বিজ্ঞাপন

জামায়াতকে নিয়ে নতুন জোট গঠনের ‘স্বপ্ন’ দেখছেন অলি

October 31, 2020 | 6:09 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক মন্ত্রী। কিন্তু এখনকার রাজনীতিতে অনেকটাই ‘অপাঙ্ক্তেয়’ হয়ে পড়েছেন। তবে ‘স্বপ্ন’ দেখা ছাড়েননি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম। তার নতুন এই ‘স্বপ্ন’ একটি জোট গঠনের, যাতে থাকবে জামায়াতে ইসলামীও। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে ‘প্রায়’ বিতাড়িত স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতও অলি আহমেদের সঙ্গে ‘আপাত’ সম্পর্ক রেখে চলছে। তবে কর্নেল অলির নেতৃত্বে আলাদা জোট গঠনের ব্যাপারে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বলেই জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অকার্যকর হয়ে পড়া, জোটে নিজের ‘জোরালো’ অবস্থান না থাকা, আব্দুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিম নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) জোটের শরিক দল হিসেবে বিএনপির স্বীকৃতি, সর্বোপরি ২০ দলীয় জোটকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি যোগদান এবং শরিকদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়া বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেওয়ার পরই আলাদা জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৭ জুন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), খেলাফত মজলিশ ও ন্যাশনাল মুভমেন্ট— এই চারটি দল নিয়ে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন অলি আহমেদ।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থেকেও আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সে সময় অলি আহমেদ বলেছিলেন, ‘বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য নিজ নিজ মঞ্চ থেকে আন্দোলন শুরুর লক্ষ্যেই এ মঞ্চ গঠন করা হয়েছে। বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে এলডিপি বহুবার তার মুক্তির জন্য সভা-সমাবেশ করেছে। আজকে যারা আমার দুই পাশে আছেন, তারা অনেকে আমার সাথে ছিলেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি, চেতনার পক্ষের শক্তি এবং জাতিকে মুক্ত করতে জাতীয় মুক্তি মঞ্চে থাকতে চায়।’

বিজ্ঞাপন

এই জোট গঠনের ৯ মাস পর এ বছর ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। মুক্তির পর পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির শীর্ষ নেতারা নিয়মিত দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন। এমনকি ঈদুল ফিতরের রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তার মুক্তির জন্য যিনি পৃথক ‘মঞ্চ’ গঠন করলেন, সেই অলি আহমদ গত সাত মাসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপির এক সময়ের নীতি-নির্ধারক অলি আহমেদ দেড় দশক আগে দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এলডিপি গঠন, আওয়ামী লীগ জোটে যোগদান এবং পরে মত পরিবর্তন করে বিএনপি জোটে ভিড়লেও তাকে আস্থায় নিতে পারেনি দলটির হাইকমান্ড। তার সব কাজই সন্দেহের চোখে দেখেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সে কারণেই বিএনপির সঙ্গে তার দূরত্ব কখনো ঘোচেনি। তাই গত দেড় বছর ধরে তিনি চেষ্টা করছেন আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়ে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। আর এ লক্ষ্যেই জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠন করেছিলেন অলি।

সূত্রমতে, ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ ঘোষণার সময় বিএনপি জোটের তিনটি শরিক দলের শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন দলের কয়েকজন পরিচিত মুখ দেখা গেলেও এ মঞ্চে অলির প্রত্যাশা ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু আগে-ভাগে বিষয়টি গণমাধ্যমে চলে আসায় কৌশলগত কারণে জামায়াত নেতারা সেদিন মঞ্চে আসেননি। তবে গত দেড় বছরে অলি আহমেদের সব আয়োজনে মধ্যমনি হিসেবে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহামন, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, তাসনীম আহমেদ, মাওলানা আব্দুল হালিমকে দেখা গেছে। আর এই জামায়াত নেতাদের খুশি করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অলি আহমেদকে বলতে শোনা গেছে, ‘জামায়াত এখন দেশপ্রেমিক শক্তি’।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জামায়াতের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন অলি আহমেদ। এক্ষেত্রে জামায়াত যদি পর্দার আড়ালে থেকেও ‘নেপথ্য নায়কের’ কাজ করে, তাতেও আপত্তি নেই অলির। জামায়াতের লোকবল, আর্থিক সহযোগিতা এবং লজিস্টিক সাপোর্ট পেলেই চলবে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রমের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের সঙ্গে নতুন জোট গঠনের খবরটি অসত্য। সুতরাং এই অসত্য বিষয়ের ওপর কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। যে বিষয়ের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সে বিষয় নিয়ে কেন কথা বলতে যাব?’

জানতে চাইলে সম্প্রতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি কথাও এখন বলব না। কিছু বলার থাকলে মিডিয়া ডেকে বলব। সেখানে আপনাকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন