বিজ্ঞাপন

মূল পদ্মাসেতুর ৯০ শতাংশ কাজ শেষ, এগিয়ে চলছে অন্যান্য মেগাপ্রকল্প

November 1, 2020 | 8:29 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধীরে ধীরে করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠছে ফাস্ট ট্রাকভুক্ত বা অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো। এরই মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মাসেতুর মূল কাজের ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে পুরো প্রকল্পটির অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর প্রকল্পটির নদী শাসন কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেইসঙ্গে এগিয়ে চলছে অন্য মেগা প্রকল্পগুলোও। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ,পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ এবং মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফাস্ট ট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বৃহৎ এসব প্রকল্পের অগ্রগতির চিত্র।

বিজ্ঞাপন

ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর একটি বড় আঘাত ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে লেগেছে। একই অবস্থা সারা পৃথিবীর। আমরা চেষ্টা করছি মেগাপ্রকল্পগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করতে। তবে করোনা মহামারির কারণে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এটা মেনে নিতেই হবে। ফলে প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু আগের তুলনায় বর্তমানে বাস্তবায়ন গতি বেড়েছে।’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলা বলেন, ‘লকডাউনের পর এখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নেও গতি আসছে। বিদেশিরাও ফিরে আসতে শুরু করেছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতির চেহারায় অনেক পরিবর্তন আসবে। তবে এখন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে গতি বৃদ্ধি পায়।’

পদ্মাসেতু

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। গত তিন মাসে (জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর) ব্যয় হয়েছে ৩৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু থকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। তিন মাসে খরচ হয়েছে ৭১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যয় ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৩২ হাজার ৪৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতিও একই।

বিজ্ঞাপন

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধাদির উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা। গত তিন মাসে খরচ হয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২ হাজার ৬১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ আর ভৌত অগ্রগতি ৭২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বেশকিছু কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ফলে অর্থ ব্যয় কম। যেসব কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো হলো- ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুনর্বাসন কার্যক্রমের অধীন ১৪টি প্যাকেজের কার্যক্রম, নির্মিতব্য জলযানগুলোর বিভিন্ন ইক্যুইপমেন্ট ও জাহাজের ট্রায়াল ও ডেলিভারি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং বন্দরের ডিটেইল মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

বিজ্ঞাপন

ফাস্ট ট্র্যাক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৪৮৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। গত তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ২৬০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৯ হাজার ৪৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ আর ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

মেট্রোরেল

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এগিয়ে চলছে ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৬ (মেট্রোরেল) এর কাজ। এটি ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্ততবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে পাঁচ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৩৭ কোটি ১১ টাকা, যা এ অর্থবছরের মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১হাজার ৭৩৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। একল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

 

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে তিন হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত তিন মাসে খরচ হয়েছে এক হাজার ১০৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১৪ হাজার ৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি ৩৪ শতাংশ। এ প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ ১ দশমিক এর প্রিপারেটরি ওয়ার্ক ফর পাওয়ার প্ল্যান্ট ও পোর্ট ফ্যাসিলিটিজের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ ১ দশমিক ২ এর পাওয়ারপ্ল্যান্ট ও পোর্ট ফ্যাসিলিটিজের কাজ ৪০ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। পোর্ট, প্ল্যান্ট, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং পরামর্শক সেবা খাতে কাজ শেষ হয়েছে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া পল্লি বিদ্যুতায়নের কাজ শতভাগ শেষ। টাউনশিপের ভূমি উন্নয়ন ২৫ শতাংশ, পূর্ত কাজ (আবাসিক) টাউনশিপ তিন শতাংশ, অনাবাসিক পূর্ত কাজ ১৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। অন্যান্য কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে।

পদ্মাসেতুতে রেলসংযোগ

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত তিন মাসে খরচ হয়েছে ৫৭৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রকল্পটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১৩ হাজার ২৬ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটি একবার সংশোধন করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ঠিকাদারের ডিজাইনি চূড়ান্ত না হওয়া এবং ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অর্থ ব্যয় কম হচ্ছিল। তাই প্রকল্প সংশোধন করা হয়।

দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত তিন মাসে খরচ হয়েছে ১৫৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৪৩ শতাংশ।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন