়া নাড়ছে।

ট্যুরিস্ট বোট ব্যবসায়ী প্রমথ দাশ জানান, সাধারণত রাঙ্গামাটি এলে পর্যটকরা কাপ্তাই হ্রদে ঘুরে বেড়াতে চান। এতে করে তাদের প্রথম গন্তব্যই থাকে সুবলং ঝরনা। তাই সুবলং কেন্দ্রিক ট্যুরিস্ট বোট বেশি ভাড়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইজের ট্যুরিস্ট বোট বিভিন্ন প্যাকেজ বিভিন্ন মূল্যে ভাড়া হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

রাঙ্গামাটি পর্যটন বোটঘাটের ম্যানেজার মো. রমজান আলী বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০টি ট্যুরিস্ট বোট সুবলংয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অনেকে ঘণ্টাখানেকের জন্য বোট ভাড়া নিয়ে কাপ্তাই হ্রদেই ঘুরে বেড়ান। এছাড়া অন্যান্য ঘাট থেকেও ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া নেওয়া যায়। আসলে রাঙ্গামাটি এসে কাপ্তাই হ্রদে ঘুরে না বেড়ালে যে কারও আক্ষেপ থেকেই যাবে।’

পাহাড়ের বর্তমান পর্যটন পরিস্থিতি সর্ম্পকে রাঙ্গামাটি শহরে অবস্থিত হোটেল মতি মহলের স্বত্বাধিকারী মো. শফিউল আজম বলেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে আমরা চেষ্টা করছি। মোটামুটি পর্যটকদের রাঙ্গামাটিতে সমাগম বাড়ছে। আশা করছি শীত বাড়লে পর্যটক আরও বাড়বে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পর্যটনের দিকে নজর দিলে করোনার কারণে আমাদের যে ক্ষতি গত কয়েক মাসে হয়েছে, তা শীত মৌসুমেই কাটিয়ে ওঠা যাবে।

সাজেক কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, সাজেকে মোটামুটি এখন সব কটেজ-রিসোর্টেই পর্যটকরা উঠছেন। অনেকেই অগ্রিম বুকিং মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বলা যায় করোনার ধাক্কা মোটামুটি সামলে সাজেক চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।’

সুপর্ণ আরও বলেন, সাজেকে প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটন আসেন, থাকেন। তবে শুক্র-শনিবারে এ সংখ্যা বেড়ে যায়। যেভাবে পর্যটকরা আসছেন, আমরা সন্তুষ্ট। শীতে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন