দুর্যোগে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, ত্রাণদাতা ও স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ব্র্যাক ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) পাশে দাঁড়াচ্ছে ফেসবুক। দুর্যোগে ডিজিটাল সহায়তা দিয়ে প্রস্তুত রাখতে ফেসবুক একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, যেন দুর্যোগ কবলিত মানুষকে সহায়তা করার জন্য ফেসবুকের টুলস ও প্রোডাক্টগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। বিডিআরসিএস ও ব্র্যাক দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য যে ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তা প্রচার করতেও সহায়তা করেছে ফেসবুক।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় এরই মধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফেসবুকের মতো একটি বিশ্বমানের সংস্থা যখন বাংলাদেশের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসে, তখন বেশিসংখ্যক মানুষকে নিযুক্ত করা আমাদের জন্য আরও সহজ হবে। বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় ফেসবুক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ব্র্যাকের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।’
ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের পরিচালক সাজেদুল হাসান ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য ফেসবুককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বন্যা-পরবর্তী কার্যক্রম যেমন— কাজের অভাব, বিশুদ্ধ পানির অভাব, মহামারির প্রকোপ ইত্যাদি বন্যা চলাকালীন কার্যক্রমের মতোই চ্যালেঞ্জিং। দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে আমাদের সহায়তা করার জন্য ফেসবুককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
দেশের বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ার পর পরই সরকার এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে ব্র্যাক নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে জরুরি সহায়তা দিতে শুরু করে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্র্যাক সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি শুকনো খাবার ও স্যালাইন বিতরণ করে। এছাড়াও লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ এই সাতটি জেলার ৫০ হাজার পরিবারকে ২ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তাও দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে, বন্যার শুরুর পর থেকেই বিডিআরসিএস ৩৬টি জেলায় এক হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে ৫ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি পরিবারকে পান করার জন্য পানি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রয়োজনীয় সামগ্রী, খাদ্য এবং নগদ অর্থ সহযোগিতা প্রদান করেছে। বিডিআরসিএসের স্বেচ্ছাসেবকরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বন্যার সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েও সাহায্য করেছেন।
দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার (ডিআরএম) পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বন্যায় অনেক মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগের শুরু থেকেই বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে শুধুমাত্র বিভিন্ন সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েই নয় বরং ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। বন্যা পরবর্তী সময়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, স্যানিটেশন ও স্বাস্থবিধি মেনে চলার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেওয়া। ফেসবুকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করতে পেরেছি। এ বছরের বন্যাতে আমাদের কার্যক্রমের রেকর্ড রাখার পাশাপাশি পরবর্তী দুর্যোগেও ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে উপযুক্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যেন আরও ভালো প্রস্তুতি রাখা যায়, সেই প্রত্যাশাই করছি।”
সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেসবুকের ক্রাইসিস রেসপন্স টুলটি দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষকে পুনর্বাসন, খাদ্য, পানি, পরিবহন ও স্বেচ্ছাসেবীমূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত সহযোগিতা পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই বছরের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে সুরক্ষিত এবং সতর্ক রাখতে কোভিড-১৯ ইনফরমেশন সেন্টার এর মতো বিভিন্ন প্রোডাক্ট, টুলস ও ফিচার এনেছে।
ফেসবুকের দক্ষিণ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর অশ্বানী রানা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও পরিবারগুলোর প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল | দুর্যোগের সময় মানুষ তাদের প্রিয়জনদের খোঁজ নিতে ফেসবুক ব্যবহার করেন। অনেকেই দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষদের সাহায্য করতেও ফেসবুক ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের বন্যা কবলিত পরিবারদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের চাহিদাগুলো আরও ভালোভাবে পূরণ করতে ব্র্যাক ও বিডিআরসিএসের মতো সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা বাংলাদেশকে আমাদের সমর্থন জোরদার করতে স্থানীয় অংশীদারদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাব।’