বিজ্ঞাপন

জেনে নিন ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ কী!

November 2, 2020 | 4:48 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকালীন সময়ে সবচেয়ে দুর্বোধ্য যে শব্দটি আমরা শুনে থাকি তা হলো, ‘ইলেকটোরাল কলেজ’। বারবার শুনি বটে, তবে অনেকেই হয়েতো ভালোভাবে বুঝি না বিষয়টা। তাদের জন্য সারাবাংলার এবারের আয়োজন সহজ ভাষায় ইলেকটোরাল কলেজ।

বিজ্ঞাপন

সাধারণভাবে বললে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে থেকে নির্বাচিত কিছু জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন সাধারণ ভোটাররা। যারা আবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন।

দেশটির সংবিধানের আর্টিকেল-টু, সেকশন ওয়ানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে কতজন করে ইলেক্টর নির্বাচিত হবেন।

১৯৬৪ সালে মার্কিন সংবিধানের ১২তম সংশোধনীর মাধ্যমে এই নিয়ম চালু হয়। এরপর থেকে ৫৩৮ জন নির্বাচিত ইলেকটর তাদের একটি করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।

বিজ্ঞাপন

এখন প্রশ্ন থাকতে পারে, ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা ৫৩৮ কেনো?

এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে মোট ভোটিং মেম্বার রয়েছে ৫৩৮ জন। তাদের মধ্যে ৪৩৫ জন রিপ্রেজেন্টেটিভ, ১০০ জন সিনেটর এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া থেকে নির্বাচিত আর ৩ জন ইলেকটর।

বিজ্ঞাপন

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রার্থীরই প্রধান টার্গেট থাকে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোটের। যা মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের অর্ধেকের বেশি।

দেশটির মোট জনসংখ্যাকে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটার দিয়ে ভাগ করা হয়। এরপর প্রতিটি রাজ্যের মোট ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে সে রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটার নির্ধারিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হওয়ায় জনসংখ্যা কম-বেশি হলে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যাও সেখানে কম-বেশি হয়।

ধরুন কেউ ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটার। সেখানকার ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা ৫৫, যদি তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সেখানে জয়লাভ করে, তাহলে সে ৫৫টি ইলেকটোরাল ভোটই পেয়ে যাবেন। যদি প্রার্থী হেরে যান, তাহলে তিনি কোনো ইলেকটোরাল ভোটই পাবেন না।

এসব কারণে অনেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর লক্ষ্য থাকে টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও নিউ ইয়র্কের মতো রাজ্যে জয়লাভ করা। এই তিনটি রাজ্যেই আছে মোট ৯৬টি ইলেকটোরাল ভোট।

বিজ্ঞাপন

যদি কোনো প্রার্থী নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, মনটানা, ওয়াইয়োমিং, ভারমন্ট, নিউ হ্যাম্পশায়ার, কানেকটিকাট ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে জয় লাভ করেন তাহলেও এই আটটি রাজ্য থেকে তার মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়াবে মাত্র ৩১টি।

এই কারণে কোনো প্রার্থী পপুলার ভোটে জিতলেও ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট না পাওয়ায় পরাজিত হতে পারেন।

তবে ইলেকটোরাল ভোটের সমালোচনাকারীরা বলেন, এই অসম প্রথার কারণে যে সমস্ত রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা বেশি, তারা কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে।

এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯টি রাজ্য অথবা ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া থেকে একটি ভোটও না পেয়ে বাকি যে কোনো ১১টি রাজ্যের পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যগুলোর মধ্যে আছে- ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, টেক্সাস, ফ্লোরিড, পেনিসেলভানিয়া, ইলিনয়িস, ওহাইও, মিশিগান, নিউ জার্সি, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া এবং ভার্জিনিয়া। এ কারণে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলই এই রাজ্যগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

আবার ইলেকটোরাল কলেজের সমর্থকরা দাবি করে থাকেন, এই পদ্ধতি ছোট রাজ্যগুলোর জন্যেও বেশ সুবিধাজনক। যেমন ইলেকটোরাল ভোটের জন্য রোড অ্যাইল্যান্ড, ভারমন্ট ও নিউ হ্যাম্পশায়ার এমন কি ভৌগোলিকভাবে বড় কিন্তু জনসংখ্যায় ছোট রাজ্য আলাস্কা, ওয়াইয়োমিং এবং ডাকোটাকেউ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন প্রার্থীরা।

আবার কয়েকটি রাজ্যে নির্দিষ্ট দলকেই বারবার নির্বাচিত করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই রাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘সেইফ স্টেটস’। ১৯৯৬, ২০০০, ২০০৪ এবং ২০০৮ এই চারটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ডেমোক্রাটরা জয়ের জন্য ওরেগন, মেরিল্যান্ড, মিশিগান ও ম্যাসাচুসেটসে বারবার জয়লাভ করেছিল। যেখানে রিপাবলিকানদের ‘সেইফ স্টেটস’ ছিল মিসিসিপি, আলাবামা, কানসাস ও আইডাহো রাজ্য।

কয়েকটি রাজ্যে আবার এক এক সময় এক এক দলের প্রার্থী জয় লাভ করে থাকে। এই জাতীয় রাজ্যগুলোকে বলে সুইং স্টেটস। গত চারটি নির্বাচনে ওহাইয়ো ও ফ্লোরিডা সুইং স্টেট হিসেবে বিবেচিত ছিল। গত চারটি নির্বাচনের দুটিতে সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ও দুটিতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী জয় লাভ করেন।

তবে চূড়ান্তভাবে জিততে হলে যেহেতু ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোটের দরকার, তাই নির্বাচনে কোনো রাজ্যের গুরুত্বই কম না।

সারাবাংলা/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন