বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলার আবেদন

November 4, 2020 | 7:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে ৯ পুলিশ সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবী। তার অভিযোগ, বিনা অপরাধে তাকে তুলে নিয়ে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানা পুলিশ অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। পরে তদন্তে সেটি মিথ্যা প্রমাণ হলে আদালত তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। পুলিশ যে অস্ত্র তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাকে মামলায় ফাঁসিয়েছিল, সেই অস্ত্রটিকে অবৈধ উল্লেখ করে তিনি মামলার আরজি জমা দিয়েছেন। আদালত আবেদন গ্রহণ করে এ বিষয়ে আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (০৪ নভেম্বর) শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমর কৃষ্ণ চৌধুরী চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে মামলার আরজি জমা দেন।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সমর কৃষ্ণ তাকে তুলে নিয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ৮ পুলিশ সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালতের নির্দেশে ওই মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

৬৫ বছর বয়সী সমর কৃষ্ণ চৌধুরী চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামের মৃত মনোরঞ্জন কৃষ্ণ চৌধুরীর ছেলে।

বিজ্ঞাপন

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- বোয়ালখালী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিমাংশু কুমার দাশ, পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব আলম আখন্দ, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আতিক উল্লাহ, আরিফুর রহমান, আবু বক্কর সিদ্দিকী, রিপন চাকমা ও দেলোয়ার হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন ও শিক্ষানবীশ এসআই মাহবুবুল আলম এবং দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামের সঞ্জয় দাশ ও সজল দাশ গুপ্ত।

অভিযুক্ত নয় পুলিশের সবাই ঘটনার সময় বোয়ালখালী থানায় কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর হিমাংশু, আতিক উল্লাহ, আরিফুরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বাকি পুলিশ সদস্যদের বদলি করা হয়। অভিযুক্ত সঞ্জয় দাশ দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামের অসিত দাশের ছেলে। তিনি লণ্ডনে বসবাস করেন। সজল দাশ গুপ্ত একই গ্রামের মৃত সমর দাশ গুপ্তের ছেলে এবং সঞ্জয়ের বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সজল দাশ গুপ্ত বোয়ালখালী থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

২০১৮ সালের ২৭ মে সন্ধ্যায় আদালত থেকে নামার পথে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার লালদিঘীর পাড় এলাকা থেকে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ সমর কৃষ্ণ চৌধুরীকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে তাকে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গ্রেফতারের কথা জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় জেলার বোয়ালখালী থানা পুলিশ। পকেটে কলম নিয়ে আইনজীবীর বেশে থাকা অস্ত্রসহ সমরের ছবি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে তোলপাড় ওঠে। গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ পরিবেশিত হতে থাকে, টেলিভিশনের টকশোতেও গুরুত্ব পায় ঘটনাটি। এতে চাপের মুখে পড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে তৎকালীন ডিআইজি এস-এম-মনিরুজ্জামানের সঙ্গে ঘটনার নেপথ্য ইন্ধনদাতা লণ্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় দাশের ঘনিষ্ঠতার তথ্য উঠে আসে গণমাধ্যমে। বদলি করা হয় ডিআইজিকে। তদন্তের মাধ্যমে বোয়ালখালী থানার অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত ও বদলি করা হয়। ওই বছরের ১২ জুলাই জামিনে মুক্তি পান সমর কৃষ্ণ চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, লণ্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তার একই গ্রামের মৃত চিত্তরঞ্জন দাশের ছেলে স্বপন দাশের পরিবারের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। সমর কৃষ্ণ শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে তাদের আইনি সহায়তা দিচ্ছিলেন। এতে সঞ্জয় ও সজল বাদি সমরের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেন। ধনাঢ্য সঞ্জয়ের সঙ্গে তৎকালীন ডিআইজি এস-এম-মনিরুজজামানের সান্নিধ্য থাকায় ডিআইজির মাধ্যমে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা বাদির ক্ষতি করেন।

বাদি সমর কৃষ্ণ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৭ মে আমি পেশাগত কাজ সেরে আদালত থেকে নামছিলাম। আমার সঙ্গে তিনজন আইনজীবী ছিলেন। তাদের সামনেই আমাকে জোরপূর্বক সাদা পোশাকে একদল লোক মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তখন আইনজীবীরা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কয়েকজন পুলিশের আইডি কার্ড দেখান। তাদের সঙ্গে লণ্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় দাশ এবং তাদের কেয়ারটেকার সজল দাশ গুপ্ত ঘটনাস্থলে ছিল। তারাই আমাকে দেখিয়ে দেয়। পুলিশ আমাকে নিয়ে বোয়ালখালী থানায় যায়। সেখানে হাজতে রেখে আমাকে নির্যাতন করে। রাতে অস্ত্র উদ্ধারের নামে আমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নদীর ধারে একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে পুলিশ আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু একটি ফোনকল আসায় তারা আবার আমাকে থানায় ফিরিয়ে নেয়। পরদিন আমার হেফাজত থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে আদালতে চালান দেয়।’

বাদির আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমর কৃষ্ণের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা হয়েছিল। দুটি মাদক আইনে এবং একটি অস্ত্র আইনে। তিনটি মামলা তদন্ত করে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। অর্থাৎ ঘটনাগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাহলে এটা প্রমাণ হয়েছে, অস্ত্র মামলা সাজানো এবং অস্ত্রটি অবৈধ। সেটি যদি সমরের না হয়ে থাকে, নিশ্চয় পুলিশের। পুলিশ কিভাবে, কোথা থেকে এই অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সমরকে হয়রানি করল, সেই বিচার চাইবার সাংবিধানিক অধিকার তো তার আছে। আমরা আদালতে সেটি বলেছি। কিন্তু শুনানিতে পিপি সাহেব অস্ত্র আইনে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার বিরোধিতা করেছেন। আমরা আদালতকে বলেছি, পিপি সাহেবও আইন নিয়ে আসুক, আমরাও আসব। তখন আদালত সেটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। যদি আদালতে সেটি নাকচ হয় তাহলে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’

মামলার আরজিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ১৯ (এ), ১৯ (এফ) ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (ডি) ধারায় অভিযোগ এনেছেন বাদি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিসি

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন