বিজ্ঞাপন

‘৭৫-এর পর ২১ বছর আর মাঝখানে ৮ বছর সময় নষ্ট হয়েছে’

November 1, 2020 | 3:58 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ৭৫-এর পর থেকে ২১ বছর আর তারপরে মাঝখানে আটটা বছর (২০০১ থেকে ২০০৮)- এই সময়টা নষ্ট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের একটা নীতিমালা হচ্ছে যে, আমরা শুধু রাজধানীভিত্তিক উন্নয়ন করি না। আমাদের উন্নয়নটা হচ্ছে একেবারে গ্রামভিত্তিক। অর্থ্যাৎ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী শহরের সব সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং উন্নয়নটা সব জায়গায় সমানভাবে হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস-২০২০’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুভার্গ্য, ৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আমাদের ছাত্র ও যুবকদেরকে বিভ্রান্তির পথে পাঠিয়েছিল। মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে, অর্থ তুলে দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করবার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। অপরদিকে আমাদের যারা যুব সমাজ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করতো তাদের নির্মমভাবে হত্যা ও গুম করেছে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদেরও তারা হত্যা করেছে এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। যে কারণে ৭৫’র পর থেকে ’৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ কিন্তু এক কদমও এগুতে পারেনি। অথচ আমাদের ভালো সম্ভাবনা ছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি সারাবিশ্বের দিকে তাকাই তাহলে দেখি যে, বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি বেশি তরুণ প্রজন্ম রয়েছে। এবং যারা সত্যিকারভাবে একটু সুযোগ পেলে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারে ও কাজ করতে পারে।’ জাতির পিতা সেইদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের যুবসমাজকে শিক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং শিক্ষা-দীক্ষায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ নিয়ে দেশটা স্বাধীন করেছিলেন এবং দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যে কাজগুলো করেছিলেন, সেটা শেষ করে যেতে পারেননি। যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, ৭৫’র ১৫ আগস্ট যদি বাঙালির জীবনে না আসতো, তাহলে স্বাধীনতার দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে উঠতো। সেভাবেই তিনি কর্মসূচি নিয়েছিলেন এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছিলেন।’ স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি এবং যারা হানাদার বাহিনীর দোসর, তাদের চাটুকার, খোশামোদী-তোশামোদী যারা- তারাই কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যা করে এই অগ্রযাত্রাটা ব্যহত করে বলে আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সবসময় একটাই লক্ষ্য- জাতির পিতার যে আদর্শ, সে আদর্শ নিয়ে আমাদের যুব সমাজকে গড়ে তুলব এবং এটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঘটতে থাকবে। এই বাংলাদেশটা যেন একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে মর্যাদা নিয়ে বিশ্বে এগিয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে আমাদের দেশটা যেন আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মমর্যাদাশীল হয়। কাজেই যুবসমাজকে এই আহ্বান জানাব- এই বয়সটাই হচ্ছে কাজের বয়স, চিন্তার ও মেধা বিকাশের সময়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যারা তরুণ-যুবক আগামীতে তারাই দেশটা পরিচালনা করবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর থেকেই কিন্তু সেই লক্ষ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। জাতির পিতার যে আদর্শ, সেই আদর্শ নিয়েই আমরা আমাদের যুব সমাজকে গড়ে তুলব।’

বিজ্ঞাপন

এ সময় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা দিচ্ছি, রাস্তাঘাট করে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের নৌ-পথ, রেলপথ, বিমান- সব পথগুলোই আমরা উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। তার উদ্দেশ্য একটাই। আমাদের যুব সমাজের মাঝে যে মেধা-মনন আছে, সেটা তারা যেন কাজে লাগাতে পারে। তারা যেন নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নিজেরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। শুধু দুয়েক পাতা পড়েই যেন চাকরির পিছনে ছুটাছুটি না করে। নিজেরা কাজ করে আরও দশজনকে যেন চাকরি দিতে পারে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই কিন্তু আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

এ লক্ষ্যে স্টার্টাপ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সারদের একটা অসুবিধা আছে জানি। যেহেতু এখানে রেজিস্ট্রেশনেও করতে হচ্ছে না বা কোনো সার্টিফিকেটও নেই, সনদ নেই, স্বীকৃতিও নেই। অনেক সময় অনেকে বলে আপনি কী করেন? ফ্রিল্যান্সার বললে অনেকেই বুঝতেই পারে না। ব্যাপারটাকে কেউ হয়তো স্বীকৃতি দেয় না। সেটা নিয়েও আমরা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের আইসিটি মিনিস্ট্রি, যুব মন্ত্রণালয় এবং সকলে মিলে উদ্যোগে নিয়েছে। যারা এ ধরনের ফ্রিল্যান্সিং করবে, তারাও যেন একটা স্বীকৃতি পায়, সনদ পায় বা একটা সার্টিফিকেট তাদের হাতে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমাদের যুব সমাজ অনেক বড়। কাজেই তারা দেশে বসে বিদেশে কাজ করতে পারে। অনেকই কিন্তু অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে এবং সেটা তারা করছে। কিন্তু তার একটা স্বীকৃতি দরকার। কারণ কোনো কাজ করতে গেলে, চাকরি করতে গেলে এমনকি আমার কাছে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে যে, বিয়ের বাজারেও যদি বা বাবা-মা বিয়ে ঠিক করতে যায় তাহলে বলে ছেলে কি করে? ফ্রিল্যান্সার বললে, সেটা আবার কি? এখানে আমি মেয়ে দেবো কেন? সেটাও একটা সমস্যায় পড়তে হয়। আবার কারও হয়তো ছেলেমেয়ে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে গেছে, ভর্তি করবে না ভালো স্কুল। তাদের প্রশ্ন, আপনার সোর্স অব ইনকাম কী? অনেকেই হয়তো মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করছে। কিন্তু তার তেমন কোনো স্বীকৃতি নেই। সেজন্য তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার চিন্তা করছি। যাতে তারা কাজ করতে পারে।’

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আকতার হোসেন, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক আকতারুজ্জামান খান কবির। এছাড়া সফল যুব উদ্যোক্তা হিসেবে দুজন মতবিনিময় করেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন